প্রাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিবরণ দাও।

অথবা, প্রাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ধারণা বর্ণনা কর।
অথবা, প্ৰাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মানুষের পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর জন্য যেসব প্রথা সমাজে মোটামুটি স্থায়ী রূপ ধারণ করেছে, সেসবকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয়। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গোটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পত্তির মালিকানা, শ্রমবিভাগ এবং বিনিময় ব্যবস্থা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক প্রাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : শিল্পপূর্ব যুগে যেসব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল তাকে প্রাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। যেমন- সম্পত্তি, ব্যক্তিগত মালিকানা, কৃষিকাজ প্রভৃতি। প্রাক শিল্পযুগীয় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে আবার দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
ক. আদিম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং খ. কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান।
ক. আদিম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : আদিম মানুষের মধ্যে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তাকে আদিম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। এ প্রতিষ্ঠানের কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হলো :
১.আদিমকালে মানুষ পশুপাখি শিকার ও ফলমূল আহরণের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করতো এবং এটিই ছিল তাদের প্রথম এবং প্রধানতম উপায়।
২.তৎকালীন সময়ে বয়স ও স্ত্রী-পুরুষভেদে শ্রমবিভাগ ছিল। অর্থাৎ বালক, যুবক, পরিণত বয়স্ক এবং বৃদ্ধ এদের প্রত্যেকের অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বতন্ত্র ছিল। অন্যদিকে, পুরুষরা বনেজঙ্গলে পশুপাখি শিকার করতো এবং মহিলারা ফলমূল সংগ্রহ করতো।
৩.তখন অর্জিত সকল সম্পদের উপর ব্যক্তিগত মালিকানা ছিল না, ছিল সাম্প্রদায়িক মালিকানা।
৪.আদিম সমাজে অর্জিত সম্পদে সাম্প্রদায়িক মালিকানা থাকার কারণে তাদের মধ্যে সামাজিক স্তরবিন্যাস দুর্লভ ছিল।
খ. কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান : কৃষিনির্ভর সমাজ যে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে তাকে কৃষিনির্ভর অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। এ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানেরও কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন-
১.কৃষিনির্ভর সমাজে জীবিকার্জনের মুখ্য উপায় হলো কৃষি উৎপাদন।
২.এ সমাজে পেশাভিত্তিক শ্রমবিভাগের প্রচলন শুরু হয়। অর্থাৎ কামারেরা কেবল কামারের কাজ, নাপিতরা কেবল নাপিতের কাজ করবে।
৩. কৃষিভিত্তিক সমাজের ভূমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার উদ্ভব।
৪. এ ভূমি মালিকানাকে কেন্দ্র করে সামাজিক স্তরবিন্যাস গড়ে উঠে। যেমন- জমিদার, পাইক, পেয়াদা, বর্গাচাষি, ভূমিহীন উলেখযোগ্য। এ সমাজে কৃষি উৎপাদনকে কেন্দ্র করেই গ্রাম গড়ে উঠে। গ্রাম্য সমাজ মূলত সাম্প্রদায়িক সমাজ। এখানে পারস্পরিক সহযোগিতা ও নির্ভরশীলতা সাম্প্রদায়িক জীবনকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত রাখতে সাহায্য করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, মানুষের পার্থিব প্রয়োজন মিটানোর যেসব প্রথা সমাজে মোটামুটি স্থায়ীরূপ ধারণ করেছে তাকে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে সমাজ পরিচালিত হয়। সম্পত্তির মালিকানা, শ্রমবিভাগ ও বিনিময় ব্যবস্থা হলো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দিক।