প্রত্যয় কাকে বলে

প্রত্যয় কী?
অথবা, ধারণা কাকে বলে?,
অথবা, প্রত্যয় কাকে বলে?
অথবা, প্রত্যয় বলতে কী বুঝ?
অথবা, প্রত্যয়ের ধারণা কী?
প্রত্যয়ের ধারণা বলতে কী বুঝ?


উত্তরা ভূমিকা : আইনস্টাইন বলেছিলেন যে, বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হলো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতাসমূহের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারা এবং এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যত কম সংখ্যক সম্ভব ধারণা ব্যবহার করা। কোনো ঘটনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য হোক, কোন জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য হোক অথবা কোনো তথ্যের বিবরণই হোক যখনই বিমূর্তভাবে তা করতে হলে ধারণার ব্যবহার করা হয়। তাই সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রে ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাা পালন করে।


ধারণা বা প্রত্যয় : সাধারণভাবে ধারণা হলো কতকগুলো পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন ঘটনা, বস্তুত যা অভিজ্ঞতার বিমূর্ত প্রতিজৎ। এতে যৌত্তিক ও প্রায়োগিক দুভাবেই সংজ্ঞায়িত করা যায়। প্রায়োগিক সংজ্ঞায় একটি ধারণাকে কি প্রক্রিয়ায় পরিমাপণ করা হবে বা কি পদ্ধতি অন্য ধারণা থেকে পৃথক করা হবে, তা নির্দেশ করা হয়। এ ধরনের
সংজ্ঞা বিজ্ঞানীকে গবেষণার গ্রহণযোগ্য তথ্য সরবরাহে সাহায্য করে। যৌক্তিক সংজ্ঞায় বলা হয় ধারণার একটি সাধারণ অর্থ প্রকাশ করা হয় এবং বিজ্ঞানী কোন ধারণার অন্তর্গত বৈশিষ্ট্য ও প্রক্রিয়াকে উল্লেখ করে।


গুড এবং হ্যাট (Goode and Hatt) প্রত্যয়ের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য, “A concept like a fact, is an abstraction, not a phenomenon. It takes its meaning from the thought framework within which it is placed.” অর্থাৎ, প্রত্যয় হচ্ছে ঘটনার মতো বিমূর্ত, কোনো প্রপঞ্চ নয়। অবস্থানযুক্ত একটি চিন্তার কাঠামো
থেকে এর অর্থ নির্ণীত হয় ।


পি. ভি. ইয়ং ‘প্রত্যয়’ সম্পর্কে বলেছেন, “Each new class of data, isolated from the other classes on the basis of definite characteristics, is a given, a name, a label-in short- a concept. A concept is in reality a definition in shorthand, of a class or group of facts, Truancy’, ‘Aggression’, ‘Frustration’, ‘Attitude’, ‘Person’, ‘Anxey’, are illustrations of concepts into which are condensed a number of events or phenomena under one general heading.” অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে যখন একটি নতুন উপাত্ত শ্রেণি অন্যান্য শ্রেণি থেকে পৃথক হয়ে নির্দিষ্ট একটি নাম বা লেবেল পরিগ্রহ করে তখন তাকে প্রত্যয় হিসেবে চিহ্নিত
করা যেতে পারে ৷ প্রত্যয় হলো বাস্তব ঘটনা, শ্রেণি, বা গোষ্ঠীর একটি সুসংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা। ‘পলায়নবৃত্তি’, ‘আগ্রাসন’, ‘হতাশা’, ‘মনোভাব’, ব্যক্তি, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি প্রত্যয়ের উদাহরণ বা একাধিক ঘটনা বা প্রপঞ্চের ঘনীভূত শিরোনাম মাত্র ।

এফ. এন. কার্লিংগার (F. N. Kerlinger) তাঁর ‘Foundations of Behavioural Research’ গ্রন্থে বলেন, “A concept expresses an abstraction formed by generalization from particulars.” অর্থাৎ, প্রত্যয় হলো সাধারণীকরণের মাধ্যমে কোনো বিশেষকে বিমূর্তায়নে প্রকাশ করা ।

C. Seltiz এবং অন্যরা প্রত্যয় ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে গিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন- “Any group of investigations, in order to organize their data so that they may perceive relationship among them must use of concepts.” অর্থাৎ, যে কোনো অনুসন্ধানকারী গোষ্ঠী যখন তাদের উপাত্তসমূহকে সংগঠিত করতে চায়
তখন তাদেরকে উপাত্তসমূহের মধ্যে একটি সম্পর্কের বিন্যাস স্থাপন করা জরুরি বিধায় তাদেরকে প্রত্যয় ব্যবহার করতে হয়।

ন্যাকমিয়াস এবং ন্যাকমিয়াস (Nachmias and Nachmias) এর মতে, “A concept is an abstraction-a symbol- a representation of an object or one of its properties, or of a behavioural phenomena.” [ P. 26. Research Methods in the Social Sciences Sth edition, London, 1997] অর্থাৎ, প্রত্যয় হচ্ছে কোনো
বস্তুর বা এর কোনো গুণাবলি বা আচরণগত প্রপঞ্চের একটি বিমূর্ত প্রতীক-কল্পিত চিত্র ।

D. C. Maclelland-এর মতে, “নানাবিধ ঘটনার সুসংক্ষিপ্ত একটি উপস্থাপন। এর উদ্দেশ্য হলো অনেকগুলো ঘটনাকে একটি সাধারণ শিরোনামের আওতায় এনে সংক্ষিপ্ত রূপদানের মাধ্যমে চিন্তাকে সহজ করা।”

উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ধারণা বা প্রত্যয়ের সাহায্য ছাড়া কোন গবেষক বা বিজ্ঞানী তার কাজ পরিচালনা করতে পারে না। সমাজ গবেষকগণ প্রত্যয় বা ধারণাকে বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে মনে করেন। বস্তুত ঘটনার উপর অনুসন্ধান ও পর্যবেক্ষণের সংক্ষিপ্তকরণের উপর ভিত্তি করে প্রত্যয় গড়ে উঠে।