অথবা, কেন্দ্ৰীয় প্রবণতার পরিমাপ কী? কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের পদ্ধতিগুলোর বিবরণ দাও।
অথবা, কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপের সংজ্ঞা লিখ। এর পদ্ধতিসমূহ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : কোনো গণসংখ্যা নিবেশনের মধ্যে প্রতি লক্ষ করলে দেখা যায় যে, কতকগুলো রাশি বা মান বারবার সংঘটিত হচ্ছে। আবার কতকগুলো রাশি অপেক্ষাকৃত কমবার সংঘটিত হতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় রাশিগুলো বেশি থাকে বা কেন্দ্রীয় শ্রেণিগুলোর গণসংখ্যা বেশি থাকে। বারবার সংঘটিত রাশিগুলো নিবেশনের কেন্দ্রীয় স্থানে একটি ক্ষুদ্র পরিসরে পুঞ্জীভূত থাকে ।
কেন্দ্রীয় প্রবণতা : কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে কেন্দ্রের দিকে গমনের প্রবণতাকে বুঝায় রাশিমালার একটি `বণ বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি অবস্থান করতে চায়। কেন্দ্রীয় মান রাশিমালাকে নির্দিষ্ট মানদণ্ডে বিচারের মাধ্যমে রাশিমালার সাধারণ বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে। এজন্য রাশিমান এগুলোর কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি আসতে
চায় । রাশিমালার কেন্দ্রীয় মানের কাছাকাছি আসার এ প্রবণতাকে কেন্দ্ৰীয় প্রবণতা বলে ।প্রামাণ্য সংজ্ঞা : বিভিন্ন পরিসংখ্যানবিদ কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের সংজ্ঞা বিভিন্নভাবে প্রদান করেছেন। নিম্নে কয়েকজন বিশিষ্ট পরিসংখ্যানবিদ কর্তৃক কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো :
Simpson and Kafka “A measure of central tendency is a typical value around which other figures congregate, or which divides their number in half.”
Bowley, “Measures of central tendency is the statistical constants which enable us to
comprehend in a single effort the significance of the whole value.”
PD. A. Lind, W.G. Marchal & R.M. Mason এর মতে, “Measure of central tendency is a locates the center of the value.” single value that summarizes a set of data.
সুতরাং যে পরিসংখ্যানিক পরিমাপ দ্বারা কোনো কেন্দ্রীয় মানের অবস্থান নির্ণয় করা হয় তাকে কেন্দ্রীয় তথ্যসারির বা পরিমাপ নিবেশনের একটি প্রতিনিধিত্বমূলক কেন্দ্ৰীয় মান বা প্রবণতার বলে।
“কেন্দ্রীয় প্রবণতার পদ্ধতিসমূহ : কেন্দ্রীয় প্রবণতার পদ্ধতিসমূহ তিন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা :
ক. গড়, খ. মধ্যমা ও গ. প্রচুরক ।
ক. গড় : গড়কে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
১. গাণিতিক গড়, ২. জ্যামিতিক গড়, ৩. বিপরীত গড় ও ৪. দ্বিঘাত গড়।
১. গাণিতিক গড় : কোনো সমজাতীয় তথ্যসারির অন্তর্ভুক্ত মানগুলোর সমষ্টিকে মোট তথ্যসারি দ্বারা ভাগ করলে যে মান পাওয়া যায়, তাকে গাণিতিক গড় বলে। এটিকে যোজিত গড়ও বলা হয় । গাণিতিক গড়কে সাধারণত AM দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তথ্যবিশ্বের গাণিতিক গড়কে ja এবং নমুনা হতে প্রাপ্ত গড়কে স দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে।
২. জ্যামিতিক গড় : কতকগুলো অশূন্য ধনাত্মক তথ্যমালায় যতগুলো রাশি থাকে তাদের গুণফলের তততম মূলকে জ্যামিতিক গড় বলে । একে গুণোত্তর গড় বা গুণিতক গড়ও বলা হয়ে থাকে। জ্যামিতিক গড় নির্ণয়ের জন্য একটি তথ্যমালায় যতগুলো রাশি থাকে, প্রথমে তাদেরকে গুণ করে নিতে হয়। এরপর ঐ তথ্যমালার যতগুলো সংখ্যা একত্রে গুণ করা হয়, তততম মূল (root) নিলেই জ্যামিতিক গড় নির্ণয় হয়ে যায় ।
যদি কোনো তথ্যমালায় n সংখ্যক অশূন্য ধনাত্মক মান থাকে, সে তথ্যমালার জ্যামিতিক গড় হবে n সংখ্যক মানের গুণফলের n তম মূল (nth root)। সাধারণত জ্যামিতিক গড়কে GM দিয়ে প্রকাশ করা হয়ে থাকে । তথ্যমালায় যদি দুটি রাশি থাকে, তবে বর্গমূল নিলেই চলে এবং তিনটি রাশি থাকলে নিতে হয় ঘনমূল। তিনের অধিক হলেই সেগুলোর মূল বের করা কঠিন বিধায় এ অসুবিধা দূর করার জন্য Log টেবিলের সাহায্যে Log নিয়ে কাজ করতে হবে।
৩. বিপরীত গড় বা তরঙ্গ গড় : কতকগুলো অশূন্য মানবিশিষ্ট কোনো তথ্যমালার প্রত্যেকটি মানের উল্টো মানের গাণিতিক গড়ের উল্টো মানকে তরঙ্গ গড় বা বিপরীত গড় বলে। তরঙ্গ গড়কে উল্টা গড় বা উল্টন গড়ও বলা হয় কারণ মানগুলোকে উল্টিয়ে গড় নির্ণয় করে পুনরায় উল্টানো হয়। এ গড়কে সাধারণত HM দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে । কোনো তথ্যমালার n সংখ্যক অশূন্য মানগুলো যথাক্রমে x1, x2, গড় বা উল্টন গড় হবে- X হলে এদের তরঙ্গ গড় বা বিপরীত গড় উল্টন গড় হবে-
৪. দ্বিঘাত গড় : কোনো তথ্যমালার যতগুলো রাশি থাকে তাদের প্রত্যেকটি মানের বর্গের গাণিতিক গড়ের বর্গমূল নিলে যে মান পাওয়া যায় তাকে দ্বিঘাত গড় বলা হয়
খ. মধ্যমা : মধ্যমা কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি অবস্থানগত পরিমাপ । কোনো তথ্যসারি বা নিবেশনে যে মানগুলো থাকে, তাদেরকে যে মানটি সমান দুটি অংশে বিভক্ত করে তাকে মধ্যমা বলে । মধ্যমা মূলত তথ্যসারির বা নিবেশনের মধ্যম মান । মধ্যমার একাংশে থাকে ছোট মানসমূহ এবং অপরাংশে থাকে বড় মানসমূহ। তাই মধ্যমা নির্ণয়ের পূর্বে
তথ্যসারির বা নিবেশনের মানসমূহকে ঊর্ধ্বক্রম বা নিম্নক্রমে সাজিয়ে নিতে হয় । মধ্যমাকে Me দ্বারা চিহ্নিত করা হয় ।
গ. প্রচুরক : কোনো তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনে অন্তর্ভুক্ত মানসমূহের মধ্যে যে মানটি অধিকবার থাকে অর্থাৎ যে মানটি কোনো তথ্যসারি বা গণসংখ্যা নিবেশনে অধিকবার পরিলক্ষিত হয় তাকে প্রচুরক বলে। প্রচুরকের উৎপত্তি ফরাসি শব্দ “La Mode” হতে, যার মূল অর্থ ‘Fashion’. এ Fashion পরিসংখ্যানে মূলত যে মানটি অধিকবার সংগঠিত হয়, তাকেই নির্দেশ করে থাকে । প্রচুরককে Mo দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গণসংখ্যার কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের ক্ষেত্রে গড়, মধ্যক ও প্রচুরক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । গড়কে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক হিসেবে চিহ্নিত করা যায় ।