উত্তর : আলোচ্য চরণ দুটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ঐকতান’ শীর্ষক কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে। এখানে কবি তাঁর কাব্যজগতের সীমাবদ্ধতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। বিশ্বায়ত প্রতিভা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবির্ভাব। জীবন সায়াহ্নে এ. কবি দেখলেন, তিনি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ হাসি-কান্না সর্বদা ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। তিনি সর্বদা মধ্যবিত্তদের নিয়ে সাহিত্যজগৎ সৃষ্টি করেছেন। চাষি, তাঁতী, কামার ও কুমারের উপর নির্ভর করে এ জগৎ সংসার চলছে। কারণ চাষি হাল চাষ করে, তাঁতী কাপড় বোনে এবং কামার চাষের উপকরণ প্রস্তুত করে। তাদের কর্মভার বিচিত্র ও বহুদূর প্রসারিত। কিন্তু কবি সমাজের উচ্চমঞ্চে বসে আছেন। কবি মাঝে মাঝে ওদের পাড়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেছেন কিন্তু প্রবেশের সুযোগ হয়নি। নিজের হৃদয়ের সাথে দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষের হৃদয়ের যোগ ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কবি নিজেই এ ব্যর্থতার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। তাই তিনি নিজেই বলেছেন তাঁর কবিতা বিচিত্রগামী হলেও সর্বত্রগ্রামী হতে পারেনি। আপনার সৃষ্টি সম্পর্কে এমন মন্তব্য বিশ্বসাহিত্যের দরবারে বিরল । পরিশেষে একথা বলা যায় যে, কাব্য সাহিত্যে সার্থকতা লাভ করতে হলে সমাজে সকল শ্রেণির মানুষকে সাহিত্যে স্থান দিতে হবে।