বঙ্গীয় রেনেসাঁস বলতে ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে ২০শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে (মূলত অবিভক্ত বাংলায়) ঘটে যাওয়া একটি সমাজ, সংস্কৃতি, এবং চিন্তাধারার নবজাগরণকে বোঝানো হয়। এটি ইউরোপীয় রেনেসাঁর সাথে তুলনীয় একটি আন্দোলন, যদিও এটির একেবারে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বঙ্গীয় রেনেসাঁসের বৈশিষ্ট্য:
- শিক্ষার প্রসার:
- আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটে।
- বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায়, এবং অন্যান্য মনীষীদের প্রচেষ্টায় নারীশিক্ষা এবং নিম্নবর্ণের শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া হয়।
- সমাজ সংস্কার:
- সতীদাহ প্রথা বিলুপ্তি, বিধবা পুনর্বিবাহ প্রচলন, এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
- নারীর অধিকারের পক্ষে ও হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীল প্রথার বিরুদ্ধে প্রচার।
- ধর্মীয় ও দার্শনিক চিন্তা:
- রামমোহন রায়ের ব্রাহ্ম সমাজ এবং বিবেকানন্দের আদর্শিক চিন্তা নতুন ধারার পথ দেখায়।
- ধর্মের প্রতি যুক্তিনির্ভর দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধ্যাত্মিকতায় আধুনিকতার ছোঁয়া।
- সাহিত্য, সংস্কৃতি, ও বিজ্ঞানচর্চা:
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখের নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্য নতুন মাত্রা পায়।
- বিজ্ঞানচর্চায় জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের মতো ব্যক্তিত্বরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
- নাটক, সংগীত, চিত্রকলা, এবং সাংবাদিকতায় নবজাগরণ।
- রাজনৈতিক সচেতনতা:
- ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটে।
- ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন।
মূল ব্যক্তিত্ব:
- রাজা রামমোহন রায়: আধুনিক ভারতের জনক বলে পরিচিত।
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: সমাজ সংস্কারক এবং শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ।
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: সাহিত্যের পাশাপাশি সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার প্রতীক।
- বিবেকানন্দ: আধ্যাত্মিক চিন্তার বিশ্বদূত।
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথিকৃৎ।
বঙ্গীয় রেনেসাঁসের প্রভাব বাংলা সমাজ ও সংস্কৃতিকে গভীরভাবে রূপান্তরিত করে। এটি নতুন চিন্তা, মানবতাবাদ, এবং আধুনিকতার পথ দেখায়।