অথবা, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
অথবা, প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের বৈসাদৃশ্যসমূহ আলোচনা কর।
সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে পার্থক্যসমূহ উল্লেখ কর।
উত্ত৷ ভূমিকা : পৃথিবী সৃষ্টির ঊষালগ্ন থেকে বর্তমান পর্যন্ত পরিবেশ নামক প্রত্যয়টির সাথে মানুষ তথা গোটা প্রাণিজগতের সম্পর্ক অতি নিবিড়, চিরন্তন ও অবিচ্ছেদ্য। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের স্বাভাবিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানের উপর প্রাণিজগতের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্ব বহুলাংশে নির্ভরশীল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পরিবেশের উপাদান হলো একে
অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক উপাদান অন্য উপাদানের উপর অস্তিত্বগতভাবে নির্ভরশীল। আর এ সামগ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থা প্রাণিজগতকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। এ প্রসঙ্গে অনাদী কুমার মহাপাত্র তাঁর ‘বিষয় সমাজতত্ত্ব’ গ্রন্থে বলেছেন, “Any kind of living thing dependents on his or her environment and he or she has a good relationship with environment in the view of interactions.” প্রাকৃতিক সামাজিক পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য : পরিবেশকে প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ এ দু’ভাগে ভাগ করা হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে প্রফেসর এম. সি আগরওয়ালা বলেছেন, “Physical
environment is constituted or composed of factors contributed by nature and man has nothing to
do with their origin and creations.” সামাজিক পরিবেশ সম্পর্কে Prof. Gisbert বলেছেন, “The social environment is constituted by the society of our fellow men in so far as they affect us.” নিম্নে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো :
১. প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রকৃতির তৈরি, অপরপক্ষে সামাজিক পরিবেশ মানুষের তৈরি।
২.প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলো জৈব, অজৈব উভয়ই হতে পারে। কিন্তু সামাজিক পরিবেশের উপাদান সর্বদাই অজৈব।
৩.প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোর বিপর্যয় সামাজিক উপাদানগুলোকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, সামাজিক পরিবেশের কোন উপাদানের বিচ্যুতি প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।
৪. প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো উপাদানের বিলুপ্তি ঘটলে তার পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, যদি না তা প্রাকৃতিকভাবে পুনরুজ্জীবিত না হয় ।
অপরপক্ষে, সামাজিক পরিবেশের কোন উপাদানের বিলুপ্তি হলে তা পুনরুদ্ধার করা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রাকৃতিক উপাদানের প্রাচুর্যতা বা প্রাপ্ততাই মূল ভূমিকা পালন করে।
৫. প্রাকৃতিক পরিবেশ সামাজিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়, কিন্তু সামাজিক পরিবেশ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর নির্ভরশীল । তবে প্রাকৃতিক পরিবেশের তারতম্য হলে সামাজিক পরিবেশের তারতম্য হতে পারে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের পরিবর্তন স্বয়ংক্রিয় এবং এ পরিবর্তন মানুষের জন্য ইতিবাচক বা নেতিবাচক দু’ধরনেরই হতে পারে।
৬. কিন্তু সামাজিক পরিবেশের পরিবর্তন মানুষের হাতে হয়। সাধারণত এ পরিবর্তন মানুষের ইতিবাচক দিককে.সামনে রেখেই করা হয়।
৭. প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলো প্রায় সীমিত কিন্তু সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো অসীম। কারণ সামাজিক পরিবেশের উপাদানগুলো সামাজিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সৃষ্টি হয়।
৮. প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের ক্ষমতার দ্বারা শুধুমাত্র নতুনত্ব পায় তবে তার প্রাকৃতিক রূপ স্থায়ী। অন্যদিকে, সামাজিক পরিবেশ মানুষ তার শিল্পের ইচ্ছামতো সাজাতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যে বেশ পার্থক্য বিরাজমান এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা প্রকট। তদুপরি দু’টিই মানুষের পরিবেশ এবং মানুষের জীবনকে সুন্দরভাবে সাজাতে দু’টির প্রতিই দৃষ্টি থাকা আবশ্যক।