অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠী হিসেবে উপজাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠী হিসেবে উপজাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে তুমি যা জান সংক্ষেপে লিখ।
অথবা, প্রান্তিক গোষ্ঠী হিসেবে উপজাতীয় শিক্ষা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সকল সমাজে একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী আছে যারা নির্যাতিত হলেও চোখ বুজে সহ্য করে, যারা ক্ষুধার্ত হলেও খাদ্যের জন্যে হাত প্রসারিত করে না, যাদের হাহাকার নীরবে নিভৃতে কাঁদে। মূলত এ ধরনের সমস্যার মূলে রয়েছে শিক্ষাহীনতা। এসব সমস্যা দূরীকরণের প্রত্যয়ে ‘সর্বজনীন শিক্ষা চাই’ এ ধরনের শ্লোগান সবার মুখে
মুখে ভেসে উঠে। মূলত Sociology of Education এ ধরনের গোষ্ঠী বা শ্রেণিকে নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। এ প্রসঙ্গে প্রান্তিক গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করা হবে।
প্রান্তিক গোষ্ঠী হিসেবে উপজাতীয় শিক্ষা : প্রান্তিক গোষ্ঠী হিসেবে উপজাতিদের শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করার পূর্বে উপজাতি গোষ্ঠী হিসেবে আলোচনার প্রয়োজন। উপজাতির ইংরেজি প্রতিশব্দ Tribe. উপজাতি বলতে এমন একটি সামাজিক গোষ্ঠীকে বুঝায় যাদের নিজস্ব একটি বিশেষ ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে যা অন্য উপজাতি থেকে ভিন্নতর। রাজনৈতিকভাবে এটাকে যে একটি সংগঠিত জনপদ হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। নৃবিজ্ঞানী E. B. Tylor তাঁর ‘Cultural Ways’ গ্রন্থে বলেছেন, “উপজাতি বলতে বুঝায় এমন একটি জনগোষ্ঠী যারা মোটামুটিভাবে একটা অঞ্চলে সংগঠিত এবং যাদের মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং যার সদস্যরা মনে করে যে, তারা একই সংস্কৃতির অন্তর্গত”। উদ্যান পালন নৃবিজ্ঞানী কোহেন ও এম্বার জীবিকানির্বাহের ভিত্তিতে বলেছেন, “একটি গোষ্ঠী যারা জমি চাষাবাদ, অথবা মেষ পালনের জীবননির্বাহ করে।” এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার পাঁচশ সত্তর বর্গ কিলোমিটার আয়তন (বর্তমান আয়তন ২,৪৬,০৩৭ বর্গ কি.মি. ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রাপ্ত অংশসহ) বিশিষ্ট বাংলাদেশে নানা জাতি, উপজাতি বাস করে। ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যগত বিচারে তারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন। এসব জাতি, উপজাতির মধ্যে বিভিন্ন দিক দিয়ে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ জাতিদের তুলনায় উপজাতিরা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং শিক্ষাগতযোগ্যতার দিক দিয়ে বেশি পার্থক্যমণ্ডিত। এসব উপজাতি সাধারণভাবে ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতিগত দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্ব ও উত্তরপূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে উপজাতিদের আধিক্য দেখা যায়। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগেও কিছু কিছু উপজাতি গোষ্ঠী বসবাস করে। আমাদের দেশে পার্বত্য জেলাসমূহ বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বগুড়া,
ময়মনসিংহ প্রভৃতি জেলায় উপজাতিদের বসবাস। এসব উপজাতিদের মধ্যে চাকমা, মারমা, মুরং, সাঁওতাল, মগ, হাজং প্রভৃতি দেখা যায়। আজ থেকে ৪০ বছর আগে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। এ দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয়েছে। এ সময়ে বারবার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক পট পরিবর্তিত হয়েছে। মানুষের জীবন ও জীবিকায় এসেছে পরিবর্তন। দেশের প্রায় সর্বত্র উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কিন্তু উপজাতি গোষ্ঠীর জীবনে সেভাবে উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। শিক্ষা, জ্ঞান, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, জীবনধারায় তারা অনেক পিছিয়ে আছে। উপজাতি গোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন পরিকল্পনা গৃহীত হয় কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐহিত্যগত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রত্যেক জাতি বা সম্প্রদায় চায় তাদের সার্বিক জীবনপ্রবাহ, আচার ব্যবস্থা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে ধারণ করতে এবং সে সাথে একটা উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যেতে। প্রত্যেক জাতি চায় তাদের ঐতিহ্যকে ল
ালন করতে। ঐতিহ্যকে লালন করতে গিয়ে তারা নিজেদের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে। নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষার্থে তাদেরকে সবচেয়ে বেশি নিষ্ঠাবান হতে হবে। অনেক উপজাতি সম্প্রদায় মনে করে প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ করলে তারা হয়ত পিছিয়ে পড়বে। তাদের ঐতিহ্য হয়ত বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বস্তুত তাদের পিছিয়ে থাকা সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা বা উন্নত করার জন্য আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য।