অথবা, অপারেশন বিগবার্ড সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি । পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার ও দাবি প্রতিষ্ঠায় এ অকুতোভয় নির্ভিক মানুষটি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে দমন করার জন্য বহুবার কারাগারে বন্দি রেখেছেন। কিন্তু কোনো গ্রেপ্তার ও দমন বঙ্গবন্ধুকে পরাজিত করতে পারেনি। অসীম সাহসিকতায় পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব প্রদান করে গেছেন সারাজীবন।
বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া : পাকিস্তানি সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনকে স্তিমিত করতে ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ বাঙালির উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে এবং আন্দোলন ও প্রতিরোধকে নেতৃত্ব শূন্য করতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায়। নিচে বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলো :
বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার প্রক্রিয়া : বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের জন্য ২৫ মার্চ পরিচালিত সামরিক অভিযানের নাম ছিল বিগবার্ড। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গণহত্যার ও নির্যাতনের নীলনকশা প্রণয়ন করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের ৪-৫ দিন আগেই কিভাবে কখন কার নেতৃত্বে গ্রেফতার করা হবে তা সুনির্দিষ্ট করা হয়। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের জন্য কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থার্ড কমান্ডো ব্রিগেডের প্রধান ব্রিগেডিয়ার (অব) জহির আলম খানের উপর। ২৩ মার্চ তিনি চীফ অব স্টাফ অফিসে এসে জানতে পারেন যে, ২৪ অথবা ২৫ মার্চ
তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করতে হবে। সে রাতেই তিনি কতিপয় সামরিক অফিসার নিয়ে ধানমন্ডি যান এবং পরের দিন সকালে অবস্থান জানার জন্য আবার ধানমন্ডি যান। ২৫ মার্চ সকালে ব্রিগেডিয়ার জহির, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সাথে দেখা করে নিশ্চিত হন যে ২৫ মার্চ রাতেই তাকে গ্রেফতার করতে হবে। রাও ফরমান আলী তাকে পরামর্শ দেন যে, বেসামরিক গাড়িতে শুধু একজন অফিসার নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করতে হবে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। এজন্য পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর তিনটি ট্রাকে ১ প্লাটুন সৈন্য এবং বঙ্গবন্ধুর বাড়ির নকশা নিয়ে অভিযান শুরু করেন। ২৫ মার্চ রাত ১১ টায় ব্রিগেডিয়ার জহির তিনটি ট্রাকসহ জীপ নিয়ে ধানমন্ডির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু ও তার বাড়ির প্রতিবেশীদের কারও বাড়িতে তখন বিদ্যুৎ ছিল না। বাড়িতে প্রবেশ করে তারা ব্রাশফায়ারের সাথে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায়। গ্রেনেডের শব্দ ও গুলির আওয়াজ ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিৎকার করে বলেন, তাকে না মারার প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি বেরিয়ে আসবেন। সেনা সদস্যরা নিশ্চয়তা দিলে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং তাকে গ্রেফতার করে। তিনটি ট্রাকের মাঝেরটায় বঙ্গবন্ধুকে বসিয়ে তারা প্রথমে সংসদ ভবনে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে আটক রাখে।
পরবর্তীতে আগরতলা মামলায় যে কক্ষটিতে ছিলেন, সেখানেই তাকে আটক রাখা হয়। এরপর ১৪ ডিভিশন অফিসার্স মেসে স্থানান্তরিত করা হয়। পরবর্তীতে আবার তাকে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের চার তলায় একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। এখানে কয়েকদিন রেখে তাকে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার অভিযান ছিল সুপরিকল্পিত। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন দমন করতে এবং নেতৃত্ব শূন্য করতে তাকে গ্রেপ্তার করে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু বন্দি থাকলেও তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববাংলার জনতা দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে।