প্রশ্নঃ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায় আলোচনা কর ।

[ad_1]

প্রশ্নঃ বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায় আলোচনা কর ।

উত্তর। ভূমিকা : বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম । ২০১০-১১ অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ৫.২৮ % এবং বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ১৯.৪৬ % । এত স্বল্প বিনিয়োগ দিয়ে কোন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় । তাই বাংলাদেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধির উপায়গুলো নিয়ে বর্ণনা করা হলো :

১. দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে উদ্ধার : বাংলাদেশের অর্থনীতি দারিদ্র্যের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ । তাই উক্ত চক্র থেকে বের হতে হবে । এজন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে । উৎপাদন বাড়লে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে ফলে চাহিদা ও সঞ্চয় বাড়বে । সঞ্চয় বাড়লে বিনিয়োগও বাড়বে ।

২. মূলধনের পর্যাপ্ততা : দেশে মূলধন পর্যাপ্ত হলে সহজেই মূলধন পাওয়া যায় । মূলধনের সহজলভ্যতা এর যোগান দামকে কমাবে । ফলে উৎপাদন খরচও কমবে । মুনাফার পরিমাণও বাড়বে । এর ফলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে ।

৩. মানব সম্পদের উন্নয়ন : অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানব সম্পদকে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয় । শিক্ষা , স্বাস্থ্য ও নারী উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন করা সম্ভব । দক্ষ মানব সম্পদ দেশের মূলধন ও প্রাকৃতিক সম্পদকে দক্ষতার সাথে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে । এতে বিনিয়োগও বাড়বে ।

৪. উদ্যোক্তা শ্ৰেণী : লাভ – লোকসানের ঝুঁকি ছাড়া ব্যবসায় বাণিজ্য সম্ভব নয় । উদ্যোক্তারাই এ ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে । উদ্যোক্তা দক্ষ হলে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা ব্যয় কম হয় । ফলে উৎপাদনের গড় খরচও কম হয় । ফলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হয় ।

৫. সঞ্চয় বৃদ্ধি : জাতীয় আয়ে আমাদের সঞ্চয়ের অবদান খুবই কম । ২০০৯-১০ অর্থবছরে সরকারি খাতে সঞ্চয়ের পরিমাণ ছিল জিডিপির মাত্র ১.৩৫ % । অথচ একটি দেশকে উন্নতির পথে নিতে হলে সঞ্চয়ের হার ১৫ % থেকে ২০ % হতে হবে । সুতরাং সঞ্চয় বাড়াতে হবে । সঞ্চয় বাড়লে বিনিয়োগও বাড়বে ।

৬. আর্থসামাজিক অবকাঠামো : দেশের আর্থসামাজিক অবকাঠামো তথা যোগাযোগ ব্যবস্থা , পরিবহন ব্যবস্থা , শিক্ষা , স্বাস্থ্য , ব্যাংক বীমা ব্যবস্থাসহ গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহে উন্নতি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে হবে । ফলে ব্যবসায়ীর প্রত্যাশা বাড়বে এবং তারা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে ।

৭. মূলধন ও মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন : বাংলাদেশের বিনিয়োগকে বাড়াতে হলে মূলধন ও মুদ্রা বাজারের উন্নয়ন ঘটাতে হবে । বিশেষ করে শেয়ার বাজারকে ঢেলে সাজাতে হবে যাতে করে শেয়ার হোল্ডাররা লাভবান হয় ও বিনিয়োগে আগ্রহী হয় । মুদ্রা বাজারের অসংগতি দূর করে একটি গৃহীত আর্থিক নীতি প্রণয়ন করতে হবে যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে ।

৮. ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি : জনগণের ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি করতে হবে । ভোগ বাড়লে বিক্রয়ের পরিমাণও বাড়বে । ফলে বাজার সম্প্রসারিত হবে এবং উৎপাদনও বাড়বে । এর ফলে বিনিয়োগকারীরা উৎপাদনের জন্য বেশি বিনিয়োগ করবে ।

৯. ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থার উন্নয়ন : দেশের ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসায় বাণিজ্যে মূলধনের পরিমাণ বাড়বে ও ঝুঁকি কমবে । ফলে বিনিয়োগকারীরা সহজেই বিনিয়োগে আগ্রহী হবে ।

১০. উন্নত প্রযুক্তি : উৎপাদন ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে । উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে উৎপাদনের মাত্রা বাড়বে এবং উৎপাদন খরচ কমবে । ফলে অধিক মুনাফার লোভে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবে ।

১১. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা : দেশের রাজনৈতিক অবস্থা দেশের ব্যবসায় বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে । বিগত বছরগুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বৈদেশিক বিনিয়োগ খুব বেশি হয় নি । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বিনিয়োগ কার্যক্রম বাড়বে এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগও বাড়বে ।

উপসংহার : উপর্যুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আমাদের দেশে বিনিয়োগ বাড়বে ।

[ad_2]