প্রতিক্রিয়ার প্রকারভেদ সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, প্রতিক্রিয়ার শ্রেণিবিভাগ কর।
অথবা, প্রতিক্রিয়া কত প্রকার ও কী কী?
অথবা, প্রতিক্রিয়ার শ্রেণিবিন্যাস কর।
অথবা, প্রতিক্রিয়ার শ্রেনিবিভাগ বা প্রকারভেদ লিখ।
অথবা, প্রতিক্রিয়ার শ্রেণিবিভাজন কর।
উত্তর।।ভূমিকা : আচরণের শ্রেণিবিভাগের সমস্যাটি সমাধান করার জন্য কোন কোন মনোবিজ্ঞানী একটি নতুন সমাধান দিয়েছেন। তারা আচরণকে সরল ও জটিল এই দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তারা বলেন যে আচরণ মাত্রই কোন
না কোন উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া। উদ্দীপকের সাথে যখন কোন প্রতিক্রিয়ার সম্বন্ধ হয় তখন তা অপেক্ষাকৃত স্থায়ী হয়।এ ধরনের সংযোগই উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ। যেমন- গুলির শব্দ শুনে দৌড়ে পালানো। এটি অভিজ্ঞতালব্ধ। আমাদের অনেক শিক্ষণই উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া সংযোগ।
প্রতিক্রিয়া প্রকারভেদ : উদ্দীপক প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন করে। প্রতিক্রিয়া তিন প্রকার। যথা: ১. সংবেদন, ২. পেশীর বিচলন ও ৩. গ্রন্থির রসক্ষরণ।
উদাহরণের সাহায্যে এ তিন শ্রেণির প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। যেমন- একটি তীব্র আলোক চক্ষুর বিভিন্ন অংশগুলো অতিক্রম করে অক্ষিপটে প্রতিফলিত হলো। উহাতে সন্নিহিত দর্শন নার্ভ উদ্দীপিত হলো তারপর ঐ উদ্দীপনা
নার্ভ প্রবাহরূপে মস্তিষ্কের দর্শনকেন্দ্রে পৌছল। সঙ্গে সঙ্গে আলোক সংবেদন রূপ প্রতিক্রিয়া ঘটলো। উত্তেজনা বা উদ্দীপকটি সংবেদীয় নার্ভের সন্নিহিত চেষ্টায় নার্ভকে উদ্দীপিত করল। ফলে চক্ষুর প্রসারণ বা সংকোচনরূপ অত্যন্ত তীব্র হলে চক্ষুর অশ্রুগ্রন্থি উত্তেজিত হয়ে অশ্রু নিঃসরণও ঘটাতে পারে। এটিই হলো গ্রন্থীয় প্রতিক্রিয়া।উপরের তথ্য থেকে তিন শ্রেণির প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। যথা: ১. সংবেদীয়, ২. চেষ্টীয় ও ৩. গ্রন্থীয়।এ তিন শ্রেণি ছাড়াও আবার তিন শ্রেণির প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যথা: ১. সরল প্রতিক্রিয়া, ২. যৌগিক প্রতিক্রিয়া ও ৩. অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়া।
প্রতিক্রিয়া যেমন তিন প্রকার তেমনি প্রতিক্রিয়াকালও তিন প্রকার। যথা : ১. সরল প্রতিক্রিয়াকাল, ২. যৌগিক প্রতিক্রিয়াকাল ও ৩. অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়াকাল।
ক. সরল প্রতিক্রিয়াকাল: যে প্রতিক্রিয়া মাত্র একটি উদ্দীপক হতে সরাসরি সংঘটিত হয় উহাকে সরল প্রতিক্রিয়া এবং উহাতে যে কাল ব্যয়িত হয় তাকে সরল প্রতিক্রিয়াকাল বলে।
খ. যৌগিক প্রতিক্রিয়াকাল : যৌগিক প্রতিক্রিয়াকাল দুই প্রকার। যথাঃ
১. ভেদ প্রতিক্রিয়াকাল : ভেদ প্রতিক্রিয়াকাল পরীক্ষা করার সময় পাত্রকে বলা হলো যে, তার সম্মুখে লাল অথবা নীল আলো জ্বালানো হবে এবং শুধু লাল আলোটি দেখলেই তিনি সুইচ টিপবেন, কিন্তু নীল আলো দেখলে তিনি কোন প্রতিক্রিয়া করবেন না। এই প্রতিক্রিয়াকাল সরল নয়, যৌগিক। কারণ এতে পাত্র আলো দেখামাত্র প্রতিক্রিয়া করেন না,কিন্তু একটি আলোকের সহিত আরেকটি আলোকের ভেদ প্রত্যক্ষ করে প্রতিক্রিয়া করেন।
২. নির্বাচন প্রতিক্রিয়াকাল : নির্বাচন প্রতিক্রিয়াকাল পরীক্ষা করার সময় পাত্রকে বলা হলো যে, তার সম্মুখে একটি লাল এবং অপর একটি নীল আলো জ্বালানো হবে। লাল আলোটি দেখামাত্র ডান হাতে এবং নীল আলোটি দেখামাত্র বাম হাতে তিনি সুইচ টিপবেন। এক্ষেত্রে ডান হাত বা বাম হাত দিয়ে দুই প্রকার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার একটিকে বেছে নিতে হয়।নির্বাচন করতে গিয়ে কিছু সময় ব্যয়িত হয়। ফলে নির্বাচন প্রতিক্রিয়াকাল সাধারণত সর্বাধিক হয়ে থাকে।
গ. অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়াকাল : উদ্দীপক প্রত্যক্ষভাবে অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়া উৎপন্ন করে না। উদ্দীপক পরোক্ষাভাবে যে প্রতিক্রিয়া করে তাকে অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়া বলে। কাজেই এই প্রতিক্রিয়া সরল প্রতিক্রিয়া হতে আলাদা। আবার যৌগিক
প্রতিক্রিয়ায় একাধিক উদ্দীপক উপস্থাপিত হয়, কিন্তু মাত্র একটি উদ্দীপকের উপস্থিতিতেই অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়া চলতে পারে।অনুষঙ্গ প্রতিক্রিয়া দুই প্রকার। যথা : ১. অবাধ প্রতিক্রিয়া ও ২. সবাধ প্রতিক্রিয়া।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংবেদন বা জ্ঞানের উপর এবং প্রতিক্রিয়া করার উপর গুরুত্ব আরোপের সহিত প্রতিক্রিয়াকালের সম্বন্ধ রয়েছে। সংবেদীয় প্রতিক্রিয়াকাল যে অপেক্ষাকৃত বেশি এবং চেষ্টায় প্রতিক্রিয়াকাল যে অপেক্ষাকৃত কম হয় তা প্রতিক্রিয়ার আলোচনা থেকে বুঝা যায়। প্রতিক্রিয়াকাল স্থির বা নির্দিষ্ট নয়। এটি কোন উদ্দীপক উপস্থাপিত হয়, তার উপর নির্ভর করে। সুতরাং, মনোবিজ্ঞানে প্রতিক্রিয়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য।