অথবা, বহুদলীয় ব্যবস্থার সুফল আলোচনা কর।
অথবা, বহুদলীয় ব্যবহার গুণাবলি আলোচনা কর।
অথবা, বহুদলীয় ব্যবহার ইতিবাচক দিকসমূহ আলোচনা কর ।
উত্তর: ভূমিকা : দেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল থাকলে তাকে বহুদলীয় ব্যবস্থা বলে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় দুটির বেশি সংগঠিত দল থাকলে তাকে বহুদলীয় ব্যবস্থা বলে। দেশে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকলে শাসন কাে
গতিশীলতা বৃদ্ধি পায় নাগরিক অধিকার রক্ষিত হয়। শাসকের স্বৈরাচারী মনোভাব দূর হয়।
বহুদলীয় ব্যবস্থার সুবিধা বা গুণসমূহ : একদলীয় ও দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থার ন্যায় বহুদলীয় ব্যবস্থারও বেশকিছু গুণাবলি রয়েছে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো :
১. জনমতের যথাযথ প্রকাশ: বহুদলীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। দেশে একটি বা দু’টি রাজনৈতিক দল থাকলে সমাজের বিভিন্ন মতাদর্শের সুষ্ঠু প্রতিফলন ঘটে না। কিন্তু বহুদলীয় ব্যবস্থায় এ আশঙ্কা থাকে না। কারণ এ ব্যবস্থার জনমতের সকল ধারা ও উপধারা যথাযথভাবে প্রকাশিত হয়। বহুদল ব্যবস্থায় চিন্তাভাবনার পর যে কোন দলের আদর্শের প্রতি সমর্থন আপন করতে পারা যায়। নরকারবশত পরবর্তীকালে অন্য দলকে সমর্থন করা যায়। তাতে জনমত সঠিকরূপে বিকশিত ও প্রতিফলিত হয়।
২. শাসনকার্যের সুবিধা: বহুনল থাকলে শাসন পরিচালনার সুবিধা হয় এবং উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। একে অপরের সমালোচনা করে সঠিক পথে পরিচালনায় বহুদলীয় পদ্ধতি বিশেষ উপযোগী। প্রয়োজন হলে কয়েকটি দল মিলিত হয়ে সরকার গঠনে সমস্যার আশু সমাধান করতে পারে।
৩. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার: সমাজের সমস্যাদি সম্পর্কে বহুদলের বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনা ও মতামতের ফলে জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। অনেকগুলো দল দেশের বিভিন্ন সমস্যাদি সম্পর্কে নানা দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোচনা করে। প্রতিটি দল তার নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচি অনুসারে সমস্যাদির সমাধানকল্পে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রচার করে। ফলে জনগণের বিচারবুদ্ধি বিকশিত হয়।
৪. স্বৈরাচারের আশঙ্কা কম: কোন দলই এককভাবে স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না। ফলে জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের স্বৈরাচারের আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকে। এভাবে বহুদলীয় ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচার রোধ করা যায়। ফলে নাগরিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের স্বরুপ বলার থাকে।
৫. সংখ্যালঘুর সুবিধা: একটি দেশে ধর্ম, বর্ণ ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন প্রকার সম্প্রদায় দেখা যায়। বহুদলীয় প্রক্রিয়ায় এসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষিত হয়। কারণ দলগুলোও বিভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণের নিমিত্তে গঠিত হয়।
ড. কায়েমি স্বার্থ থাকে না: বহুদলীয় ব্যবস্থায় একদলীয় ব্যবস্থার মতো কায়েমি স্বার্থের সৃষ্টি হয় না। কারণ এ ব্যবস্থায় কোন রাজনৈতিক দল এককভাবে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে বা কর্তৃত্ব করতে পারে না। তাই কোন দলের পক্ষে সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ বা কায়েমি স্বার্থের অনুকূলে বিশেষ সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না।
৭. ঐক্যবোধ সৃষ্টি: বহুদলীয় ব্যবস্থায় বৃহৎ ও ক্ষুদ্র পলসহ সকল রাজনৈতিক দলগুলো বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে নিজ নিজ মতাদর্শ অনুযায়ী নীতিনির্ধারণ ও কর্মসূচি প্রণয়ন করে। এতে অভিন্ন জাতীয় স্বার্থের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যেমন সহজতর হয়, তেমনি দেশের জনসাধারণের মধ্যে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হয়।
৮. প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বাধীনতা: বহুদলীয় ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে নাগরিকগণ। পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। নির্বাচকদের পছল এখানে সীমাবদ্ধ নয়। র্যামসে মুর (Ramsay Muir) এর মতানুসারে, “দু’টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নাগরিকদের পছন্দকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়।”
৯. যোগ্য ব্যক্তির মূল্যায়ন: এরূপ ব্যবস্থায় বহুবিধ দলের অস্তিত্ব থাকে, বিধায় যারা সৎ, দক্ষ ও যোগ্য কিন্তু সামর্থ্যের অভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে না তাদেরকে যাবতীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদর্শনের মাধ্যমে দেশের সেবায় নিয়োজিত করতে পারে। ফলে দেশের যোগ্য ব্যক্তির মূল্যায়ন সম্ভব হয়।
১০. স্বার্থের সমষ্টিকরণ : প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বহুবিধ শ্রেণি ও গোষ্ঠীর অস্তিত্ব দেখা যায়। আইনসভাতে এসব গোষ্ঠী বা শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি বহুবিধ স্বার্থের যেমন প্রকাশ ঘটায়, তেমনি ঐসব দলের মধ্যে এ সমন্বয়সাধনও সম্ভব হয়।
উপসংহার: উপযুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি যে, রাজনৈতিক ব্যবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন চাইলে দরকার বহুদলীয় ব্যবস্থা। আর বহুদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বা সব শ্রেণির লোকের উপস্থিতি বর্তমান বহুদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে ঐক্যবোধ সৃষ্টি, শাসনকার্যের সুবিধা ও রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিবেচনা করলে বহুদলীয় ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম।