বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপগুলো আলোচনা কর।

অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?
উত্তর৷ ভূমিকা :
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সরকার নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তিনি অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি সাধন করেন। নিচে প্রশ্নালোকে বিস্তারিত আলোকপাত করা হলো :
সড়ক ও রেল যোগাযোগে নেওয়া পদক্ষেপ : ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। পাকিস্তানি সেনারা যেমন যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে তেমনি মুক্তিযোদ্ধারাও পাকিস্তান বাহিনীর প্রতিবন্ধকতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন করে। ফলে সমগ্র দেশ যোগাযোগ ক্ষেত্রে বিধ্বস্ত অবস্থায় পতিত হয়। বঙ্গবন্ধু সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৭৪ সালের মধ্যে বিধ্বস্তপ্রায় সকল পুল ও সেতু পুনর্নির্মাণ করেন। এর সাথে আরো ৯৭টি নতুন সড়ক সেতু নির্মাণ করেন। ঢাকা-আরিচা রুটের বড় বড় সড়ক সেতু তাঁর আমলে নির্মিত হয়। এছাড়া সে সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত রেল সেতুগুলো পুনঃসংস্কার করা হয়। তাঁর উদ্যোগে গঠিত কমিশন ১৯৭৪ সালে ৪ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রাথমিক সম্ভাব্যতা রিপোর্ট প্রণয়ন করে।
সমুদ্র ও নৌপরিবহণ উন্নয়ন : মাইন পুতে রাখায় চট্টগ্রাম বন্দর প্রথম দিকে অচল হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু সরকার বন্দর সচল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর নির্দেশে শিপিং করপোরেশন গঠিত হয়। এ শিপিং করপোরেশন ১৯৭৪ সালের মধ্যেই কোস্টারসহ ১৪টি সমুদ্রগামী জাহাজ সংগ্রহ করে।
বিমান যোগাযোগের উন্নয়ন : যুদ্ধের সময় দেশের অনেক বিমানবন্দর অচল হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর সময় ১৯৭২ সালে ৭ মার্চের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-যশোর ও ঢাকা-কুমিল্লা রুটে বিমান চালুর ব্যবস্থা করা হয়। তাঁর শাসনামলে কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ শুরু হয়। এছাড়া ১৯৭৩ সালের ১৮ জুন ঢাকা-লন্ডন রুটে বিমানের প্রথম ফ্লাইট চালু হয়।
বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন : মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সমগ্র দেশে বিদ্যুৎ সাবস্টেশনগুলো ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধের সময় বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুতের কোনো সরঞ্জাম মজুত না থাকায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় তিনি ৫,০০০ বিদ্যুৎ পোল আমদানি করেন এবং ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ১,৫০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করেন। জানুয়ারি, ১৯৭২ সালে ২০০ মেগাওয়াট থেকে ডিসেম্বরে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তাঁর নির্দেশে পল্লি বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ হয়। এভাবে তিনি বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের চেষ্টা করেন।
টেলিযোগাযোগের উন্নয়ন : ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে সরকার ক্ষমতায় এসে ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ৫৫,০০০ টেলিফোন চালুর ব্যবস্থা করেন। টেলিযোগাযোগের সুবিধার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পার্বত্য জেলার ভূউপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ সমাপ্ত করেন। এভাবে তিনি টেলিযোগাযোগে উন্নতি সাধন করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করেন। যুদ্ধের সময় দেশের অবকাঠামোয় অনেক ক্ষতি হয় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার এ বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন।