Download Our App

বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও।

উত্তর : ভূমিকা : বখতিয়ার খলজি ছিলেন আফগানিস্তানের গরমশিরের অধিবাসী। এয়োদশ শতকের শুরুর দিকে তিনি
বাংলার উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে সেন শাসনের অবসান ঘটিয়ে- মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের মাধ্যমে বাংলার ইতিহাসে নবযুগের সূচনা হয়। তিনি বাংলা, গৌড়, তিব্বতে অভিযান পরিচালনা করেন। স্বীয় প্রতিভা ও বীরত্বের বলে ভারতবর্ষ তথা বাংলার ইতিহাসে তিনি উজ্জ্বল
নক্ষত্র হয়ে আছেন। বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বাংলাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা বখতিয়ার খলজি বিজয়ের পর ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলা (নদীয়া) আক্রমণ করেন । নদীয়া আক্রমণে বখতিয়ার অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি তেলিয়াগড়ের সুরক্ষিত গিরিপথ পরিহার করে ঝাড়খণ্ডের গহীন অরণ্যের ভেতর দিয়ে ক্ষিপ্রতার সাথে নদীয়া পৌঁছেন। তখন
তার সাথে মাত্র ১৮ জন অশ্বারোহী ছিল। তিনি অতর্কিত প্রাসাদ আক্রমণ করেন। প্রায় বিনা যুদ্ধেই নদীয়া মুসলমানদের দখলে আসে।
নদীয়ায় কিছুদিন অবস্থান করে তিনি লক্ষণাবতী (গৌড়) অধিকার করেন এবং সেখানে রাজধানী স্থাপন করেন। লক্ষণাবতীর নাম হয় লখনৌতি । এখানেই প্রথম মুসলিম শাসনের কেন্দ্র স্থাপিত হয় । বখতিয়ার খলজি নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যে সুশাসনের ব্যবস্থা করেন।
নদীয়া জয়ের পর বখতিয়ার খলজি আরো পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে বরেন্দ্র বা উত্তর বাংলায় নিজ অধিকার বিস্তার করেন। অধিকৃত এলাকাকে তিনি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেন এবং প্রত্যেক ভাগে একজন সেনাপতি নিয়োগ করেন। এভাবে বখতিয়ার খলজি নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যে সুশাসনের ব্যবস্থা করেন। দিনাজপুরের দেবকোটে তিনি স্থায়ী রাজধানী স্থাপন করেন। তার রাজ্য পূর্বে তিস্তা ও করতেয়ো নদী, দক্ষিণে পদ্মা নদী, উত্তরে দিনাজপুর জেলার দেবকোট হয়ে রংপুর শহর পর্যন্ত এবংপশ্চিমে বখতিয়ারের পূর্ব অধিকৃত বিহার পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজি নিঃস্ব সৈনিক হিসেবে জীবন শুরু করে স্বীয় যোগ্যতা ও সাহসিকতার গুণে সুদূর আফগানিস্তান থেকে বাংলায় এসে মুসলিম রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। শাসন প্রতিষ্ঠা করলেও বাংলায় তিনি বেশি দিন স্থায়ী হননি। তিব্বত অভিযানের ব্যর্থতার শোকে তিনি ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর পর সুলতান গিয়াসউদ্দিন ইওজ খলজি বাংলায় মুসলিম সাম্রাজ্যকে শক্তিশালী করেন।