অথবা, বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে উল্লেখ কর।
অথবা, বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দেশের সমগ্র অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিখাতের অবস্থান, কৃষিতে উৎপাদনের একক বা তার প্রকৃতি, চাষির উৎপাদনের উদ্দেশ্য, ব্যবহৃত উপকরণ সমন্বয়, কৃষিখাতের অধীনে বিভিন্ন উপখাত ও তাদের আপেক্ষিক গুরুত্ব, ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ইত্যাদির সম্মিলনে কৃষিখাতের যে অবয়ব সৃষ্টি হয় তাকে কৃষি কাঠামো বলে ।
বাংলাদেশের কৃষি কাঠামো : বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোকে এখনো সার্বিকভাবে সনাতন কৃষি বলা হয়। এখানে ব্যবসায় হিসেবে মুনাফার উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কৃষিকে এখনো গ্রহণ করা হয় নি। সাম্প্রতিক কিছু বাণিজ্যিক খামারের সূচনা হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশে কৃষি কাঠামো বিরাজ করছে। নিম্নে বাংলাদেশের কৃষি কাঠামোর বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা করা হলো :
১. অর্থনীতির মধ্যে কৃষির অবস্থান : খাত হিসেবে কৃষি হচ্ছে বৃহত্তম কর্মসংস্থানের উৎস। কৃষির সুস্থতার উপর সমগ্র অর্থনীতির সুস্থতা নির্ভর করে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষি উৎপাদন বিপর্যস্ত হলে দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার লক্ষণীয়ভাবে হ্রাস পায়। আবার বাম্পার ফসল হলে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে যায় ।
২. পরিবারভিত্তিক উৎপাদনের একক : বাংলাদেশের কৃষি সাধারণত পরিবারভিত্তিক। কৃষক তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কৃষিকাজ সম্পাদন করে। কৃষক তার নিজস্ব বা বর্গার মাধ্যমে প্রাপ্ত জমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চাষ করে। তার উদ্দেশ্য মুনাফা নয়। বরং তার উদ্দেশ্য পরিবারের প্রয়োজন মিটানো।
৩. কৃষকের উদ্দেশ্য মুনাফার খোরাকি : বাংলাদেশের কৃষক প্রধানত নিজের পরিবারের খোরাকির উদ্দেশ্যে কৃষিকাজ করে থাকে । খোরাকির মুনাফা কৃষির প্রধান উদ্দেশ্য নয়।
৪. উপকরণের নিয়োগ প্রান্তিক উৎপাদনভিত্তিক নয় : বাংলাদেশের কৃষিতে প্রান্তিক উৎপাদনশীলতার ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় শ্রমিক, জমি ইত্যাদি উপকরণ নিয়োগ করা হয় না। পরিবারের সদস্যরা কাজ ভাগ করে নেয়। অনুরূপভাবে পরিবারের আয়ত্তে যে জমি আছে তাই ব্যবহার করা হয়।
৫. অর্থনীতিতে কৃষির অপূর্ণ আত্তীকরণ : বাংলাদেশে এখনো সমগ্র অর্থনীতির মধ্যে কৃষি পূর্ণমাত্রায় আত্তীকৃত হয় নি। দেশের ব্যাংক, বীমা, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা যেভাবে অন্যান্য খাতের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেভাবে কৃষির সাথে জড়িত নয় । কৃষক তার পারিবারিক প্রয়োজনে পরিবারভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় কৃষিকাজ সম্পাদন করে বিধায় কৃষি এখন সমগ্র অর্থনীতির মধ্যে আত্তীকৃত হতে পারে। অর
৬. কৃষির উৎপন্ন দ্রব্যের ধরন : বাংলাদেশের কৃষিতে উৎপাদিত ফসল প্রধানত দু’প্রকার। যথা ; ক. খাদ্যশস্য, খ. বাণিজ্যিক বা অর্থকরী ফসল। খাদ্যশস্যের মধ্যে আছে ধান, গম, ডাল, তৈলবীজ, আলু, ফলমূল, সবজি ইত্যাদি পক্ষান্তরে, অর্থকরী ফসলের মধ্যে আছে পাট, চা, ইক্ষু, তামাক, তুলা, রেশম, রাবার ইত্যাদি। এছাড়া কৃষকরা নিজ বসতবাড়িতে গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন করে।
৭. চাষ পদ্ধতি : বাংলাদেশের কৃষিতে বিভিন্ন চাষ পদ্ধতি প্রচলিত আছে। প্রথমত, মালিক-চাষি পদ্ধতির অধীনে ভূমির মালিক নিজেই চাষি। বাংলাদেশে চাষযোগ্য ভূমির প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এ পদ্ধতিতে চাষ করা হয়। দ্বিতীয়ত, বর্গাচাষ পদ্ধতির অধীনে জমির মালিক বর্গাচাষিকে নির্দিষ্ট শর্তে জমি চাষ করতে দেন। তৃতীয়ত, পূর্বনির্ধারিত খাজনা পদ্ধতির অধীনে বর্গাচাষি পূর্বনির্ধারিত শর্তে জমি চাষ করতে দেন। চতুর্থত, পূর্বনির্ধারিত খাজনা পদ্ধতির অধীনে বর্গাচাষি পূর্ব নির্ধারিত অর্থ বা ফসলের পরিমাণ জমির মালিককে দিতে বাধ্য থাকেন। এক
্ষেত্রে জমির মালিকের প্রাপ্য খাজনা উৎপাদনের উপর নির্ভর করে না। পঞ্চমত, ভূমি বন্ধক পদ্ধতির অধীনে দরিদ্র জমির মালিকরা জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেন এবং ঋণ পরিশোধের ভাগ পর্যন্ত ঋণদাতা জমি ভোগ দখল করতে থাকেন।
উপসংহার : উপরে বর্ণিত বাংলাদেশের কৃষি কাঠামো থেকে এটি স্পষ্ট হলো যে, বাংলাদেশে এখনো সনাতন কৃষি কাঠামো বিরাজমান রয়েছে। কৃষি এখনো সমগ্র অর্থনীতির মধ্যে পূর্ণমাত্রায় আত্তীকৃত হয় নি। খোরাকি।অন্বেষী চাষি প্রধানত নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটানোর জন্য কৃষিকাজ করে বলে বাংলাদেশের কৃষিকে Peasant agriculture বলা হয়।