[ad_1]
প্রশ্নঃ শ্রমিক সংঘের কার্যাবলি বর্ণনা কর ।
উত্তর ৷ ভূমিকা : শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা শ্রমিক সংঘের মূল লক্ষ্য । এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্রমিক সংঘ বিভিন্ন কার্যাবলি সম্পাদন করে । শ্রমিক সংঘের কার্যাবলি : শ্রমিক সংঘের কার্যাবলিকে প্রধানত তিনভাবে ভাগ করা যায় । যথা :
১. কল্যাণমূলক বা ভ্রাতৃত্বমূলক কার্যাবলি ,
২. সংগ্রামী কার্যাবলি ,
৩. রাজনৈতিক কার্যাবলি ও
৪. আপসমূলক কার্যাবলি । নিম্নে শ্রমিক সংঘের কার্যাবলির বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করা হলো :
১. কল্যাণমূলক কার্যাবলি : শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণসাধন তথা তাদের দৈহিক ও মানসিক উন্নতি , কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদি উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা হয় তাকে কল্যাণমূলক কার্যাবলি বলে । নিম্নে কল্যাণমূলক কার্যাবলি বর্ণনা করা হলো :
i . শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা : শ্রমিকদের কর্মক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শ্রমিক সংঘ করে থাকে ।
ii . সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা : শ্রমিকদের শিক্ষার পাশাপাশি শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিদ্যালয় স্থাপন ও পরিচালনা করে শ্রমিক সংঘ ।
iii . যৌথ তহবিল গঠন : শ্রমিকদের বিভিন্ন আপদকালীন সমস্যা মিটানোর উদ্দেশ্যে চাঁদা প্রদান করে এ সংঘ যৌথ তহবিল গঠন করে থাকে ।
iv . চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা : শ্রমিকদের চিত্তরিনোদনের জন্য এ সংঘ বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে । পাঠাগার ও শারীরচর্চা কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি কাজ এ সংঘ করে থাকে ।
v . অন্যান্য কার্যাবলি : চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন , ক্লাব গঠন , পাঠাগার ও শরীরচর্চা কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি কাজ এই সংঘ করে থাকে ।
২. সংগ্রামী কার্যাবলি : শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায় ও কাজের অবস্থা এবং চাকরির শর্তাবলি উন্নত করার জন্য মালিকের সাথে যৌথভাবে দরকষাকষি করাকে শ্রমিক সংঘের সংগ্রামী কার্যাবলি বলে । এ কার্যাবলিগুলো নিম্নরূপ :
i . যৌথ দরকষাকষি : বিভিন্ন প্রকার পাওনা ও দাবি আদায়ের জন্য এ সংস্থা মালিকদের সাথে দরকষাকষি করে ।
ii . ন্যায্য মজুরি আদায় : বিভিন্ন প্রকার আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে এ সংস্থা ন্যায্য মজুরি আদায় করে ।
iii . চাকরির নিরাপত্তা বিধান : চাকরি স্থায়ীকরণ বা অযৌক্তিকভাবে যেন মালিকপক্ষ শ্রমিক ছাটাই করতে না পারে সে ব্যবস্থা এ সংঘ করে থাকে ।
iv . শ্রমিক শোষণ ও নির্যাতন বন্ধ করা : শ্রমিকদের যেন মালিকপক্ষ শোষণ ও নির্যাতন করতে না পারে সে ব্যবস্থা এ সংগঠন করে থাকে ।
v . কাজের শর্তাবলি উন্নত করা : শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা , শ্রমিক সংঘ কাজের সময়সীমা হ্রাস , অবসর বিনোদনের ব্যবস্থা , কারখানার পরিবেশ উন্নয়ন , পদোন্নতির ব্যবস্থা , বোনাস প্রদান , পেনশন প্রদান ইত্যাদির ব্যবস্থা করে ।
vi . শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা : বিভিন্ন দাবি আদায়ে ব্যর্থ হলে শ্রমিক সংঘ কর্মবিরতি , ঘেরাও , অনশন , ধর্মঘট ইত্যাদির ব্যবস্থা করে থাকে ।
vii . বীমা ব্যবস্থা প্রচলন: শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে এ সংঘ মালিক পক্ষকে বীমা ব্যবস্থা প্রচলনের ব্যবস্থা করতে বাধ্য করে ।
viii . উৎপাদন সীমিতকরণ : অনেক সময় মালিক পক্ষকে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে শ্রমিক সংঘ উৎপাদন সীমিত করে ।
৩. রাজনৈতিক কার্যাবলি: শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অনেক রাজনৈতিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণ করে । যেমন-
i. আইন প্রণয়ন : সভাসমিতি , আন্দোলন ইত্যাদির মাধ্যমে শ্রমিক সংঘ ন্যূনতম মজুরি আইন , কারখানা আইন , ক্ষতিপূরণ আইন প্রভৃতি আইন সভার মাধ্যমে পাস করার চেষ্টা করে ।
ii . দল গঠন : শ্রমিক সংঘ বিভিন্ন দেশে দল গঠন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে থাকে যেমন যুক্তরাজ্যের “ শ্রমিক দল ” নামে একটি রাজনৈতিক দল আছে ।
iii . আইন সভায় প্রতিনিধি প্রেরণ : শ্রমিক সংঘ শ্রমিকদের স্বার্থের পক্ষে কথা বলার জন্য অনেক সময় জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আইন সভায় প্রতিনিধি পাঠানোর প্রচেষ্টা নেয় ।
৪. আপোশমূলক কার্যাবলি : অনেক সময় মালিক পক্ষ শ্রমিকদের বিভিন্ন ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া , সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করতে না পারলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে করা হয় ।
উপসংহার : সুতরাং বলা যায় যে , বাংলাদেশে শ্রমিক সংঘ তাদের দাবি আদায়ে উপর্যুক্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকে তবে শ্রমিক সংঘ দুর্বল বিধায় তাদের দাবি আদায়ে অধিকাংশ সময়ই ব্যর্থ হয় । তাই শ্রমিক সংঘকে আরো গতিশীল ভূমিকা পালন করতে হবে ।
[ad_2]