উত্তর : ভূমিকা ঃ বিশ্ব জনগণের জীবনমান উন্নত করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সনদ নীতি ও অংশীদারিত্বের উদ্দীপনার পরিচালিত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং বিশ্ব সংহতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কায়রোতে অনুষ্ঠিত বিংশ শতাব্দীর শেষে আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা ও উন্নয়ন সম্মেলনের কিছু মৌলিক নীতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে তার ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এই অঙ্গীকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং এর প্রেক্ষিত সামনে রেখে জাতীয় জনসংখ্যা কার্যক্রমের মৌলিক কর্ম-কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে।
→ বাংলাদেশের জনসংখ্যা নীতির মূল উপাদানসমূহ : আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত নীতিসমূহের প্রেক্ষিতে প্রণীত বাংলাদেশের নতুন জনসংখ্যা নীতির মূল উপাদানগুলো হচ্ছে ঃ
১. মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা অনুসারে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতামত, সামাজিক উৎস, সম্পদ, জন্ম বা অন্যান্য অবস্থা নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সকল অধিকার ও স্বাধীনতা রয়েছে। জীবন, স্বাধীনতা এবং ব্যক্তি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সকলেরই অধিকার রয়েছে (নীতি-১/CPD)।
২. যেহেতু অব্যাহত উন্নয়নের মূল কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষ। যে কোনো জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে জনগণ। প্রতিটি ব্যক্তি যাতে তার সকল গুণাবলীকে কাজে লাগানোর সুযোগ পেতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা। নিজের এবং পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমান তথা পর্যাপ্ত খাবার, পরিধেয়, বাসস্থান, পানি এবং স্বাস্থ্য
সুবিধা লাভের অধিকার রয়েছে প্রতিটি মানুষের (নীতি-২/CPD)।
৩. প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে স্বাস্থ্যকর ও উৎপাদনশীল জীবন। সে জীবনের অধিকার মানুষেরই । বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জনসংখ্যা উন্নয়ন এবং পরিবেশগত চাহিদা সমানভাবে মেটানোর উদ্দেশ্যে উন্নয়নের অধিকারকে পূরণ করতেই হবে(নীতি-৩/CPD)
৪. জনসংখ্যা সম্পর্কিত লক্ষ্য ও নীতিসমূহ সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জনসংখ্যা নীতির মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে সকল মানুষের জীবনমানকে উন্নত করা (নীতি-৫/CPD)
৫. জনসংখ্যা এবং উন্নয়ন সম্পর্কিত কার্যক্রমের অতি প্রয়োজনীয় অংশ হচ্ছে নারী-পুরুষের সাম্য, নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর বিরূদ্ধে সকল হিংসাত্মক আচারণ দূরীকরণ এবং প্রজনন বিষয়ে নারীর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, সার্বজনীন মানবাধিকারের অবিচ্ছিন্ন। সমন্বিত ও অবিভাজ্য অংশ হচ্ছে নারী ও কন্যা শিশুর মানবাধিকার আন্তর্জাতিক জনগোষ্ঠীর
অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক জীবনে নারীর পূর্ণ ও সমান অংশগ্রহণ এবং নারীর প্রতি সকল রকম বৈষম্যমূলক বিলোপ(নীতি-৪/ CPD)
৬. দৈহিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যেই ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের যতদূর সম্ভব উন্নতমানের সুবিধাদি ভোগ করার অধিকার থাকবে। পরিবার পরিকল্পনা ও যৌন স্বাস্থ্য ও প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ সার্বিক স্বাস্থ্য সুবিধার সুযোগ যাতে সার্বজনীন হয়।রাষ্ট্র তা নিশ্চিত করার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। এ ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য থাকা উচিত নয়
(নীতি-৮/CPD)।
৭. প্রজনন স্বাস্থ্য কার্যক্রমে কোনো প্রকার বাধ্যকতা ছাড়া ব্যাপকতম সেবা-সুবিধার ব্যবস্থা রাখা উচিত। সকল দম্পতি ও ব্যক্তির স্বাধীনভাবে ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিজ নিজ সন্তান সংখ্যা নিরূপণ, সন্তান জন্মের ব্যবধানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য শিক্ষা এবং তা অর্জনের উপায় লাভের মৌলিক অধিকার রয়েছে (নীতি- ৮/CPD)
৮. পরিবার হচ্ছে সমাজের একটি মৌলিক ইউনিট তাই পরিবারকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। পরিবারের অধিকার রয়েছে ব্যাপক সুরক্ষা ও সমর্থন লাভের।
৯. যে কোনো দেশের আদিবাসীদের সংখ্যা এবং উন্নয়ন চাহিদার বিষয় বিব
েচনার এনে রাষ্ট্র তাদের আত্মপরিচয় সংস্কৃতি ও অভিলাষকে স্বীকার করে নেবে এবং সে দেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে, বিশেষত স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কল্যাণের ক্ষেত্রে পূর্ণ অংশগ্রহণে সহযোগিতা দেবে ( নীতি-১৪/CPD)।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এবং এর উন্নয়নের জনসংখ্যা নীতির তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।