প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সরকারি খাতে সম্পদ আহরণের কৌশলসমূহ আলোচনা।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে সরকারি খাতে সম্পদ আহরণের কৌশলসমূহ আলোচনা।

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশে সরকারি খাতে সম্পদ আহরণের কৌশলের যথেষ্ট সুযোগ আছে । বর্তমানে আমাদের দেশে কর পার্শ্ববর্তী অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ থেকে অনেক কম । এছাড়া সরকারের রাজস্ব ব্যয়ও কমানোর অবকাশ আছে ।

সরকারি খাতে সম্পদ আহরণের কৌশল : সরকারি খাতে উন্নয়নের জন্য সম্পদ আহরণ বৃদ্ধির কৌশল নিম্নোক্ত উপায়গুলো অবলম্বন করা যেতে পারে ।

১. যৌথ মূলধনী প্রতিষ্ঠানের উপর আয়কর : বাংলাদেশে কর্পোরেট আয়করের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তি অতি অল্প হয় । তার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন কর অব্যাহতির সুযোগ । ট্যাক্স হলিডে – এর মাধ্যমে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিস্তর কর অব্যাহতি পায় । কিন্তু বিভিন্ন দেশে সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে , কর অব্যাহতি বাস্তবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নয় । তাই অনেক উন্নয়নশীল দেশে ট্যাক্স হলিডে , ডেপ্রিসেশন এলাওন্স ইত্যাদি কর অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হচ্ছে । বাংলাদেশেও অনুরূপ পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকারি খাতে রাজস্ব বাড়ানো যেতে পারে ।

২. আবপারি কর : আবগারি করের ভিত্তি আর প্রসারিত করার তেমন সুযোগ নেই । তবে আবগারি কর আদায় করার পদ্ধতি সরলীকরণের এবং কর হার কাঠামো যুক্তিযুক্ত করণের মাধ্যমে কর আদায় বৃদ্ধির সুযোগ আছে ।

৩. ব্যক্তিগত আয়কর : বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে যে , ব্যক্তিগত আয়কর যাদের উপর প্রযোজ্য , তাদের মধ্যে একাংশ মাত্র আয়কর রিটার্ন জমা দেয় । ফাঁকি দেয়া ছাড়াও কর অব্যাহতির বিভিন্ন সুযোগে অনেকেই কর দেয় না । অতএব ব্যক্তিগত আয়কর দাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর সুযোগ আছে । এছাড়া বাংলাদেশে কর অব্যাহতি প্রাপ্ত আয়স্তর আরো নামিয়ে আনার সুযোগ আছে । এভাবে ব্যক্তিগত আয়করের মাধ্যমে উন্নয়নের জন্য সম্পদ আহরণ বাড়ানো যাবে ।

৪. কৃষিখাতে কর : বাংলাদেশের কৃষিখাতে আয়কর আরোপের বিকল্প পন্থা হিসেবে ভূমি কর ব্যবহৃত হয়ে আসছে । কিন্তু সম্প্রতি ভূমি কর মওকুফ করার কারণে এ খাতে সরকারের কর রাজস্ব বিস্তর হ্রাস পেয়েছে । সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য একটি সম্ভাব্য প্রস্তাব হচ্ছে জমির একর প্রতি অনুমিত ফসলের মূল্যের ভিত্তিতে কর আরোপ করা । এছাড়া বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত ফসলের উপরেও কর আরোপ করা যায় । এক গবেষণাতে দেখানো হয়েছে যে মূল্যানুপাতিক ৫ % হারে বাজারজাত উদ্বৃত্ত ফসলের উপর কর আরোপ করা হলে সরকার প্রায় ১৬১ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে যা বর্তমান মোট ভূমি কর থেকে বেশি ।

৫. কর বহির্ভূত রাজস্ব : সরকারের কর বহির্ভূত রাজস্বের প্রধান উৎস হচ্ছে সরকারের আর্থিক ও অ – আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ ও মুনাফা , জমা তহবিলের সুদ এবং বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত আয় । সরকারি জাতীয়কৃত ব্যাংক থেকে সরকার লভ্যাংশ পায় । বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের এ খাতে ৯০ % -এর ও বেশি রাজস্ব আসে । অ – আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন থেকে সর্বাধিক রাজস্ব পাওয়া যায় । কিন্তু পণ্য উৎপাদনকারী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগই সরকারের লোকসানের কারণ । অতএব এ লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিলে বা বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করলে সরকারের সাশ্রয় হবে । অবশ্য সার্বিকভাবে বলা যায় যে , কর বহির্ভূত রাজস্ব বৃদ্ধির তেমন কোন সুযোগ নেই ।

৬. সরকারের ব্যয় হ্রাস : রাজস্ব উদ্বৃত্ত বৃদ্ধির জন্য সরকারের রাজস্ব ব্যয় হ্রাস করা একান্ত প্রয়োজন । বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন বিভাগে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যয় হ্রাসের তেমন সুযোগ নেই । তবে রেলওয়ে , ডাক ইত্যাদি বিভাগের মতো সেবা উৎপাদনকারী বিভাগের দক্ষতা বাড়িয়ে সরকারের লোকসানের পরিমাণ কমাতে হবে । আর যেসব কারখানা নিয়মিত লোকসান দিচ্ছে সেগুলোকে বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করতে হবে অথবা বন্ধ করে দিতে হবে ।

৭. মূল্য সংযোজন কর : আমাদের দেশে বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর – এর ভিত্তি বেশি প্রসারিত করার সুযোগ নেই । তবে VAT সংক্রান্ত উন্নততর তদারকি এবং অডিটিং এর জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার দ্রুত বাড়াতে হবে । সার্ভিস খাতের উপর VAT আরোপ দুরূহ ব্যাপার । তবে যথাযথ পদ্ধতি নির্ণয় করে আরো সার্ভিস VAT- এর আওতায় আনতে হবে ।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে এটি স্পষ্ট যে , বাংলাদেশে কর কাঠামোর যথাযথ পরিবর্তন ও সংশোধনের মাধ্যমে এবং সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উদ্বৃত্ত বাড়ানো সম্ভব ।

[ad_2]