[ad_1]
প্রশ্নঃ রাজস্বনীতির হাতিয়ারসমূহ কী কী ?
উত্তর ৷ ভুমিকা : আয়ব্যয় নীতি হিসেবে প্রতিটি দেশই বেশকিছু হাতিয়ারের সাহায্য নেয় তথা বেশকিছু পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারের আয়ব্যয় পরিচালনা করা হয় । যা রাজস্বনীতির হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত ।
রাজস্বনীতির হাতিয়ার : নিম্নে সংক্ষেপে রাজস্বনীতির হাতিয়ারসমূহের ব্যাখ্যা দেয়া হলো :
১. সরকারি ঋণ : সরকার রাজস্বনীতির হাতিয়ার হিসেবে ঋণ নীতিকে ব্যবহার করেন । সরকার জনগণের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে পারে । এরূপ ঋণ গ্রহণ করে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করা হয় এবং অর্জিত অর্থ দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয় । অর্থনীতিতে আয় , নিয়োগ , উৎপাদন ও দামস্তরের উপর প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব ।
২. বাধ্যতামূলক সঞ্চয় : বাধ্যভাবে বা নানা কৌশলে সরকার সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের আয় বা বেতনের যে অংশটুকু কেটে রাখে তাকে বলা হয় বাধ্যতামূলক সঞ্চয় । এটি অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে ।
৩. নতুন করনীতি : রাজস্বনীতির হাতিয়ার হিসেবে নতুন করনীতি ভূমিকা রাখে । সরকার অনেক দেশের বিশেষ প্রয়োজনে নতুন কর ব্যবস্থার সাহায্য নেয় । এরূপ কর থেকে সংগৃহীত অর্থ দেশের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
৪. বাজেট : অর্থনীতিতে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা আনতে বাজেট একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে । বিভিন্ন ধরনের বাজেট দ্বারা রাজস্বনীতি বাস্তবায়ন করা হয় ।
i . বার্ষিক ভারসাম্য বাজেট : সরকার তার বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট দ্বারা দেশের জনগণের আয় উৎপাদন এবং দাম স্তর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
ii . চক্রবৃদ্ধি ভারসাম্য বাজেট : চক্রবৃদ্ধি ভারসাম্য বাজেটটি সুইডিস বাজেট থেকে এসেছে । এখানে সচ্ছলতার সময়ে সরকার ঋণপত্র প্রত্যাহার এবং মন্দার সময়ে ঋণপত্রের মাধ্যমে ঋণ নিতে পারে ।
iii . পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত ক্ষতিপূরণমূলক বাজেট : এ ধরনের বাজেট পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত । এখানে সরকার ইচ্ছা করলে সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ।
৫. কর রাজস্ব : রাজস্বনীতির হাতিয়ারগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতিয়ারটি হলো কর রাজস্ব । সরকার তার করনীতির মাধ্যমে জনগণের জীবনযাত্রা তথা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব রাখতে পারে । মন্দার সময়ে সরকার শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং আমদানির উপর কর কমিয়ে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং সমৃদ্ধির সময়ে করনীতির পরিবর্তন করতে পারে ।
৬. গণপূর্ত : রাজস্বনীতির অন্যতম হাতিয়ারগুলোর আরেকটি হলো গণপূর্ত কার্যক্রম । কেইন্স এ নীতির সমর্থক । মন্দাকালে সরকার পূর্ত কার্যক্রম সম্প্রসারণ বা হস্তান্তর পাওনা ব্যয় করে সহজেই মন্দা বাগে আনতে পারে ।
মন্দাকালে গণপূর্ত দ্বারা
i . আর্থিক সামাজিক অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়ে ।
ii . শ্রমিকদের মেধার অপব্যবহার রোধ করে ।
iii . জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে যা চাহিদা বাড়িয়ে দেয় ।
iv . বেকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং
v . এটি বেসরকারি বিনিয়োগের দ্বার উন্মোচন করে ।
৭. ভর্তুকি নীতি : সরকার তার রাজস্ব ব্যবস্থায় ভর্তুর্কি নীতির স্থান দিতে পারে । সরকার নানা ধরনের জনকল্যাণমূলক খাতে ভর্তুকি নীতির বাস্তবায়ন করে । এ নীতির মাধ্যমে আয় , নিয়োগ , উৎপাদন এবং দামস্তরের উপর প্রভাব বিস্তার করে ।
৮. সরকারি ব্যয় : রাজস্বনীতির হাতিয়ার হিসেবে সরকার তার ব্যয় নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে । সরকার নানা খাতে ব্যয় করে থাকে । বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করা বা উন্নয়নের জন্য ব্যয় এগুলো সরকারের ব্যয়েরই অংশ । সরকারি ব্যয় আবার হস্তান্তরমূলক হয়ে থাকে । যেমন- ভাতা , পেনশন , সরকারি ঋণের সুদ ইত্যাদি ব্যবস্থা করা । এ সকল ব্যয় সরকারের উৎপাদন , ভোগ , নিয়োগ ইত্যাদিতে প্রভাব বিস্তার করে থাকে ।
উপসংহার : আলোচনাকৃত হাতিয়ারগুলোর মাধ্যমে সরকার দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে যা কল্যাণ বা সমৃদ্ধি ও অকল্যাণ দুটোই আনতে পারে ।
[ad_2]