উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রবেশন অফিসারের ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ অপরাধ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অন্যান্য। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, বেকারত্ব, দারিদ্র্যতা, নেশাসক্ত প্রভৃতি কারণে অপরাধ ও কিশোর অপরাধ সংঘটনের মাত্রা বেড়েই চলেছে। শাস্তির মাধ্যমে অপরাধীর সংশোধন খুব কমই সম্ভব। আর সংশোধনমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে অপরাধীদের চরিত্রগত দিক থেকে পরিবর্তন করে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এ কার্যক্রমের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলো হলো প্রবেশন ব্যবস্থা। প্রবেশন অফিসারই মূলত এ প্রবেশন ব্যবস্থাকে পরিচালনা ও ফলপ্রসূ করে তোলে। তাই প্রবেশন অফিসারের ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ অপরাধ দমনে অনস্বীকার্য হয়ে পড়েছে।
প্রবেশন অফিসারের ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ ঃ সংশোধনমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়নে প্রবেশন অফিসারের ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ অতীব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশে অপরাধী ও কিশোর অপরাধীদের সঠিকভাবে সংশোধনের জন্য প্রবেশন অফিসারকে তার অর্পিত ও দায়িত্বসমূহ পালন করতে হবে। নিম্নে প্রবেশন অফিসারের কিছু
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ আলোচিত হলো :
১. অপরাধীর সমস্যা সমাধান ঃ অপরাধীদের যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে সেগুলো পুরোপুরিভাবে সমাধানের প্রবেশন অফিসার মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তিনি অপরাধীদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সমস্যা ও অন্যান্য চাহিদাসমূহ পূরণে যথাসাধ্য চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
২. পুনর্বাসন সাধন ঃ দীর্ঘসময় প্রবেশনের অধীনে থাকা আসামীদের সমাজে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে প্রবেশন অফিসার সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে কারিগরি শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণেও সহায়তা করে থাকে।
৩. গৃহ পরিদর্শন ঃ প্রবেশন অফিসারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অপরাধীদের গৃহ পরিদর্শন করা। এ লক্ষ্যে তিনি তার অবসর সময়ে মাঝে মঝে অপরাধীদের বাসায় গিয়ে যাবতীয় খোঁজখবর নেন। যা অপরাধীদের উন্নত মানসিকতা গঠনে বেশ সহায়ক।
৪. চরিত্র সংশোধনে নির্দেশনাঃ প্রবেশন অফিসাররা অপরাধীদের চরিত্র সংশোধনে যাবতীয় নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। অপরাধীদেরকে কোন ধরনের কাজ করতে হবে, আর হবে না আবার তা কিভাবে করতে হবে তার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান প্রবেশন অফিসারের অন্যতম দায়িত্ব। যাতে অপরাধী সুস্থ স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে।
৫. সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা ঃ অপরাধীদেরকে সামাজিক ভূমিকা পালনে সহায়তা করা হলো প্রবেশন অফিসারের অন্যতম দায়িত্ব। প্রাপ্ত সম্পদ ও সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার জন্য অপরাধীদের প্রবেশন অফিসার সর্বদাই উদ্বুদ্ধ করে থাকে।
৬. স্মরণ করানো ঃ প্রবেশন অফিসার অপরাধীর কল্যাণ সাধনে সর্বদা কাজ করে থাকে। তিনি প্রবেশাধীন অপরাধীদেরকে তাদের প্রবেশন সম্পর্কিত শর্তাবলি স্মরণ করিয়ে দিতে থাকেন।
৭. অপরাধীর মূল্যায়ন ঃ অপরাধীর যথার্থ মূল্যায়ন করা একজন প্রবেশন অফিসারের প্রধান দায়িত্ব। তিনি অপরাধীর যাবতীয় কার্যাবলি পুনঃপুনঃ পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন করে। আর অপরাধীদের যাবতীয় দোষ ত্রুটিগুলো সারিয়ে নিতে উপদেশ দিতে থাকে । তাঁর মূল্যায়ণের ভিত্তিতেই অপরাধীরা মুক্তি পেয়ে থাকে।
৮. জীবন বৃত্তান্ত সংরক্ষণ ঃ প্রবেশাধীন অপরাধীর জীবনবৃত্তান্ত সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণে কাজ করেন এই প্রবেশন অফিসার। তিনি অপরাধীর জীবনবৃত্তান্ত জেনেই তা সংরক্ষণে উদ্যত হন। তাই অপরাধীর সংশোধনমূলক কার্যক্রমে প্রবেশন অফিসার গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য প্রদান করতে পারে।
৯. রিপোর্ট পেশ করা ঃ প্রবেশন অফিসার আদালতে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত, পারিবারিক, আর্থ- মনো-সামাজিক, শিক্ষা ও কর্মস্থল প্রভৃতি যাবতীয় বিষয়ের আলোকে পূর্ণাঙ
্গ রিপোর্ট তৈরি করেন এবং তা যথা নিয়মে উত্থাপন করেন। যা অপরাধীদেরকে প্রবেশনে দিতে ভূমিকা রাখে।
১০. অনুসন্ধান পরিচালনা ঃ প্রবেশন অফিসারের নির্দেশে অধীনস্থ কর্মকর্তাগণ অপরাধীদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে
জানতে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান পরিচালনা করে। এই অনুসন্ধানই অপরাধীদের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
১১. খাপ খাওয়ানো ঃ অপরাধীরা কারা ভোগের পরিবর্তনের ধাঁচে পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই পরবর্তীতে বাসায় ফিরে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে থাকে তারা। এমনকি কর্মস্থলের সাথে সংযোগ রক্ষাও করতে পারে না। প্রবেশন অফিসার অপরাধীদের এহেন পরিস্থিতির সাথে স্বাভাবিকভাবে খাপ খাইয়ে চলতে অপরাধীদের বেশ সাহায্য করে থাকে।
১২. আদালতে ফেরত পাঠানো ঃ অপরাধীদের শর্ত ভঙ্গ সাপেক্ষে আদালতে ফেরত পাঠানো প্রবেশন অফিসারদের অন্যতম দায়িত্ব। যখনই প্রবেশাধীন অপরাধীরা চারিত্রিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়, অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে ও
আইন অমান্য করতে অর্থাৎ শর্তের বরখেলাপ করে তখনই প্রবেশন অফিসার তাদেরকে আলাদাভাবে সোপর্দ করে।
১৩. কর্মের ব্যবস্থা ঃ প্রবেশাধীন অপরাধীরা সাধারণত কর্মচ্যুত হয়ে পড়ে। কর্মের উপযোগী হতে প্রবেশন অফিসার তাদেরকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দানের ও ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করে থাকে। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে অপরাধীরা কোনোরূপ অপরাধে উদ্বুদ্ধ হতে পারে না।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, অপরাধীদের চরিত্রগত পরিবর্তন ও সুষ্ঠু পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রত্যেক প্রবেশন অফিসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের দায়িত্বসমূহ যদি তারা যথাযথভাবে পালনে সক্ষম হয়, তাহলে বাংলাদেশের কিশোর অপরাধী ও দাগী অপরাধীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কমে যাবে। ফলশ্রুতিতে কারা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে পরোক্ষভাবে সহায়তা ও করা যাবে তাই, বাংলাদেশে সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অন্যতম অঙ্গ প্রবেশন ব্যবস্থায় প্রবেশন অফিসারের ভূমিকা ও দায়িত্বসমূহ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়।