উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ঐকতান’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : ভবিষ্যতের কবির কাছে পূর্ণতার মিনতি জানিয়ে চরণ তিনটি রচিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ : বিশ শতকের সাহিত্যে যান্ত্রিকতার প্রভাব পড়ে। আধুনিক সাহিত্য নাগরিক সাহিত্যের প্রাণ। বিশুদ্ধ সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি হয়। ফলে সাহিত্য হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির রুচি ও জীবনবোধের পরিচায়ক। কিন্তু এদেশের সাহিত্য দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের জন্য না হয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিভূ হয়ে পড়েছে। এতে মাটি ও মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। নগর সভ্যতার ফলে পল্লীসাহিত্য, কবিগান ও ভাটিয়ালি বিলুপ্তির পথে। একদা এগুলো গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষদের নিরানন্দ জীবনকে আনন্দ দান করতো। এসব পল্লী উপকরণ দিনদিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রামীণ সাধারণ জীবনের সাথে বর্তমান সাহিত্যধারার ফাঁক থেকে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ জীবন সায়াহ্নে এসে এ সত্যটুকু উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তিনি নিজে সেটা পারেননি। তাই নবীন কবিদের দ্বারা সেই প্রত্যাশা পূরণে তিনি উন্মুখ। তাঁরা মাটি ও মানুষের কাছাকাছি থেকে সাহিত্য রচনা করবেন। ফলে লৌকিক সাহিত্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জীবনে আবারো আনন্দের ধারা বইয়ে দেবে।
মন্তব্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সাহিত্যে লৌকিক সাহিত্যের ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করতে পারেননি বলে ভবিষ্যতের কবিদের কাছে তা প্রত্যাশা করেছেন।