বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের বিবরণ দাও।

অথবা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নেতৃত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
যখন কোনো দেশ একটি সংকটকালীন অবস্থায় উপনীত হয় তখন সেই সংকট নিরসনে আবির্ভূত হয় সম্মোহনী নেতৃত্বের। বাঙালি জাতির উপর যখন পাকিস্তানি গোষ্ঠী শোষণ ও নির্যাতনের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়াতে থাকে তখনি বাঙালিদের মধ্যে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবির্ভাব ঘটে।
ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের বিবরণ : নিচে ক্যারিসম্যাটিক নেতৃত্বের ভূমিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অবদান রেখেছেন তা নিচে উপস্থাপন করা হলো :
১. একাত্মতা সৃষ্টি : পাকিস্তান শাসনামলে এদেশের কতিপয় সংকটের দরুন একাত্মতা সৃষ্টিতে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ক্যারিসম্যাটিক নেতা হিসেবে সে সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে একত্রিত করে জনগণকে একাত্মতার পতাকাতলে সমবেত করেন।
২. আপসহীন নেতৃত্ব : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, বঞ্চিত জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আপসহীনভাবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অদমনীয় কর্মস্পৃহা, অপূর্ব বাচনভঙ্গি, সর্বোপরি তাঁর আকর্ষণীয় চারিত্রিক মাধুর্য তাঁকে ক্যারিসম্যাটিক, নেতৃত্বের অধিকারী করে তুলেছিল।
৩. জাতীয় নেতায় পরিণত হওয়া : ১৯৬৬ সালের ছয়দফা দাবি ছিল বাঙালির মুক্তির সনদ। এ সনদ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতি-ধর্ম- বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে ছয়দফার সপক্ষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। যা তাঁকে জাতীয় নেতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে।
৪. একচ্ছত্র নেতৃত্ব লাভ : ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল মূলত পাকিস্তান ভাঙনের সংকেত স্বরূপ। এ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি পরম আস্থা প্রকাশ করে। যা তাঁকে একচ্ছত্র নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত করে।
৫. স্বাধীনতা উত্তরকাল : ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং অল্পদিনের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার, অস্ত্র উদ্ধার, সংবিধান প্রণয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সম্মোহনী নেতৃত্বের প্রমাণ দিয়েছিলেন।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ন্যায় সম্মোহনী শক্তিসম্পন্ন মহান নেতার আবির্ভাব যদি বাংলার মাটিতে না ঘটত তবে দেশ স্বাধীন হতো কি না বলা যায় না। তিনি ছিলেন বাঙালির নয়নের মণি, পরম শ্রদ্ধার পাত্র, জাতির দিশারি ও অবিসংবাদিত নেতা। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সম্মোহনী নেতৃত্ব ছিল সুদূরপ্রসারী।