বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণের উপায়সমূহ লিখ।

অথবা, বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পুরণের পন্থাসমূহ লিখ।
অথবা, আমাদের দেশে জনগণের চাহিদা পুরণের প্রক্রিয়াসমূহ বর্ণনা কর।
অথবা, কী কী উপায়ে জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষকে তার জীবনধারণের জন্য কতকগুলো উপাদানের প্রয়োজন পড়ে। এসব উপাদান কেন্দ্রিক ব্যক্তির এই যে প্রয়োজন এটাই হল ব্যক্তির চাহিদা। ব্যক্তি যদি তার এ চাহিদা স্বাভাবিকভাবে সঠিকপথে পূরণ করতে সক্ষম না হয় তবে সে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয় বা তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে। তবে ব্যক্তির চাহিদা পূরণের পশ্চাতে সমাজে বা রাষ্ট্রে ঐসব উপকরণের পর্যাপ্ততা থাকতে হবে। বাংলাদেশে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ যার মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। অথচ মোট আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিঃমিঃ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যা বাস করে প্রায় ১০১৫ জন। এদেশের জনসাধারণের মৌল মানবিক চাহিদা অপূরণসহ অন্যান্য বহুবিধ সমস্যা বিদ্যমান।
বাংলাদেশের জনগণের বিভিন্ন চাহিদা পুরণের উপায় : এদেশের জনসাধারণের বিভিন্ন চাহিদাসমূহ পূরণের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত কর্মসূচি বা পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে। যথা :
১. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের জনগণের চাহিদাসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা সৃষ্টির জন্য সর্বপ্রথম যে কাজটি করতে হবে তা হল দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসকরণ। এজন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণে জনসাধারণকে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে উৎসাহিত করে তুলতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পথনাট্য, সভা ইত্যাদি আয়োজন করা এবং ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্টিং মিডিয়াকে ব্যবহার করা যেতে পারে।
২. দারিদ্র্য হ্রাসকরণ : দেশে বিরাজমান এ ব্যাপক দারিদ্র্যতা যতটা সম্ভব হ্রাস করতে হবে। এজন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সংগঠিত করে দলগঠন করে দলীয় শক্তিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে তাদের চাহিদা পুরণে কাজে লাগাতে হবে। তাদেরকে নিয়ে সমবায় ভিত্তিতে চাষাবাদ, কিংবা শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে হবে।
৩. সম্পদের সুষম বন্টন : দেশের মোট সম্পদ সকল জনগণের মাঝে সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের উদ্দেশ্য নিতে হবে। এজন্য ধনীদের নিকট থেকে সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স আদায় করতে হবে, চাষের জমিগুলোতে সত্যিকারের কৃষকদের মালিকানা নিশ্চিত করতে হবে। ফলে সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। জনসাধারণ তাদের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হবে।
৪. কৃষির আধুনিকীকরণ : কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ সহজতর করা সম্ভব হবে। সেজন্য কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর চাষাবাদ ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। যন্ত্রচালিত লাঙল,ইঞ্জিনচালিত সেচ, ফসলের রোগবালাই দমন, যন্ত্রের মাধ্যমে ফসল সংগ্রহ ও মাড়াই করতে হবে। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং অপচয় হ্রাস পাবে।
৫. নিরক্ষরতা দূরীকরণ : চাহিদা সম্পর্কে না জানলে চাহিদা পূরণের প্রশ্ন অবান্তর। সেজন্য দেশের জনগণের মধ্য থেকে নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার জন্য অবকাঠামো ও উপকরণগত সুযোগ সুবিধার সম্প্রসারণ ও সহজলভ্য করে তুলতে হবে। ফলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং তারা নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজন মিটাতে উদ্যোগী হবে।
৬. কর্মসংস্থান সৃষ্টি : দেশে বিরাজমান ১-১ কোটি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।এজন্য তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। শুধু তাই নয়, তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান করে খামার আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে। পাশাপাশি বিভিন্ন খামার স্থাপনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশে জনগণের বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে যে অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতাগুলো বিদ্যমান তা একদিনে সৃষ্টি হয় নি। বস্তুত নিজেদের চাহিদা ও প্রয়োজন সম্পর্কে অসচেতনতা, ব্যাপক মাত্রার নিরক্ষরতা বা অজ্ঞতা এবং ধারাবাহিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে আস্তে আস্তে চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে কতকগুলো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতার ধরন এখন এমন রূপ পরিগ্রহ করছে যা সমন্বিত সমাধান পদ্ধতির কার্যকর অনুসরণ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।