প্রতিযোগিতা কাকে বলে?

অথবা, প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, প্রতিযোগিতার বলতে কী বুঝ?
অথবা, প্রতিযোগিতার ব্যাখ্যা প্রদান কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : প্রতিযোগিতা হলো সামাজিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি মৌলিক রূপ। কোন একটি বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের ক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে প্রতিযোগিতার সূত্রপাত হতে পারে। কেননা মানুষের চাহিদার তুলনায় তার যোগান সীমিত হলেই সমাজে এই প্রতিযোগিতা জাগতিক দ্রব্য, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা, খ্যাতি প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে
দেখা দেয়।
প্রতিযোগিতা : অনেক সমাজবিজ্ঞানী প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন। প্রতিযোগিতার সাধারণ সমাজতাত্ত্বিক সংজ্ঞা হলো- যখন একাধিক ব্যক্তি একটি বিশেষ লক্ষ্যে উপনীত হবার জন্য বা একই উদ্দেশ্য সাধনে একই সময়ে তৎপর হবার বিশেষ অবস্থা। কোন কোন সমাজবিজ্ঞানী মনে করেন, যখন একাধিক ব্যক্তি বা দল কাম্য লক্ষ্যের জন্য তৎপর হয়, তখনই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। সমাজবিজ্ঞানী পার্ক ও বার্জেস (Park & Burges) সামাজিক সংযোগ নিরপেক্ষ পারস্পরিক ক্রিয়াকে প্রতিযোগিতা বলে উল্লেখ করেন। (Competition is an interaction without social contact.) সমাজবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড (Sutherland) প্রতিযোগিতার সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেন যে, “ব্যক্তি ও ব্যক্তির
মধ্যে গোষ্ঠী ও গোষ্ঠীর মধ্যে কোন একটি জিনিসের সীমিত সরবরাহের দরুন যে স্বতঃস্ফূর্ত এবং অবিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ দেখা
দেয় এবং যা নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, তাই হলো প্রতিযোগিতা।” আবার সমাজবিজ্ঞানী ফেয়ারচাইল্ড (Fairchild) এবং বোগারডাস (Bogardas) বলেন, “কোন একটি জিনিসের যদি প্রাচুর্যের অভাববোধ পরিলক্ষিত হয় তখন যদি কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ সে বস্তুটিকে লাভ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করে তখন তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে উঠে।”
সমাজবিজ্ঞানী পিসি হর্টন ও সিএল হাস্ট এর ভাষায়, “Competition is the process of seeking to monopolize a reward by surpassing all rivals.” সমাজবিজ্ঞানী বোগার্ডাস এর মতে, “Competition is a contest to obtain something which does not exist in a quality sufficient to meet the demand.
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলো থেকে আমরা প্রতিযোগিতার স্বরূপ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা করতে পারি; যেমন— প্রতিযোগিতা হলো এক ধরনের বিরোধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা। প্রতিযোগিতার একটি প্রকাশ প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, আর একটি প্রকাশ অধিক পরিশ্রমে। আবার কয়েক রকম প্রতিযোগিতা আছে যার মধ্যে দ্বন্দ্বের কোন ভাব নেই; যেমন- বন্ধুভাবাপন্ন
হয়ে শক্তি লড়াই পরীক্ষা করা (কুস্তি, পাঞ্জা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি)। প্রতিযোগিতাকে নৈর্ব্যক্তিক বলা চলে; কেননা প্রতিযোগিতার দৃষ্টি থাকে লক্ষ্যের দিকে, ব্যক্তির দিকে নয়। যখন প্রতিযোগিতা নৈর্ব্যক্তিক থাকে না তখনই দ্ন্দ্বের উদ্ভব হয়।