Download Our App

বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলাফল সংক্ষেপে লিখ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলার ইতিহাসে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজি একটি স্মরণীয় নাম। কারণ তিনিই প্রথম
বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের বাসিন্দা। ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে তিনি হিন্দু রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন। বখতিয়ার খলজি ছিলেন একজন ভাগ্যান্বেষী তুর্কি সৈনিক। তিনি বদায়ূনের শাসনকর্তা হিজবর উদ্দিনের কাছে নগদ বেতনে চাকরি নেন। ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে এক প্রকার বিনা বাধায় তিনি বাংলার রাজধানী নদীয়া জয় করেন। বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলাফল : বখতিয়ার
খলজির বাংলা বিজয়ের ফলাফল ছিল অত্যন্ত ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। এ বিজয় বাংলার ইতিহাসের গতি ও প্রকৃতির নতুন
পথ প্রদর্শন করে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১/ বাংলায় মুসলিম শাসনের সূত্রপাত : বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় হিন্দু রাজত্বের অবসান ঘটে
এবং মুসলিম রাজত্বের সূত্রপাত হয়। বখতিয়ার শুধু মাত্র বাংলা বিজয় করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের সুশাসন
প্রতিষ্ঠা করেন এবং রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য দিনাজপুরের দেবকোটে রাজধানী স্থাপন করেন। সুতরাং বাংলা বিজয়ের মধ্য
দিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ অধ্যুষিত বাংলায়-মুসলিম শাসনের সূচনা হয়।
— ২. নতুন যুগের সূচনা : বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের ফলে বাংলায় শুধু মুসলিম শাসনের সূচনাই হয়নি, এর সঙ্গে প্রাচীন
যুগেরও অবসান ঘটে এবং বাংলার ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা হয়।
৩. রাজ্যসীমা : বখতিয়ার খলজি বাংলার রাজ্যসীমা উত্তরে পূর্ণিয়া, দেবকোট ও রংপুর, পূর্বে তিস্তা ও করতোয়া নদী; পশ্চিমে
কুশা নদীর ভাটি থেকে রাজমহল পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন।

  1. মুসলিম রাজ্যের সম্প্রসারণ : বখতিয়ার খলজি বঙ্গ বিজয় করে বাংলার একাংশে অর্থাৎ পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাংশে
    যে রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন পরবর্তী মুসলিম শাসকদের আমলে তা ক্রমান্বয়ে সমগ্র অঞ্চলে সম্প্রসারিত হয়। এ অবস্থার সূচনা হয়েছিল বখতিয়ার খলজির বঙ্গ বিজয়ের মধ্য দিয়েই।
    ৫. সুশাসনের ব্যবস্থা : বখতিয়ার খলজি বাংলায় একটি ইসলামি সমাজব্যবস্থা ও শাসনপ্রণলি গড়ে তোলেন।
    ৬. ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সংস্কৃতির বিকাশ : বাংলায়
    মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সুফি-দরবেশ, পীর-ফকিররা এ অঞ্চলে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। মুসলিম শাসকগণ
    বিজিত অঞ্চলে মসজিদ, মাদরাসা ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইসলাম প্রচারে সুফি-দরবেশদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। ফলে বাংলায় ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে।
    ৭. শিক্ষা বিস্তার : তিনি ইসলামি শিক্ষাবিস্তারের লক্ষ্যে লখনাবতিতে অনেক মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছিলেন ।
    হিন্দু ও বৌদ্ধ শাসনের অবসান : বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের ফলে বিহারের বৌদ্ধ পালরাজা ও বাংলায় হিন্দু সেন রাজবংশের শাসনের অবসান হয় এবং মুসলিম শাসন কাল শুরু হয় ।
    ৯. তুর্কি বাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি : বাংলা বিজয়ের ফলে লক্ষ্মণ সেনের বিপুল ধনসম্পত্তি ও হস্তিবাহিনী বখতিয়ারের হাতে আসে এবং তুর্কিরা ; দলে দলে যোগ দিয়ে তাঁর সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
    ধর্মীয় সংস্কার : বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে একটি নতুন চিন্তাধারার সূচনা হয় এবং হিন্দু সমাজে মুসলিম বিপ্লবের সূত্রপাত হয় ও একটি ধর্মীয় সংস্কারের সূচনা হয়।
    উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসন, ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যাপক প্রসার ঘটে। বাংলার মানুষ দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। সুতরাং বাংলায় বখতিয়ার খলজি রাজ্য প্রতিষ্ঠা মুসলমানদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।