অথবা, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি মান্য করার কারণ উল্লেখ কর।
অথবা, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি মান্য করা হয় কেন?
অথবা, ব্রিটেনে প্রথাগত বিধানসমূহের পিছনে কিসের অনুমোদন রয়েছে? আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা: প্রথাগত বিধান বা শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিসমূহ ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু প্রথাগত বিধান কোন আইন নয়। এগুলোর পিছনে আইনের সমর্থন নেই এবং আদালতগ্রাহ্য নয়। তারপরও ব্রিটেনে কঠোরভাবে প্রথাগত বিধান মেনে চলা হয়। এর পিছনে বিভিন্ন কারণ নিহিত রয়েছে।
প্রথা মান্য করার কারণ: প্রথা বা শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি কেন মান্য করা হয় নিম্নে তা উপস্থাপন করা হল:
১. জনমতের চাপ: ব্রিটেনের শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলো মেনে চলার মূল কারণ হল জনমতের চাপ। এগুলোর পিছনে ব্রিটেনের জনগণের সুদৃঢ় সমর্থন সবসময় বর্তমান। এ জনসমর্থনই হল প্রথা মান্য করার মূল চালিকাশক্তি। কেননা জনসমর্থন হরানোর ভয়ে কোন দলীয় সরকার এগুলো অমান্য করতে পারে না।
২. ভারসাম্য রক্ষা: প্রথা ব্রিটেনের শাসনব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।প্রথাকে অগ্রাহ্য করলে ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থা ভারসাম্যহীনতায় ভুগবে। এর ফলে ব্রিটেনের সরকারি কাঠামো গতিহীন হয়ে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিবে।
৩. ব্রিটিশ জাতির রক্ষণশীলতা ও ঐতিহ্যপ্রিয়তা: শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলো ব্রিটেনের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস ও গৌরবময় ঐহিত্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ব্রিটিশ প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণশীল মনোভাবাপন্ন হওয়ায় রীতিনীতিগুলোকে মান্য করার মধ্য দিয়ে তারা অতীত গৌরবকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ অনুভব করে।
৪. শাসনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা সংরক্ষণ: অতীতের সাথে বর্তমানের এবং বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের যোগসূত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রথা অনবদ্য ভূমিকা পালন করে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। তাই প্রথা মান্য করা হয়।
৫. রাজনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ: সুদীর্ঘ কাল ধরে গড়ে উঠা শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির পশ্চাতে জনগণের সুদৃঢ় সমর্থন থাকায় কেউ এগুলোকে উপেক্ষা করার সাহস পায় না। যদিও এগুলো অমান্য করায় কোন শাস্তির ভয় নেই, তবুও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকে।
৬. নদনীয় ও গতিশীল সংবিধান প্রতিষ্ঠা: প্রথাগত বিধান সংবিধানকে নমনীয় ও গতিশীল করে। আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হয় না এবং সম্ভব ও নয়। এক্ষেত্রে প্রথার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রথার উপযোগিতা অপরিসীম। এর বাস্তব মূল্য ও অনেক। প্রথা সংবিধান ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানকে সচল রেখেছে। এজন্য সরকার ও জনগণ সবাই প্রথাগত বিধান মেনে চলে।