প্রবেশনের শর্তগুলো কি কি? প্রবেশন কর্মকর্তার কর্মকৌশল সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, প্রবেশনের উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধর। প্রবেশন কর্মকর্তার কর্মকৌশল সম্পর্কে বিশ্লেষণ কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
“প্রবেশন হচ্ছে আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তির চরিত্র সংশোধনের এমন একটি ব্যবস্থা যেক্ষেত্রে আদালতের শর্তানুযায়ী একজন প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধান অপরাধীকে তার নিজ সমাজে জীবনযাপনের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সংশোধনের প্রচেষ্টা চালানো হয়।”
প্রবেশনের শর্ত : প্রবেশন অফিসার বা সমাজকর্মী একজন ব্যক্তি আর্থসামাজিক, পারিবারিক, মানসিক ইত্যাদি অবস্থা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রবেশন মঞ্জুর করতে পারেন। এক্ষেত্রে সব ধরনের অপরাধী প্রবেশনের যোগ্য নয়।প্রবেশন মঞ্জুরের ক্ষেত্রে ব্যক্তির অপরাধপূর্ব আচরণ, বর্তমান মনোভাব, সামাজিক দিক ইত্যাদি বিবেচনা করা হয়। প্রবেশন মঞ্জুর অবশ্য বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্ত।
নিম্নে প্রবেশনের শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো :
১. ভবিষ্যতে অপরাধ না করার অঙ্গীকার,
২. আদালতের অনুমতি ছাড়া পেশা ও বাসস্থান পরিবর্তন না করা,
৩. আদালতে নিয়মিত নির্দিষ্ট তারিখে হাজির হওয়া,
৪. প্রবেশন অফিসারের সাথে নিয়মিত সাক্ষাৎ করা,
৫. সকলের সাথে সদাচরণ করা,
৬. প্রবেশন অফিসারের নির্দেশাবলি মেনে চলা,
৭. আদালত কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশমালা মেনে চলা।
প্রবেশন কর্মকর্তার কর্মকৌশল : আদালত কর্তৃক নির্ধারিত প্রবেশন কর্মকর্তার মূল দায়িত্ব হচ্ছে প্রবেশনাধীন অপরাধীকে তার চারিত্রিক সংশোধন আনয়নে এবং সামাজিক পুনর্বাসনে সাহায্য করা। এ কাজটি করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন কৌশলের সাহায্য নিতে পারেন। David Dressler তাঁর ‘Practice and Theory of Probation and Parole’ নামক গ্রন্থে প্রবেশন কর্মকর্তার কর্ম কৌশলগুলোকে চার ভাগে বিভক্ত করেছেন। এগুলো হচ্ছে :
১. বস্তুগত সাহায্য কৌশল (Material aid techniques),
২. প্রশাসনিক কৌশল (Executive techniques),
৩. তত্ত্বাবধায়ন কৌশল (Guidance techniques),
৪. পরামর্শদান কৌশল (Counselling techniques)।
১. বস্তুগত সাহায্য কৌশল : প্রবেশন কর্মকর্তা যদি মনে করেন যে অপরাধী ব্যক্তিটি কোন আর্থিক সাহায্য পেলে সে একটি সৎ উপার্জনের পথ বেছে নেবে যা তার জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করবে এবং সৎভাবে কর্মব্যস্ত জীবনে অভ্যস্ত হতে সাহায্য করবে, তাহলে তিনি প্রবেশন কর্মসূচির আওতায় অপরাধীকে আর্থিক সাহায্যের জন্য সুপারিশ করতে পারেন।চাকরিচ্যুত কোন শ্রমিক যদি অপরাধে লিপ্ত হয়ে অভিযুক্ত হয়, তাহলে তাকে প্রবেশনে রাখার পর যদি প্রবেশন কর্মকর্তা লক্ষ করেন যে তার হারানো চাকরি পুনরায় ফিরে পেলে সে আগের ন্যায় সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হবে, তাহলে তাকে প্রবেশন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট কারখানা অথবা অন্যত্র কোন চাকরি প্রদান করার ব্যবস্থা নিতে পারেন।
২. প্রশাসনিক কৌশল : প্রবেশন কর্মকর্তা যদি দেখেন যে, কোন বিশেষ অপরাধীকে এমন সাহায্য করার প্রয়োজন যা প্রবেশন কর্মসূচির সম্পদ এবং সুযোগ দ্বারা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে তিনি সমাজের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে অপরাধীকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, অপরাধী যদি কোন আইনগত সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করে তাহলে তাকে সমাজে কোন আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে।
৩. তত্ত্বাবধান কৌশল : যদি কোন জটিল মনস্তাত্ত্বিক কৌশল প্রয়োজন না থাকে সেক্ষেত্রে কোন উপদেশ বা সাহায্য
সহানুভূতি প্রবেশন কর্মকর্তা নিজেই অপরাধীকে দেখাতে পারেন। এ অবস্থায় উপদেশ বা তত্ত্বাবধানের কাজটি হবে প্রত্যক্ষ। তবে লক্ষণীয় যে, এক্ষেত্রে অপরাধীকে কোন প্রত্যক্ষ পদ্ধতিতে বস্তুগত সাহায্য প্রদান করা হয় না। তবে প্রবেশন কর্মকর্তার উপদেশ হয়তোবা অপরাধীর পারিবারিক আয়-ব্যয়ের মধ্যে সংগত ি রেখে একটি যুক্তিসঙ্গত বাজেট প্রণয়নে সাহায্য করতে পারেন অথবা অপরাধীর জন্য কোন ব্যবস্থা উপযুক্ত হবে কি না তার সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখতে সাহায্য করতে পারেন।
৪. পরামর্শদান কৌশল : পরামর্শদান কৌশলের ক্ষেত্রে প্রবেশন কর্মকর্তাকে ব্যাপক মনস্তাত্ত্বিক দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এক্ষেত্রে তিনি অপরাধীর মনোভাব, আবেগ, অনুভূতি, উদ্দেশ্য ও বিশ্বাস সম্পর্কে নিবিড়ভাবে জ্ঞান অর্জন করবেন এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে অপরাধীর সমস্যাগুলোকে বিচারবিশ্লেষণ করে তার মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবেন।বস্তুত প্রবেশন কর্মকর্তা আন্তরিক পরামর্শ দানের মাধ্যমে অপরাধীর যদি দাম্পত্য জীবনে খাপখাইয়ে চলতে অপারগ হয় এবং তার ফলে যদি সে আবেগতাড়িত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণে অভ্যস্ত হয়, তাহলে প্রবেশন কর্মকর্তা তাকে নিবিড়ভাবে আন্তরিক পরামর্শ প্রদান করে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারেন। এ পরামর্শদান কৌশল শুধুমাত্র প্রবেশনারের জন্য নয়, তার মাতা-পিতা ও পরিবার পরিজনের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় পরিবার পরিজনদের অবহেলা, অতিশাসন ও শৃঙ্খলার অভাব শিশু-কিশোরদের উচ্ছৃঙ্খল, দুর্বার ও অপরাধী করে তোলে। তাই সংশ্লিষ্ট প্রবেশনারের সংশোধন প্রক্রিয়ায় তাদের নিজেদের সংশোধন, ভালো ব্যবহার ও সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।
উপসংহার : উপযুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, কিশোরদের বিচারব্যবস্থা জোরদার করতে হবে এবং এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ; যেমন- আদালত, পুলিশ, আইনজ্ঞ, প্রবেশন অফিসার এবং এমনকি অভিভাবকদেরকেও এ বিষয়ে বিশেষভাবে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/