অথবা, এসব চাহিদাসমূহ পূরণ না হওয়ার ফলে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে?
আলোচনা কর।
অথবা, প্রবীণদের চাহিদাসমূহ পূরণ না হলে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা বর্ণনা কর।
অথবা, প্রবীণদের চাহিদা পূরণ না হলে কী সমস্যা হতে পারে বলে তুমি মনে কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : মানুষের জীবনের একটি স্তর হল বার্ধক্য বা প্রবীণতা।মানবজীবনের বিকাশ পর্যায়ের সর্বশেষ স্তর হিসেবে রয়েছে বার্ধক্য বা প্রবীণ। আজকের শিশু আগামী দিনের প্রবীণ। তাই অন্যান্য সম্প্রদায়ের মত প্রবীণ সম্প্রদায়কেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। অনেক সময়ই দেশ ও জাতির সংকটকালীন মুহূর্তে প্রবীণরা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে উপযুক্ত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে দেশ ও জাতিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে।
প্রবীণদের চাহিদা পূরণ না হওয়ার ফলে সৃষ্ট সমস্যা : প্রবীণদের চাহিদা যদি সঠিকভাবে পূরণ করা না হয় তবে কতকগুলো সমস্যা সৃষ্টি হয় সেগুলো হল :
১. দৈহিক বা শারীরিক সমস্যা : প্রবীণদের শারীরিক চাহিদা ও প্রয়োজনের অপূরণজনিত অবস্থার ফলাফল হিসেবে তাদের মাঝে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তারা বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি যেমন- সর্দি, কাশি, জ্বর, বাতের ব্যথা, প্রেসার,
ডায়াবেটিক ইত্যাদি বহুবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ফলে তারা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবে তাদের ওঠা বসা, চলাফেরা বিঘ্নিত হয়।সমসাময়িককালে পৃথিবীতে বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি।
২. মানসিক সমস্যা : প্রবীণদের জন্য এটা একটা বিরাট সমস্যা। কারণ দেখা যায় পরিবারে প্রবীণদের সাথে অন্যান্য সদস্যরা খুব একটা সময় দিতে চায় না। এর জন্য কর্মব্যস্ততা যেমন দায়ী তেমনি রয়েছে প্রবীণদের প্রতি অবহেলাজনিত মানসিকতা।
৩. নিরাপত্তাহীনতা : প্রবীণ সমাজের বা শ্রেণীর চাহিদা ও প্রয়োজনের অপূরণজনিত সমস্যা হিসেবে নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পায়। কারণ সমাজে প্রবীণদের জন্য যদি উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকে তবে তারা স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তাহীনতার শিকার হন। তাদের জীবনে নেমে আসে অনিশ্চয়তা। ফলে তারা আশংকাপূর্ণ এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে সাথে নিয়ে জীবনযাপনে বাধ্য হন।
৪. কর্মহীনতা : প্রবীণদের যদি তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম যোগাড় করে দেওয়া না যায় তবে তাদের মধ্যে কর্মহীনতাজনিত সমস্যা দেখা দেয়। যাকে আমরা প্রবীণ বেকারত্ব বলতে পারি। ফলে তারা অলসভাবে অবসর সময়গুলো পার করতে বাধ্য হয় এবং এভাবে কর্মহীন অলস জীবনযাপনের ফলে তাদের মধ্যে মৃত্যুভীতিজনিত উৎকণ্ঠা এবং স্নায়ুবিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। তারা নিজেদেরকে একটি ভারসাম্যহীন অবস্থার মধ্যে আবিষ্কার করে।
৫. নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায় : প্রবীণদের কর্ম অর্থনৈতিক ও মানসিক চাহিদা যদি পূরণ করা না হয় তবে তাদের মাঝে নির্ভরশীলতাজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তারা সম্পূর্ণভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। প্রবীণদের এ ধরনের
নির্ভরশীলতা অনেক সময়ই তাদের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তাকে শিথিল করে দেয়।
৬. নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব : প্রবীণদের জন্য একটা বড় ধরনের সমস্যা হল একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতা। প্রবীণরা সাধারণত সঙ্গপ্রিয় হয়ে থাকে। তারা চায় অন্যান্যের সাথে মেলামেশা করতে, তাদের সাথে নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করতে, নিজেদের জীবনে সংঘটিত দুঃসাহসিক ঘটনা শুনতে।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার শেষে বলা যায় যে, প্রবীণরা আমাদেরই সমাজের অংশ, আমাদেরই পূর্বসূরি।আজকের সমাজে যে নবীন সেও একদিন প্রবীণে পরিণত হবে এবং আজকের সমাজে যেসব সুযোগ সুবিধা তা আমাদের পূর্বসূরি বা প্রবীণদেরই সৃষ্টি, কিন্তু বার্ধক্যের কারণে আজ তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল। সেজন্য দরকার তাদের প্রতি তথা তাদের চাহিদা ও প্রয়োজনের প্রতি সমাজের বাড়তি মনোযোগী হওয়া।