Download Our App

বঙ্গভঙ্গের কারণসমূহ ব্যাখ্যা কর।

অথবা, বঙ্গভঙ্গের কারণ কী?
অথবা, লর্ড কার্জনের আমলে কেন বাংলা প্রদেশকে বিভক্ত করা হয়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
১৮৫৭ সালের সিপাহিবিদ্রোহের পর ভারত শাসনের দায়িত্ব মহারানি নিজ হাতে গ্রহণ করেন। ফলে ক্রমান্বয়ে রানির রাজপ্রতিনিধি হিসেবে লর্ড এলগিনের পর লর্ড কার্জন ভাইসরয় নিযুক্ত হন। লর্ড কার্জনের সময় বিশাল আয়তনবিশিষ্ট বাংলা প্রেসিডেন্সি একজন ছোটলাটের দ্বারা শাসন করা ছিল কষ্টকর ব্যাপার। তাই প্রশাসনিক সুবিধার অজুহাত দেখিয়ে লর্ড কার্জন বাংলা প্রেসিডেন্সি বিভক্ত করেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও আসামকে নিয়ে পূর্ব বাংলা ও আসাম নামে একটি প্রদেশের সৃষ্টি করা হয়; যার রাজধানী করা হয় ঢাকা। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উড়িষ্যাকে নিয়ে গঠিত হয় বাংলা প্রদেশ; যার রাজধানী করা হয় কলকাতা। আর এটাই ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত। বিভিন্ন কারণে যেমন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় আবার বিভিন্ন কারণে তা রদ করা হয়। আর এর ফলাফলও ছিল সুদূরপ্রসারী।
বঙ্গভঙ্গের কারণ : বঙ্গভঙ্গের পশ্চাতে বহুবিধ কারণ নিহিত। নিচে বঙ্গভঙ্গের পিছনে যেসব কারণ বিদ্যমান তা আলোচনা করা হলো :
১. ভৌগোলিক কারণ : তদানীন্তন ভারতে বাংলা ছিল সর্ববৃহৎ প্রদেশ। বাংলা প্রদেশের আয়তন ছিল ১ লক্ষ ৮৯ হাজার বর্গমাইল আর জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ (আদমশুমারি ১৯০১ অনুসারে)। এ বিশাল আয়তনের প্রদেশকে কেন্দ্র থেকে শাসন করা খুবই অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে। মূলত এ বিশাল আয়তনের প্রদেশের সুশাসন নিশ্চিত করা ভৌগোলিক দিক দিয়ে একজন প্রশাসকের পক্ষে খুবই দুষ্কর হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ভৌগোলিক কারণে বঙ্গভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
২. প্রশাসনিক কারণ : বঙ্গভঙ্গের পশ্চাতে প্রশাসনিক কারণসমূহ নিম্নরূপ :
ক. একজন গভর্নরের পক্ষে বিশালায়তনের বাংলা প্রেসিডেন্সির শাসনকার্য পরিচালনা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। বড়লাট লর্ড কার্জনও উপলব্ধি করেন যে, পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি প্রদেশ গঠিত হলে প্রশাসনিক সমস্যা দূর হবে এবং এ অনুন্নত অঞ্চলের জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নতির পথ সুগম হবে। সুতরাং লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অসুবিধা দূরীকরণের লক্ষ্যে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
খ. অন্যদিকে, প্রতিবেশী আসাম ছিল আয়তনে অত্যন্ত ক্ষুদ্র। ফলে এর শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত অপ্রতুল। সে কারণে লর্ড কার্জন এ প্রদেশের সীমানা ও প্রশাসনিক সমস্যার কথা ভারত সচিবকে জানান। পরবর্তীতে
বাংলাকে বিভক্ত করে ঢাকাকে রাজধানী করে ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামসহ আসামকে নিয়ে পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশ গঠন করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতে বঙ্গপ্রদেশ বিভক্তি ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশ ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ভিত্তি হিসেবে বঙ্গপ্রদেশ পরিগণিত হয়। কাজেই ব্রিটিশ সরকার রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বঙ্গপ্রদেশ বিভক্ত করে।