প্রশ্নঃ বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান অবস্থা আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান অবস্থা আলোচনা কর ।

উত্তর- ভূমিকা : বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে এখনো শক্তিশালী , আধুনিক ও সুসংগঠিত শ্রমিক সংগঠন গড়ে উঠে নি । এর কারণ বাংলাদেশ শিল্প ক্ষেত্রে তেমন অগ্রগতি অর্জন করতে পারে নি । তাছাড়া দেশের শ্রম শক্তির এক বৃহৎ অংশ সংগঠিত শ্রম বাজার ও নিয়ন্ত্রিত মজুরি ব্যবস্থার বাইরে থেকে যায় । অধিক সংখ্যক শ্রমিক সংগঠন থাকলেও তাদের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল ।

শ্রমিক সংগঠনের বর্তমান অবস্থা : নিম্নে শ্রমিক সংগঠনের দুর্বলতার কারণগুলো বর্ণনা করা হলো :

১. দারিদ্র্য : শ্রমিকরা তাদের দরিদ্রতার কারণে নিয়মিত চাঁদা পরিশোধ করতে পারে না ফলে সংগঠন আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয় ।

২. শিক্ষার অভাব : বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক অশিক্ষিত ফলে তাদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা দেয় এবং তারা সক্রিয়ভাবে কাজে অংশগ্রহণ করে না ।

৩. নেতৃত্বের অভাব : বর্তমানে শ্রমিক সংগঠনগুলোতে ফটকাবাজ , রাজনৈতিক টাউট বা সন্ত্রাসী কর্তৃক নেতৃত্ব লুণ্ঠন হওয়ায় শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষাকারী কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় না বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয় না ।

৪. অস্থায়ী পেশা : বাংলাদেশের কোন শ্রমিক কোন পেশায় দীর্ঘদিন নিয়োজিত থাকে না । ফলে সংগঠনের কর্মকাণ্ডে সমস্যার সৃষ্টি হয় ।

৫. সাংগঠনিক ত্রুটি : বাংলাদেশের অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে প্রকৃত শ্রমিকের পরিবর্তে বহিরাগত অশ্রমিক নেতারা নিয়োজিত থাকে । ফলে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে তারা তেমন ভূমিকা রাখতে পারে না ।

৬. দলীয় কোন্দল : বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে নানারকম দলীয় মতভেদ থাকায় নিজেদের মধ্যে প্রায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় । যার ফলে শ্রমিক আন্দোলন সফল হয় না ।

৭. একাধিক ও আঞ্চলিক সংগঠন : বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একাধিক ও আঞ্চলিক সংগঠন বিদ্যমান । ফলে তাদের প্রায় মতানৈক্য দেখা দেয় । এ কারণে সংগঠনগুলো তাদের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয় ।

৮. মালিকের অসহযোগিতা : শ্রমিকদের দুর্বলতা ও অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও অন্যান্য সুবিধাদি হতে বঞ্চিত করে ।

৯. রাজনৈতিক হয়রানি : বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনগুলো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন । তাই যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন অন্য দলের সমর্থিত শ্রমিক নেতা কর্মীরা সরকারের রোষানলে পড়ে নানা রূপ কষ্ট ভোগ করে ।

১০. সরকারের মনোভাব: সরকারের মনোভাব শ্রমিক সংঘের কার্যক্রম বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । ক্ষমতাসীন সরকার অনেক সময় বিশেষ শ্রমিক সংগঠনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করে । ফলে অন্যান্য শ্রমিক সংগঠন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সুবিধা লাভে বঞ্চিত হয় ।

১১. একতার অভাব : এদেশের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে একতার অভাব লক্ষ্য করা যায় । তাই শ্রমিক আন্দোলন প্রায় ব্যর্থ হয় ।

১২. সততা : বাংলাদেশের শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মধ্যে সততার অভাব লক্ষ্য করা যায় । তারা অনেক সময় নিজেদের স্বার্থ নিয়েই অধিক ব্যস্ত থাকে । যে কারণে তীব্র শ্রমিক আন্দোলনও ব্যর্থ হয়ে যায় ।

১৩. শ্রম নীতি : বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত শ্রমিকদের স্বার্থে তেমন কোন নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয় নি । ফলে শ্রমিক সংগঠনগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে শ্রমিক সংঘের সুষ্ঠু বিকাশ ঘটে নি । শ্রমিক সংঘগুলো নামে মাত্র তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখলেও শ্রমিকদের বিভিন্নমুখী দাবিদাওয়ায় আদায়ের মাধ্যমে প্রকৃত কল্যাণসাধনে এদের সাফল্য খুবই সীমিত ।

[ad_2]