প্রশ্নঃ বাংলাদেশে রাজস্বনীতির উদ্দেশ্যসমূহ কী কী ?

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে রাজস্বনীতির উদ্দেশ্যসমূহ কী কী ?

উত্তর ভূমিকা : বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে রাজস্বনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য পেরেটোর কাম্যাবস্থা অর্জন । বাজার অর্থনীতির সীমাবদ্ধতাসমূহের কারণে পেরেটোর কাম্যতা অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে । যা দূরীকরণ করতে রাজস্বনীতি সহায়ক । বাংলাদেশে রাজস্বনীতির উদ্দেশ্যসমূহ : নিম্নে বাংলাদেশের রাজস্বনীতির উদ্দেশ্যসমূহ ব্যাখ্যা করা হলো :

১. পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন : বেশিরভাগ উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে সরকার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয় , যেখানে অর্থায়ন করতে অবশ্যই সরকারি অর্থব্যবস্থার সাহায্য নিতে হয় । দেশের বেকারত্ব হ্রাস , দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রেখে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করতে পরিকল্পনা সহায়তা করে । প্রতি বছর সরকারি আয়ব্যয় উন্নয়ন পরিকল্পনা সার্থকতা বয়ে আনে ।

২. বিনিময় হার বৃদ্ধি করা : উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশের রাজস্বনীতির মুখ্য উদ্দেশ্য হলো সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা । যা জনগণের ভোগ হ্রাসের মাধ্যমে এবং সঞ্চয় বৃদ্ধির মাধ্যমে সম্ভব । রাজস্বনীতি কোন কোন খাতের বিনিয়োগকে অনুৎসাহিত করে এবং কোন কোন খাতের বিনিয়োগকে উৎসাহিত করে । বিলাসজাত দ্রব্যের ভোগ হ্রাসকরণের মাধ্যমে সরকার সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারে । সঞ্চয়কে বিনিয়োগে রূপান্তরিত করার জন্য রাজস্বনীতি সহায়ক ।

৩. নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা : বাংলাদেশের রাজস্বনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো নিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি করা , বেকারত্ব হ্রাস করা এবং অর্ধ বেকারত্ব সমস্যার সমাধান করা । কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ , মজুরিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে দেশের নিয়োগ বৃদ্ধি করা হয় । এছাড়া সরকারি সংস্থা স্থাপনের মাধ্যমে সরকার নিয়োগ বাড়াতে পারে ।

৪. সামাজিকভাবে কাম্য বিনিয়োগ উৎসাহিত করা : সামাজিকভাবে কাম্য বিনিয়োগ উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে রাজস্বনীতি ভূমিকা পালন করে । বাংলাদেশে আর্থসামাজিক অবকাঠামো অনুন্নত । সরকার উন্নয়ন বাজেটের মাধ্যমে এসব খাতে বিনিয়োগ করে অর্থনীতির ভিত্তি শক্তিশালী করতে পারে । পরিবহন , যোগাযোগ , নদী ও শক্তির উন্নয়ন , ভূমিক্ষয় রোধ , শিক্ষা , স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ।

৫. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা : বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি সমস্যা বিদ্যমান । রাজস্বনীতির মাধ্যমে প্রকৃত সম্পদের সরবরাহ করে , এরূপ মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব । কাঠামোগত অনমনীয়তা , অপূর্ণাঙ্গ বাজার ব্যবস্থা , . নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের যাগান বৃদ্ধির প্রতিবন্ধকতা , শ্রমিকদের চাপে মজুরি বৃদ্ধি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ।

৬. আয়কটনে সমতা আনা : রাজস্বনীতির দ্বারা আয়স্তর বাড়বে এবং আয়বণ্টনে পরিবর্তন আসবে । রাজস্বনীতির মাধ্যমে সমাজে আয়ের অসম বণ্টন সমস্যার সমাধান করা সম্ভব । রাজস্বনীতির মাধ্যমে বেকার সমস্যার সমাধান করে প্রগতিশীল কর আরোপ করে , দরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে আয়বণ্টনে অসমতা হ্রাস করা যায় ।

৭. সম্পদের কাম্য ব্যবহার : সম্পদের অব্যবহার এবং অপব্যবহার একটি বড় সমস্যা । সরকারি অর্থব্যবস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা । সরকার কর বা ভর্তুকি নীতি দ্বারা এ ধরনের সম্পদ ব্যবহারকে প্রভাবিত করতে পারে ।

৮. মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ : চাহিদা ও যোগানের ঋণাত্মক ব্যবধানই অনুন্নত দেশে মুদ্রাস্ফীতি সৃষ্টি করে । মুদ্রাস্ফীতির ফলে প্রায়ই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয় । সরকার মুদ্রাস্ফীতির সময় প্রগতিশীল কর , প্রত্যক্ষ কর এবং বিলাসবহুল দ্রব্যে কর আরোপ করে জনগণের চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করে যার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ।

৯. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন : বাংলাদেশ সবসময় বৈদেশিক বাণিজ্য চক্র দ্বারা প্রভাবিত হয় । এসব দেশ বিদেশি আমদানি পণ্যের উপর নির্ভরশীল এবং প্রাথমিক পণ্য নিয়ন্ত্রণ করে । বিশ্ব বাজারে যে কোন ধরনের মন্দা বা সমৃদ্ধির দ্বারা বাংলাদেশ প্রভাবিত হয় । বিশ্ব বাজারে মন্দার সময় প্রাথমিক পণ্যের চাহিদা কমে যায় এবং মূল্য কমে যায় । এতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি । এ অবস্থায় রাজস্বনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । আমদানি – রপ্তানি শুল্কনীতি প্রয়োগের মাধ্যমে অথবা পূর্বে স্থাপিত সংস্থার ব্যয় বৃদ্ধি বাড়িয়ে সরকার সহজেই এরূপ অবস্থার মোকাবিলা সঠিকভাবে করতে পারে ।

উপসংহার : উপরের আলোচনা থেকে লক্ষণীয় যে , বাংলাদেশের রাজস্বনীতির উদ্দেশ্যসমূহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন , আয় , নিয়োগ , উৎপাদন বৃদ্ধি ও মূল্য স্তর স্থিতিশীলকরণে সহায়ক ।

[ad_2]