উত্তর : ভূমিকা : মধ্যযুগের বাংলার ইতিহাসে বখতিয়ার খলজি একটি স্মরণীয় নাম। তিনিই প্রথম বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন আফগানিস্তানের গরমশির বা আধুনিক দশত-ই-মার্গের বাসিন্দা। একদা ভাগ্যান্বেষণে বের হয়ে তিনি ভারতবর্ষে আসেন এবং কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভাবলে স্বীয় ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটান। তিব্বত অভিযান হচ্ছে দক্ষ, রণকুশলী ও বঙ্গবিজেতা বখতিয়ার খলজির ঘটনাবহুল জীবনের সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
→ তিব্বত অভিযানের ফলাফল : একজন কুশলী এবং দুঃসাহসী সেনাপতি হওয়া সত্ত্বেও তিব্বত অভিযানের ফলাফল বখতিয়ার খলজিকে ব্যর্থ সেনাপতিতে পরিণত করে। তিব্বত অভিযানের ফলে তার বিশাল সৈন্যবাহিনীর সলিল সমাধি ঘটে। কানাইবরশী বোয়া নামক স্থানে প্রাপ্ত শিলালিপিতে ১১২৭
শতাব্দে তুর্কি সৈন্যদের বিধ্বস্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অভিযানের ফলে বাংলার হিন্দু রাজগণ কিছুকালের জন্য হলেও
মুসলিম আক্রমণের আশঙ্কা থেকে পরিত্রাণ পায়। বখতিয়ারের তিব্বত অভিযানের মধ্য দিয়ে খলজি বাহিনীর অধিকাংশ সদস্য
মৃত্যুবরণ করলে গৌড়ে মুসলিম রাজ্য সম্প্রসারণের পথ সাময়িকভাবে রুদ্ধ হয়। এ অভিযানের ফলে বাংলার মুসলমান
প্রভুত্ব থেকে বিহার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর বিহার তুর্কিদের হাত ছাড়া হলে তাদের সামরিক শক্তি বিশেষভাবে ক্ষুণ্ণ হয়।
বখতিয়ারের তিব্বত অভিযানের ব্যর্থতা সদ্য প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংহতির উপর চরম আঘাত হানে এবং খলজিদের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটায়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, বখতিয়ার খলজির বাংলা বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও তিব্বত অভিযান ছিল তার অপরিকল্পনা ও অদূরদর্শিতার পরিচায়ক। এ অভিযানে ব্যর্থতার ফলে গৌড়ের মুসলমান রাজ্য
সম্প্রসারণের পথ সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। তিব্বত অভিযানের ফলাফল বখতিয়ার খলজির জন্য সুখকর না হলেও এর মাধ্যমে
তিনি বেশ সাহসিকতার পরিচয় দেন।


