অথবা, বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার ধরনগুলোর
সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার ধরনগুলো বিশ্লেষণ কর।
অথবা, বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার ধরনগুলো সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা নির্ধারিত হয়। অতীত সমাজে যেমন নারী-পুরুষের অসমতা ছিল বর্তমান বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায়ও তার চেয়ে বেশি বৈষম্যমূলক অবস্থা বিদ্যমান ।
বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা : নিম্নে সংক্ষেপে বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতার প্রধান নির্ধারকসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. মনস্তাত্ত্বিক কারণ : বাংলদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ের লিঙ্গভিত্তিক অসমতার অন্যতম প্রধান নির্ধারক হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক কারণ। এ দেশের শিক্ষিত, অশিক্ষিত তথা সর্বস্তরের মানুষের ধারণা পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে দৈহিক শক্তি, অর্থ উপার্জন, ক্ষমতা, যোগ্যতা, নেতৃত্ব প্রভৃতি দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান ।
২. অর্থনৈতিক অসমতা : এদেশে অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে গৃহস্থালি পর্যায়ে লিঙ্গভিত্তিক অসমতা লক্ষ্য করা যায়। এ দেশের গ্রামীণ সমাজে দেখা যায় একজন পুরুষ শ্রমিক সারাদিন শ্রমের বিনিময়ে সে ১০০ টাকা পায় অথচ ঐ একই কাজের বিনিময়ে একজন নারী বা মহিলা শ্রমিক ৫০-৬০ টাকা পায়। এ থেকে অর্থনৈতিক অসমতা ফুটে উঠে।
৩. সামাজিক বৈষম্য : বাংলাদেশে গৃহস্থালি পর্যায়ে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায়ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এ দেশে কোন শিশু জন্মগ্রহণ করলে জ্ঞাতিগোষ্ঠী ও আত্মীয়স্বজন একে অপরে বলাবলি করে ছেলেটি স্মার্ট হবে তো? ছেলেটি শক্ত ও বলিষ্ঠ দেহের অধিকরী হবে তো? মেয়েটি বিনয়ী হবে তো? কমনীয় হবে তো? এভাবে বৈষম্য সৃষ্টি হয়।
৪. পুরুষ অধিক মর্যাদার অধিকারী : এ দেশের অধিকাংশ সমাজ আশা করে যে, পাত্রীর বয়সের চেয়ে পাত্রের বয়স একটু বেশি হোক। অন্যদিকে, পাত্রীর চেয়ে পাত্র বেশি ডিগ্রিধারী হোক অর্থাৎ পাত্রীর চেয়ে পাত্র বেশি জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান হোক এটাও সামাজিক কাম্য।
৫. নারীর মর্যাদা কম : যেসব মহিলা ঘরের বাইরে চাকরি করেন তাদেরকে ঘরে ফিরেও সংসারের অনেক কাজই করতে হয়। বাইরে থেকে কাজ শেষে ফিরে পরিশ্রান্ত স্বামী আশা করে তাকে স্ত্রী পরিবেশন করে খাওয়াক। এভাবে নারীর মর্যাদা কমে থাকে এবং লিঙ্গভিত্তিক অসমতা তৈরি হয়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্যকেই সাধারণ লিঙ্গভিত্তিক অসমতা বলে। বাংলাদেশের গৃহস্থালি পর্যায়ে চরমভাবে এ লিঙ্গভিত্তিক অসমতা লক্ষ্য করা যায় ।