অথবা, বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ কর।
অথবা, বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বের ত্রুটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:ভূমিকা: কটনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি উপকরণের মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ঠিকই কিন্তু এটি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়। এটির কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো-
১. অবান্তর ধারণা: কতগুলো কাল্পনিক ও অবাস্তব অনুমিতির উপর বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে। এই তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে উপকরণ ও পণ্যের বাজারে পূর্ণপ্রতিযোগিতা ও পূর্ণ নিয়োগ অবস্থা বিদ্যমান, কিন্তু বাস্তবে এটি সঠিক নয়। কেননা পৃথিবীর কোথাও পূর্ণপ্রতিযোগিতা ও পূর্ণনিয়োগ অবস্থা বিরাজ করে না।
২. স্থির অনুপাত: বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে উপকরণ একই হারে নিয়োগ করতে হয়। যেমন-মোটর গাড়ি চালানোর জন্য একজন চালক প্রয়োজন। এ গাড়ী চালকের সংখ্যা পৃথকভাবে বাড়ানো বা কমানো যায় না। ফলে মোটর চালকের প্রান্তিক উৎপাদন দক্ষতা নির্ধারণ সম্ভব নয়।
৩. উপকরণের গতিশীলতাঃ এই তত্ত্বে অনুমান করা হয় যে উপকরণের পূর্ণ গতিশীলতা আছে। কিন্তু বাস্তবে উপকরণের গতিশীলতার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আছে। ফলে এই তত্ত্বে উপকরণের দাম এবং নিয়োগ নির্ধারণের ব্যাপারে খুব একটা উপযোগী নয় বলা যায়।
৪. যুক্ত প্রচেষ্টা: অধ্যাপক টাউসিগের মতে প্রত্যেক দ্রব্যের উৎপাদন বিভিন্ন উপকরণের যুক্ত প্রচেষ্টার ফল। কেননা এককভাবে কোনো উপকরণের দ্বারা কোন কিছু উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই কোনো দ্রব্য উৎপাদনের জন্য পৃথক পৃথক কোনো উপকরণের অংশ ব্যবহার করা যায় না।
৫. যোগান উপেক্ষিতঃ বণ্টন তত্ত্বে শুধুমাত্র চাহিদার দিক বিবেচনা করা হয়েছে। যোগান একেবারই উপেক্ষিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো উপকরণের মূল্য চাহিদা ও যোগানের যুক্ত প্রভাব দ্বারা নির্ধারিত হয়। তাই এই তত্ত্বটি অসম্পূর্ণ তত্ত্ব বলা হয়।
৬. বাহ্যিক হস্তক্ষেপঃ এই তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে কোনো রূপ বাহ্যিক হস্তক্ষেপ নেই। বাস্তবে শ্রম বাজারে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে সরকারি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। সরকারের শ্রম আইন, ন্যূনতম মজুরি আইন ইত্যাদি এর উদাহরণ।
৭. উপকরণের সমজাতীয়তাঃ এই তত্ত্বে উপকরণের বিশেষত শ্রমের সমজাতীয়তা বিবেচনা করা হয়েছে। বাস্তবে শ্রমের প্রতিটি একক সমানভাবে দক্ষ নাও হতে পারে।
৮. অপূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রেঃ এই তত্ত্বে বলা হয়েছে পূর্ণপ্রতিযোগিতা বিদ্যমান। বাস্তবে পূর্ণপ্রতিযোগিতা কোথাও নেই, তবে সব ক্ষেত্রেই অপূর্ণ প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। ফলে উপকরণের দাম তার প্রান্তিক উৎপাদনের সমান হয় না। বস্তুত অপূর্ণ প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বণ্টনের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বটি কার্যকর নয়।
৯. উৎপাদনে বিশৃঙ্খসা: উপকরণের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে শ্রমের প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা দ্বারা। যেটি ঠিক নয়। কারণ কোনো উপকরণের পরিমাণ এক একক বাড়ালে বা কমালে সব উৎপাদন ব্যবস্থা হতে পারে। ফলে মোট উৎপাদন যে হারে বাড়বে তা সে হারে কমতে পারে না। এক্ষেত্রে বেশি বা কম হতে পারে। তাই এ তত্ত্ব দ্বারা উপকরণের পারিশ্রমিক নির্ধারণ সঠিক নয়।
১০. দক্ষতার তারতম্যঃ এই তত্ত্বে ধরে নেয়া হয়েছে সব উপাদান সমানভাবে দক্ষতাসম্পন্ন’। কিন্তু বাস্তবে এটি ঠিক নয়। কেননা সব শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা এক নয়। সুতরাং, সব শ্রমিকের মজুরিও সমান হতে পারে না।
উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে, পুরুষ ও মহিলা শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা এক নয়। আবার শ্রমিকের মজুরি, তাদের সামাজিক অবস্থান, দরকাষাকষির ক্ষমতা, সামাজিক রীতি-নীতি ইত্যাদি দ্বারাও অনেকটা প্রভাবিত হতে পারে। এসব বিষয় প্রান্তিক উৎপাদনশীলতা তত্ত্বে মজুরি নির্ধারণের সময় অবজ্ঞা করা হয়েছে।