প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ আলোচনা কর।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা, প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির সুফল আলোচনা কর।
অথবা, প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির ইতিবাচক ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তরঃ ভূমিকা : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নির্বাচন পদ্ধতির গুরুত্ব অত্যধিক। আর এ নির্বাচন পদ্ধতি প্রত্যক্ষ হবে না পরোক্ষ হবে তা নিয়ে দীর্ঘতর আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটদান পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাধারণত দু’টি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যথা: প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পরোক্ষ নির্বাচন।

প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির গুণাবলি বা সুবিধাসমূহ : প্রত্যক্ষ নির্বাচনের অনেকগুলো সুবিধা রয়েছে।নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :

১. জনমতের প্রাধান্য : প্রত্যক্ষ নির্বাচনে জনমতের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনমতের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে। তাই নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ কোন সময় জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না। কেননা জনমতকে উপেক্ষা করলে কোন সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না।

২. প্রত্যক্ষ বাছাই : প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থায় জনগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় বলে সরাসরি প্রতিনিধি – নির্বাচন করে থাকে। এ পদ্ধতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনী কোন সংস্থা থাকে না, ফলে নির্বাচকমণ্ডলী প্রত্যক্ষভাবে যোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করার সুযোগ পায়।

৩. দুর্নীতির সম্ভাবনা কম : প্রত্যক্ষ নির্বাচনে দুর্নীতির সম্ভাবনা খুব একটা থাকে না। এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রার্থী বা দলের পক্ষে বিপুল সংখ্যক নির্বাচনকে অসৎ উপায় অবলম্বন বা প্রতারণা করে প্রভাবিত করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সুতরাং এ পদ্ধতিতে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হতে পারে।

৪. সরকারের ভিত্তি সুদৃঢ় হয় : সরকারের ভিত্তি সুদৃঢ়করণে নির্বাচন প্রত্যক্ষ হওয়া অত্যাবশ্যক। এতে জনগণ অতি সহজেই নির্বাচিত সরকারকে আপনভাবে এবং সে অনুসারে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে। সরকারের ব্যর্থতাকে নিজেদের ব্যর্থতা বলে মনে করে তাই সরকারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।

৫. জনসাধারণকে সচেতন করে: জনসাধারণ প্রত্যক্ষ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, তাই রাষ্ট্রায় কার্যাবলি সম্পর্কে সচেতন এবং সমস্যা সম্পর্কে অবহিত থাকে। এটা তাদের নাগরিক হিসেবে দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করে। প্রত্যক্ষ নির্বাচিত সরকার সরাসরি জনসাধারণের সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকায় জনকল্যাণকর কার্যাবলি উপেক্ষা করতে পারে না।

৬. রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তার : প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতি জনগণের রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি ও রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তারের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক। এতে জনগণকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি, আদর্শ ও কর্মসূচির বিচার বিশ্লেষণ ও অনুশীলন করতে হয় এবং সমকালীন সমস্যাদি ও তার সমাধান সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে হয়। এতে জনগণের রাজনৈতিক শিক্ষার উন্মেষ ঘটে

৭. সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ : প্রত্যক্ষ নির্বাচনে জনসাধারণ বা নির্বাচকমণ্ডলী ও জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সৌহার্দ্যতা এবং আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান থাকে এবং সুনিবিড় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। জনগণ এবং সরকারের মধ্যে বিরাজমান সুসম্পর্ক গণতন্ত্রের ভিত্তিকে মজবুত করে তোলে।

৮. সুশাসন: প্রত্যক্ষ নির্বাচনে সুশাসন কায়েম করা সম্ভব, কেননা এতে জনগণ সরাসরি ভোট প্রদানের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়। আর যোগ্য প্রার্থীই কেবল দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

৯. নির্বাচকমণ্ডলী ও নির্বাচিতদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক : প্রত্যক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থার প্রধান গুণ হলো নির্বাচিতদের নির্বাচকমণ্ডলী ও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এতে আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয় যা শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক। এ পদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি জনস্বার্থ বিরোধী কোন কাজ করার সাহস পায় না। ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

১০. অধিকমাত্রায় গণতান্ত্রিক ও দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়: প্রত্যক্ষ নির্বাচন পদ্ধতিতে জনগণ সরাসরিভাবে তাদের পছন্দমতো যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পারে। ফলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিরাজমান থাকে। এ পদ্ধতিতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভোট প্রদানের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে, যার ফলে জনমনে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়।

উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি, উপরের আলোচনায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের যেসব সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তাতে প্রমাণিত হয় নির্বাচন ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। কেননা একমাত্র প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বাছাই করতে পারে এবং নির্বাচিত প্রার্থিগণ জনগণের স্বার্থে কাজ করে।