প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর।

অথবা, প্রতিষ্ঠানের প্রকৃতি বা স্বরূপ আলোচনা কর।
উত্তরঃ ভূমিকা :
মানুষের প্রয়োজন মিটানোর তাগিদেই প্রতিষ্ঠান তথা সামাজিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভব হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অত্যাবশ্যক এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপ, রীতিনীতি বা প্রথা, যা সামাজিক লোকরীতি ও লোকাচারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সমাজে মানুষের ব্যবহার, আচরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এ রীতি বা প্রথাগুলোর উদ্ভব হয় এবং এগুলো যখন ধীরে ধীরে সুসংঘবদ্ধ হয়ে উঠে তখনই সামাজিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য : মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সমাজবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে সেসব প্রতিষ্ঠান যে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হওয়া স্বাভাবিক, তা কোনক্রমেই অস্বীকার করা যায় না। নিম্নে সংক্ষেপে প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্যসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. সামাজিক আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণে : সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য সব মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. যৌথ কার্যক্রম : সমাজের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবর্গ প্রয়োজনভিত্তিক যৌথ কার্যকলাপ সম্পাদন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো এসব যৌথ কার্যকলাপের উপর নির্ভরশীল।
৩. প্রাথমিক প্রয়োজন : সমাজের সদস্যদের প্রাথমিক প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।
৪. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ : সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যেসব উপায় বিদ্যমান থাকে সেগুলোর সাথে তুলনামূলক বিচারে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়িত্ব বেশি।
৫. সামাজিক সমস্যা সমাধানে : সমাজজীবনে মানুষ একেবারে বিপদমুক্ত নয়। সমাজস্থ ব্যক্তিবর্গ নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় প্রতিষ্ঠান মানুষের সমাজজীবনের একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে।
৬. শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে : সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সব প্রতিষ্ঠানেই কিছু নিয়মকানুন বর্তমান থাকে।
এসব নিয়মকানুন সমাজের সদস্যদের মেনে চলতে হয়।
৭. সামাজিক বিধিবিধান প্রণয়নে : সামাজিক নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে যেমন প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব বর্তমান থাকে, তেমনি আবার তার সাথে কতকগুলো বিধিবিধানেরও ব্যবস্থা বর্তমান থাকে। বস্তুত এগুলো গড়ে উঠে প্রচলিত প্রথা ও মতবাদের উপর ভিত্তি করে।
৮. প্রতীকের প্রকৃত অর্থ বুঝতে : সমাজে কতকগুলো প্রতীকী বিষয় সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে। এসব প্রতীকী বিষয় যেমন বাস্তব হতে পারে, তেমনি আবার অবাস্তবও হতে পারে।
৯. সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে : সমাজের সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠান কাজ করে। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই মানুষ একে অপরের সান্নিধ্যে এসে সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম হয়।
১০. সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যঅর্জন : মূলত প্রতিষ্ঠান মানব সম্পর্কের কাঠামো, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানোর উপায়, সুসংঘবদ্ধ সামাজিক অভ্যাস এবং দলগত কর্মের প্রতিষ্ঠিত রূপবিশেষ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে সমাজ গঠনের মূলে রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। বস্তুত সমাজজীবনে সামাজিক প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। কারণ সমাজের বৈচিত্র্য ও জটিলতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। তাছাড়া সমাজের মানুষ তাদের সহজাত প্রয়োজনসমূহ সামাজিক প্রতিষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই মিটিয়ে থাকে।