প্রাচীনকাল থেকে বাংলার মানুষ ধর্মীয়ভাবে সহনশীল ছিল- ব্যাখ্যা কর।

অথবা, সুপ্রাচীনকাল থেকে বাংলার ধর্মীয় সহনশীলতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
অথবা, ভূপ্রকৃতির কারণে বাংলা কীভাবে ধর্মীয়ভাবে উদার ছিল? সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, “বাঙালি ধর্মীয়ভাবে সহনশীল জাতি”— মতামত দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলার ভূপ্রকৃতি বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক জীবনে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি বাংলার ধর্মীয় জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। অনার্য সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে মিশে থাকায় বাংলার কোনো ধর্মেরই আদিত্ব সম্পূর্ণরূপে রচিত হয়নি। প্রাচীন বাংলায় যে ধর্মই বিকাশ লাভ করেছে বা প্রচলিত ছিল সেখানে‘উদার’ ধ্যানধারণার বিকাশ লক্ষণীয়।বাংলার মানুষ ধর্মীয়ভাবে সহনশীল : প্রাচীন বাংলায় অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে বৌদ্ধ সম্রাট শাস্ত্রীয় জ্ঞান ও চতুর্বর্ণ প্রথার প্রতি নিজেদের একাত্মতা ঘোষণা করেছেন বা হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা ব্রাহ্মণের বৌদ্ধ সম্রাট ভূমিদান করেছেন। প্রাচীন তাম্রশাসনসমূহের বংশাবলি ও ভূমিদান অংশে প্রমাণ রয়েছে যে, বৌদ্ধ সম্রাটের সভাসদ, সভাকবি ও অমার্ত্যবর্গ ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বৌদ্ধ রাজারা হিন্দুধর্মের আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি এত শ্রদ্ধাশীলরূপে প্রতীয়মান হন যে,
তা থেকে অনেকেই মনে করেছেন, তারা বৌদ্ধধর্ম ত্যাগ করেছেন। আবার একই সাথে তারা শিব ও বিষ্ণুর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। জনগণ হিন্দু ছিল আর শাসকগণ বৌদ্ধ ছিল । বৌদ্ধ শাসকদের ভূমিদানের অধিকাংশই ছিল হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা এ সম্প্রদায়ের জনগণের জন্য। বাংলার এ ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এ অঞ্চলের মানুষদের ধর্মীয়ভাবে নিজস্বতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এ কারণে দেখা যায়, বাংলার মুসলমানদের সাথে উপমহাদেশের অন্য মুসলমানদের অনেক পার্থক্য রয়েছে। বাংলার
মুসলমানদের ভিন্ন সত্তা রয়েছে। যে সত্তা এ অঞ্চলের অমুলমানদের কাছাকাছি এবং উপমহাদেশের অন্য মুসলমানদের থেকে পৃথক বা ভিন্ন । ধর্মের ঐতিহ্য গোঁড়া মনোভাবের চাইতে আত্মিক মানবতাবোধ বাংলার মানসে অধিক প্রাধান্য পেয়েছে। যার জন্য দেখা যায়, ধর্মীয় সহনশীলতায় এবং পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুসলিম শাসকগণ শ্রীচৈতন্যকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সমগ্র রাজ্যে অবাধে চৈতন্যকে তার বাণী প্রচার করার ব্যবস্থা করেছে মুসলিম শাসকগণ । এটা মধ্যযুগের শাসকগণ করেছিল। তবুও এ ধর্মীয় সহনশীলতার যুগকে অনেক ঐতিহাসিক অন্ধকার যুগ বলে অবহিত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, এসব ধর্ম এবং তাদের মধ্যে আত্মিক বন্ধন এবং সহনশীলতা এ অঞ্চলের একান্ত নিজস্বতা দিয়ে তৈরি, যা অন্য কোনো অঞ্চলে লক্ষ করা যায় না। এটা সম্ভব হয়েছে বাংলার ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে।