প্রশাসন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা কর।

অথবা, “প্রশাসন কী একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া”- ব্যাখ্যা কর।
অথবা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে প্রশাসন ধারণাটির ব্যাখ্যা প্রদান কর।
উত্তর ভূমিকা : সামাজিক প্রশাসন একটি অংশীদারি প্রশাসন। একটি অংশীদারি প্রশাসন হিসেবে সামাজিক প্রশাসনে একজন প্রশাসক একাকী সব কাজ করে না। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নির্ধারণ, নীতি তৈরি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং কর্মসূচি তৈরি ইত্যাদিতে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত সকল ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কাজ করে। স্টাক, মক্কেল, লক্ষ্য দল, সমষ্টি দল, বোর্ড এবং নির্বাহি কমিটির সবাই এ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকে। এটা এমন একটি প্রক্রিয়া,
যেখানে সবাই অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন মাত্রায় দায়িত্ব পালন করে।
প্রশাসন একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া : প্রশাসন হল একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা ও লক্ষ্য, উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয় এবং সে উদ্দেশ্যকে মূল লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নীতিমালা নির্ধারণ, পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং মূল্যায়ন করা হয়। গণতান্ত্রিক প্রশাসন হল কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যার্জনের জন্য গণতান্ত্রিক উপায়ে পরিচালিত সমষ্টিগত কার্যাবলি। আর
প্রক্রিয়া হল কোন কার্যাবলির সমষ্টি। সুতরাং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হল গণতান্ত্রিক প্রশাসনে কার্যাবলির সমষ্টি, যার মাধ্যমে কোন এজেন্সি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকে তার অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হয়।
গণতান্ত্রিক মূল বিষয়কে আত্মস্থ করে আধুনিক সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান অধিকতর কল্যাণমুখী সেবাদানের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নিজস্ব প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার উপাদান হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। প্রশাসনিক প্রক্রিয়াকে শুধুমাত্র প্রশাসন পর্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সংশ্লিষ্ট দল, উপদল ও ব্যক্তিকে এর আওতায় আনা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য। দলীয় সদস্যদের প্রচেষ্টার সমন্বয়, যোগ্য নেতৃত্বের কার্যকর বিকাশ, প্রতিটি সদস্যকে যোগ্যতা অনুযায়ী গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য উত্তরোত্তর নির্ভুলভাবে অর্জনে সহায়তা করে। আধুনিক
সমাজকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান জনগণের জন্য নয় এবং জনগণের সাথে কাজ করার পক্ষপাতী, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ছাড়া
সম্ভব নয়। সঙ্গতকারণেই প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপাদানসমূহ হল :
১. অংশগ্রহণ : প্রতিষ্ঠানের কর্মসূচির সাথে সকলকে সম্পৃক্ত করা না গেলে লক্ষ্যার্জন সম্ভবপর নয়। এজন্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এজেন্সি অভীষ্ট জনগোষ্ঠীর সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়।
২. পরামর্শ ও যোগাযোগ : সর্বস্তরের কর্মীদেরকে নিয়ে আলাপ-আলোচনা, পরামর্শ ও যোগাযোগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
৩. জবাবদিহিতা : প্রতিটি বিভাগের জবাবদিহিতার বাধ্যবাধকতা, সকল প্রয়োজনীয় তথ্য সকলের জানার অধিকার
থাকবে। কেননা জবাবদিহিতা ছাড়া গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়।
৪. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যার্জন করতে গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোন আকাঙ্ক্ষিত পন্থা অবলম্বন করা হয় না। কাঙ্ক্ষিত পন্থায় উদ্দেশ্য সাধন এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্ভবপর হয়।
৫. সামাজিক চাহিদা : এজেন্সির চাহিদা, নীতি, উদ্দেশ্য, কর্মসূচি ইত্যাদি বিষয়াবলি সামাজিক চাহিদার প্রেক্ষিতে নির্ধারিত।
৬. নমনীয়তা : প্রয়োজন ও চাহিদার প্রেক্ষিতে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় লক্ষণীয় পরিবর্তনশীল সমাজের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নমনীয়তা বিধান করা হয়।
গণতান্ত্র িক প্রক্রিয়ায় উপরিউক্ত উপাদানগুলো ছাড়াও নিম্নোক্ত উপাদানগুলো বর্তমান। যথা :
ব্যক্তি মর্যাদার স্বীকৃতি,
খ. গঠনমূলক আলোচনা,
ঐকমত্য সৃষ্টি,
ঘ. সহযোগিতা,
ঙ. দায়িত্ব বণ্টন এবং
চ, সবার স্বার্থে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, কোন এজেন্সি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার ছাড়া এজেন্সির
লক্ষ্য উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারে না। এমনিভাবে এ মূল্যবোধগুলোর সফল প্রয়োগের ফলেই প্রশাসন তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। এভাবে সামাজিক প্রশাসন গতিশীল হয়ে ওঠে।