বাংলাদেশের জনসংখ্যা কী এ দেশের উন্নয়নের পথে একটি বাধা? আলোচনা কর। অথবা, মাত্রারিক্ত জনসংখ্যা এ দেশের উন্নয়নের জন্য একটি বড় সমস্যা? ব্যাখ্যা কর। অথবা, জনসংখ্যা কী দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা? আলোচনা কর যথেচ্ছভাবে উত্তর৷ ভূমিকা : পরিবেশ হলো অনেকগুলো উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত একটি ব্যবস্থা (S1) যার মধ্যেৎঅন্তর্ভুক্ত জনসংখ্যা, অন্যান্য প্রাণী, গাছপালা, অণুজীব, মাটি, পানি, বাতাস, সবকিছু। মানুষ পরিে ব্যবহারের মাধ্যমে বর্তমানে পরিবেশকে এক বিরাট হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। আবার বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বিস্ফোরণ এ প্রক্রিয়াকে আরও বেশি ত্বরান্বিত করেছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। জনসংখ্যার ক্ষাধিক্য এ দেশে ব্যাপক পরিবেশগত ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা কি এ দেশের উন্নয়নের পথে একটা বাধা : উন্নয়নের সাথে জনসংখ্যার পরিমাণের এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যেমন- দেশের সম্পদের তুলনায় যদি জনসংখ্যা কম হয়, তাহলে এতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে ব্যাহত । কেননা, এতে শ্রম শক্তির অভাবহেতু সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার সম্ভব হয় না। অপরপক্ষে, কোনো দেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে তা সে দেশের জন্য দায় বা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, এতে একদিকে যেমনৎমাথাপিছু জমি ও মূলধন হ্রাস পায়, অন্যদিকে শ্রমের অপচয় হয় বা বেকার সমস্যার সৃষ্টি হয়। বস্তুত এমন জনসংখ্যাই কোনো দেশের জন্য আপদ বা দায় হয়ে দেখা দেয়। নিম্নে বাংলাদেশের জনসংখ্যা কিভাবে এ দেশের উন্নয়নের পথে তা আলোচনা করা হলো : আমাদের দেশের বর্তমান জনসংখ্যা সম্পদ না কি আপদ সে সম্পর্কে রায় দিতে হলে আমাদের দেশের জনসংখ্যার কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করতে হবে এবং সে অনুসারেই বলতে হবে যে, আমাদের জনসংখ্যা আমাদের উন্নয়নের সম্পদ না কি বাধা। প্রথমত, বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ১৪ কোটি ৬৯ লক্ষ। বর্তমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মিটাতেই দেশকে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। এর উপর বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৯.৩২। জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার যদি না কমানো যায়, তবে অচিরেই জনসংখ্যা এর দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ফলে দেশের সীমিত সম্পদের উপর জনসংখ্যার চাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়সহ অন্যান্য চাহিদা মিটাতে গিয়ে মূলধন বা পুঁজিগঠন সম্ভব হচ্ছে না । ফলে উন্নয়নমূলক সেক্টরে আশানুরূপ লগ্নি বৃদ্ধি পাচ্ছে না। উন্নয়নমূলক খাতে, মূলধন বিনিয়োগ করতে না পারলে জনসংখ্যার চাহিদাও মেটানো সম্ভব নয়। বস্তুত আমাদের দেশে যেখানে যতটুকু উন্নয়নের ফল অর্জিত হচ্ছে তা ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এক নিমিষেই শেষ করে ফেলেছে। বস্তুত জনসংখ্যার পরিমাণে স্থিতিশীলতা না এলে উন্নয়নের কোনো মাত্রা বুঝা যাবে না । তৃতীয়ত, আমাদের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ। অর্থাৎ, আমাদের নির্ভরশীল জনসংখ্যার পরিমাণ বেশি। এ নির্ভরশীল জনসংখ্যা একটি সীমিত সংখ্যক কর্মক্ষম জনসংখ্যার (৪৫%) উপর নির্ভর করছে। ফলেবর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে এ দেশের উন্নয়নের জন্য বাধা বলেই মনে হতে পারে। চতুর্থত, আমাদের দেশের জনসংখ্যার মাত্র নগণ্য সংখ্যকই দক্ষ জনসংখ্যা। দক্ষ জনসংখ্যা কোনো দেশের উন্নতির জন্য খুবই জরুরি। অদক্ষ জনসংখ্যা আয়ের তুলনায় ভোগই বেশি করে তাই অদক্ষ এ বিরাট জনগোষ্ঠী অবশ্য এ দেশের উন্নয়নের জন্য একটি বাধা। পঞ্চমত, আমাদের দেশের জনসংখ্যার কত অংশের মধ্যে চারিত্রিক দৃঢ়তা বর্তমান সেটাও বিবেচনার বিষয়। কেননা, প্রায়ই পত্র পত্রিকায় দেখা যায় কর্তব্যে অবহেলা, আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি।ষষ্ঠত, আমাদের দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ অংশই উন্নত জীবনের প্রতি আগ্রহী নয়। অধিকাংশ জনগণের মধ্যেই উচ্চাভিলাস নেই । এরা মোটা ভাত ও মোটা কাপড়েই সন্তুষ্ট ফলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাওয়ার জন্য বেশি শ্রম নিয়োগ করতেও চায় না। সপ্তমত, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, আর রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যাই আমাদের বেশি। দেশের জনসংখ্যা সম্পদের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত কয়েক বছরে অনেক লোকই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এতে একটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, জনসংখ্যার সবটাই এ দেশে সম্পদ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন নেই। এজন্য জনশক্তি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে কিছু লোকের ভাগ্যে উন্নতি ঘটেছে বৈকি। আরেকটি প্রমাণ আমাদের দেশে শ্রমিক, মজুরের যোগান কম নয়। অনেকেই কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড় জমাচ্ছে। সবারই এক কথা কাজ চাই। চারদিকে যেন অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয় ও অন্যান্য চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ উৎকণ্ঠাগ্রস্ত। উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, অতিরিক্ত জনসংখ্যা যে কোনো দেশের উন্নতির পথে একটি বড় বাধা। বাংলাদেশের অতিরিক্ত জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই যথেষ্ট হুমকির কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই বর্তমান বাংলাদেশের জনসংখ্যা এ দেশের উন্নয়নের পথে একটি বাধাই বটে।