প্রজনন বলতে কি বুঝ? প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।

প্রজনন বলতে কি বুঝ? প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, প্রজননের সংজ্ঞা দাও। প্রজনন পরিমাপের উপায়সমূহ ব্যাখ্যা কর।
অথবা, প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, প্রজনন কী? প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিগুলো কী কী? আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। আমাদের দেশে জনসংখ্যা বিভিন্ন কারণে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলেছে। প্রজনন ও প্রজনন ক্ষমতা প্রত্যয় দুটি জনবিজ্ঞানের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যয় দুটি নিয়ে জনবিজ্ঞানীরা নানা পটভূমিতে আলোচনা করেছেন। প্রজনন একটি জৈবিক প্রত্যয়। স্থান, কাল, পাত্রভেদে এবং সামাজিক সংস্কৃতির
তারতম্য ভেদে প্রজনন প্রত্যয়টির তারতম্য নির্ভর করে। প্রজনন অধ্যয়নে প্রজনন ক্ষমতা স্তর নির্দেশ করে না, যার জন্য এর কোনো প্রত্যক্ষ পরিমাপক নেই। সুতরাং, প্রজনন ও প্রজনন ক্ষমতা প্রত্যয় দুটি জনবিজ্ঞানের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ। প্রজনন : প্রজনন হলো কোনো নারী বা নারী সমষ্টি কর্তৃক প্রকৃত সন্তান জন্মদানের ক্ষমতাকে বুঝায় । তবে জীবিত সন্তান জন্ম না দিলে তাকে প্রজনন বলা যাবে না।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : প্রজনন ক্ষমতার সংজ্ঞা সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রকার মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো :
United Nations এর প্রদত্ত সংজ্ঞানুযায়ী, “Fertility refers to the actual reproductive performance of a woman or a group of woman.”
Shryock এবং Siegel বলেছেন, “Fertility refers to actual birth performance.” O. H. Shrivastava , “The capacity of woman to bear a live child is termed as fertility.”
সুতরাং আমরা বলতে পারি, প্রজনন হলো কোনো নারীর স্বাভাবিক জন্মদানের ক্ষমতা।প্রজনন ক্ষমতা : প্রজনন ক্ষমতা হলো প্রজননের সাথে সম্পর্কিত একটি প্রত্যয়। প্রজনন ক্ষমতা বলতে সন্তান জন্মদানের জৈবিক ক্ষমতাকে বুঝায়।প্রামাণ্য সংজ্ঞা : প্রজনন ক্ষমতার সংজ্ঞা সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রকার মন্তব্য করেছেন। তা নিম্নে
আলোচনা করা হলো :
Weeksdemographer.” “The physical ability to reproduce is usually called fecundity by Shryock এবং Siegel এর মতে, “Fecundity refers to the physiological capacity to reproduce.”
Thompson 4 Lewis, “Fecundity is a biological potential in the physiological capacity to participate in reproduction.”
Barclay, “Fecundity is potential level of performance of physical capacity for bearing children of the population.”
সুতরাং, প্রজনন ক্ষমতা বলতে জৈবিক সন্তান উৎপাদনে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত আগ্রহের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতাকে বুঝায় । প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ : বিভিন্ন পদ্ধতিতে জন্মহার পরিমাপ করা হয়। কোনো কোনো সময় নির্দিষ্ট
সময়ের তথ্যের ভিত্তিতে ঐ সময়ের প্রজননের হার পরিমাপ করা হয়। আবার কোনো কোনো সময় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কোনো নারীর পুনঃপ্রজনন কাঠামোকে বিশ্লেষণ করা হয়। আবার কোনো কোনো সময় জনসংখ্যার বয়স ও লিঙ্গ কাঠামোকে বিশ্লেষণ করে প্রজননের পরিমাপ করা হয়। নিম্নে প্রজনন পরিমাপের পদ্ধতিসমূহ আলোচনা করা হলো :
প্রজননের ক্ষেত্রে তিন ধরনের প্রজনন পরিমাপ (Fertility measurement) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় । যথা :
i. Birth Rate: CBR
ii. Fertility Rate: ASFR GFR TFR
iii. Reproduction Rate: GRR
NRR.
i. স্থূল জন্মহার (Crude Birth Rate-CBR) : কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো নির্দিষ্ট বছরে নিবন্ধীকৃত মোট জনসংখ্যাকে বছরের মধ্যবর্তী মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে অনুপাত পাওয়া যাবে তাকে ১০০০ দ্বারা গুণ করলে Crude Birth Rate পাওয়া যাবে। স্থূল জন্মহারের সূত্রটি নিয়ে আলোচনা করা হলো :
x ১০০০
CBR = নির্দিষ্ট বছরে মোট জীবিত জনসংখ্যা বছরের মধ্যবর্তী মোট জনসংখ্যা
= x
x K
এখানে, CBR = স্থূল জন্মহার
B = নির্দিষ্ট বছরে মোট জীবিত জনসংখ্যা
P = বছরের মধ্যবর্তী মোট জনসংখ্যা
K = 1000
স্থূল জন্মহার আলোচনায় আমরা উদাহরণের সাহায্যে সূত্রটির বিশ্লেষণ করতে পারি। ধরা যাক, ১৯৯৯ সালে‌রাজশাহী শহরের কোনো এক এলাকায় নমুনা জরিপ থেকে জানা যায়, সেখানকার মোট জীবিত জনসংখ্যা 190 জন এবং বছরের মধ্যবর্তী জনসংখ্যা পাওয়া গেল 1000 জন। এ বছর ঐ এলাকার স্কুল জন্মহার হবে :
CBR (1999)
190
1000 1000
= 190সূত্রটি বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, ১৯৯৯ সালে রাজশাহী শহরের ঐ এলাকায় প্রতি 1000 জনসংখ্যার মধ্যে
190 জন শিশু জীবিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিল। স্থূল জন্মহার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে Hans Raj তাঁর
‘Fundamentals of Demography’ (2003: 96) গ্রন্থে বলেছেন, “Crude birth rate is important in measuring
fertility because is directly points to the contribution of fertility to the growth rate of population. It
also requires minimum of data for computation and indicates level of fertility of society.”
ii. বয়ঃনির্দিষ্ট প্রজনন হার (Age Specific Fertility Rate-ASFR) : কোনো দেশের মহিলারা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে যে পরিমাণ সন্তান প্রদান করে তার অনুপাতকে বয়ঃনির্দিষ্ট প্রজনন হার বলে। Thompson এবং Lewis, “Age specific Birth Rate for and year obtained by dividing the number of births to
the mothers of each age in that year by the number of woman of this age in the population at that
date and multiplying this figure by 1000.”
Barclay বয়ঃনির্দিষ্ট প্রজনন হারের নিম্নোক্ত সূত্রটি প্রদান করেছেন :
নির্দিষ্ট বয়সী মহিলা জনগোষ্ঠী
4 ASFR = ঐ জনগোষ্ঠীর মহিলাদের মধ্যবর্তী বছরের সংখ্যা
ASFR = Where,
Bi px 1000
Bi = Live births in a specific age group.
pi = The number of female population in that age group.
উদাহরণ : ধরা যাক, নওগাঁ শহরের কোনো এলাকার ১৯৯৭ সালের নমুনা জরিপ থেকে নিম্নোক্ত তথ্যগুলো পাওয়া গেল।
Bi = ২০-২৫ বছর বয়সী মহিলাদের সন্তান জন্মদানের সংখ্যা = 57.
p″ = জরিপকৃত এলাকায় ১৯৯৭ সালে ২০- ২৫ বছর বয়সী মহিলাদের মোট সংখ্যা = 387 সুতরাং, বয়ঃনির্দিষ্ট প্রজনন হার হবে,
সাধারণ প্রজনন হারের সূত্র :
GFR
ASFR
x 1000
=
=
57
387
= 147.29
iii. সাধারণ প্রজনন হার (General Fetility Rate- GFR) : কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট নিবন্ধীকৃত জীবিত
জনসংখ্যা এবং সন্তান ধারণে সক্ষম মোট মহিলা এ দু’য়ের অনুপাতকে ১০০০ দ্বারা গুণ করলে সাধারণ প্রজনন হার পাওয়া
যায়। সাধারণত ১৫-৪৪ বা ১৫-৪৯ বছর বয়সী মহিলাদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা বেশি। Hans Raj তাঁর
‘Fundamentals of Demography (200397) গ্রন্থে বলেছেন, “General Fertility Rate is obtained by
expressing the live birth as a rate per thousand of woman of child bearing age taken as either 15-
44. or 15-49. “
x 1000
কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট জীবিত জনসংখ্যা
মধ্য বছরে সন্তান ধারণে সক্ষম মোট মহিলার সংখ্যা x 1000
B
Pf 15-49
এখানে, B = কোনো নির্দিষ্ট বছরে মোট নিবন্ধীকৃত জীবিত জনসংখ্যা
P1s− 49 = মধ্য বছরে ১৫-৪৯ অথবা ১৫-৪৪ বয়সী সন্তান ধারণে সক্ষম মোট মহিলার সংখ্যা উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রাজশাহী শহরের কোনো নমুনা জরিপ করে নিম্নোক্ত তথ্যাবলি পাওয়া গেল :
১৯৯৭ সালে মোট জীবিত জনসংখ্যা = 16.6
১৫ – ৪৪ বছর বয়সী সন্তান জন্মদানে সক্ষম মহিলার সংখ্যা = 1190এক্ষেত্রে GFR (1997)
প্রদান করেছেন।
TFR = E (ASFRx 5 )
49
16-6
1190
= 139.5
=
জরিপকৃত এলাকায় ১৯৯৭ সালে সন্তান ধারণে সক্ষম প্রতি 1000 জন মহিলা
139.5 জন সন্তানের জন্ম দিয়েছিল।
iv. মোট প্রজনন হার (Total Fertility Rate – TFR) : মোট প্রজনন হারের মাধ্যমে একজন মহিলা কতজন
সন্তান জন্ম দিতে পারে সেটা পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, ১৫-৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম মহিলাদেরকে প্রতি পাঁচ বছর
অন্তর শ্রেণিবিন্যাস করে প্রতিটি শ্রেণির Age Specific Fertility Rate বের করে তাদের সমষ্টি করলে মোট প্রজনন হার।
Or, TFR = 2
পাওয়া যায় ।
D. J. Bogue মোট প্রজনন হারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “It is an estimate of the number of the
children a cohort of 1000 woman would bear if they all went through their reproductive years
exposed to the age specific fertility rates in effect at a particular time.”
Hans Raj তাঁর ‘Fundamentals of Demography’ গ্রন্থে বলেছেন, “The total fertility rate is also the
same as the total number of children that would ever born to a hypothetical group of woman, if
the group passed through its reproductive span of life with these birth rates at each year of age.”
সুতরাং আমরা বলতে পারি, একজন মহিলা গড়ে কতজন সন্তান জন্ম দিতে পারে তার সমষ্টি হলো প্রজনন।
মোট প্রজনন হার নির্ণয়ের সূত্র : জনবিজ্ঞানী প্রফেসর Barclay মোট প্রজনন হার নির্ণয়ের নিম্নোক্ত সূত্রটি
Bi
Pi
* x 1000
x K
i = 15
এখানে, TFR = মোট প্রজনন হার।
Bi
Pi
i
K
= 1000.
উদাহরণ : ধরা যাক, ১৫-৪৯ বছর বয়সী সন্তান ধারণক্ষম মহিলাদের প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ASFR
বা বয়ঃনির্দিষ্ট প্রজনন হার = 527-2
.:. মোট প্রজনন হার (TFR)
= i বয়সী মহিলাদের জীবিত সন্তান জন্মদানের সংখ্যা।
= মধ্য বছরে i বয়সী মহিলাদের সংখ্যা।
= 15-49 বয়সী সন্তান ধারণক্ষম মহিলা যাদেরকে পাঁচ বছরে বিভক্ত করা হয়।
=
(527-2) × 5
1000
= 2.6
মোট প্রজনন হার = 2.6
v. মোট পুনঃপ্রজনন হার (Gross Reproduction
Rate – GRR) : প্রজননকালীন সময় পরিধির মধ্যে প্রতি
হাজার মহিলা কতজন জীবিত কন্যাসন্তান জন্ম দিতে সক্ষম তা মোট পুর্নঃপ্রজনন হার দ্বারা পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ, The
total fertility rate can be converted to a GRR simply multiplying by proportion of the female
births.
মোট পুনঃপ্রজনন হারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Thompson এবং Lewis বলেছেন, “The gross reproduction
rate shows how many girl babies potential future mothers would be born to 1000 woman passing
through their child bearing years, if the age specific birth rates of a given year remained constant
and if no woman, entering the child bearing period died before reaching menopause.”
সুতরাং আমরা বলতে পারি, মোট জন্মের মধ্যে কন্যা শিশু জন্মের হার বের করার জন্য GRR ব্যবহার করা হয়।
মোট পুনঃপ্রজনন হারের সূত্র : মোট পুনঃপ্রজনন হারের সূত্রটি নিম্নরূপ :
GRR=TFRx proportion of female births
Or, GRR = TFRx
female births
all births
49
Or, GRR = 5 × 2
i = 15
B’i
Pixk
K
যেখানে,
Bfi = i বয়স গোষ্ঠীর মহিলাদের নিবন্ধনকৃত জীবিত কন্যাসন্তানের জন্মের সংখ্যা।
Pi = মধ্যবর্তী সময়ের মহিলাদের সংখ্যা।
K = একটি ধ্রুবক যার মান 1,100.
বা, 1000 হতে পারে।
vi. নীট পুনঃপ্রজনন হার (Net Reproduction Rate-NRR) : প্রজনন সময়ব্যাপী মোট জীবিত
কন্যাসন্তানের সংখ্যাকে ঐ সময়ের মোট মহিলার সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে আমরা যে অনুপাত পাই তাই হলো নীট
পুনঃপ্রজনন হার। অর্থাৎ, নীট পুনঃপ্রজনন বলতে বুঝায়, “The NRR is less than the GRR, since some people
always die before the end of their reproductive periods. The NRR is calculated from the GRR by
Lx
simply multiplying by (EX ) life table survival Rate.”
Lo
সুতরাং আমরা বলতে পারি, বয়ঃনির্দিষ্ট জন্মহার এবং মৃত্যুহার স্থিতিশীল অবস্থায় প্রজনন সময় পরিধিতে যেসব
মহিলা যে সংখ্যক সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম, তার সাধারণ হিসাব NRR দ্বারা পরিমাপ করা যায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, প্রজনন ও প্রজনন ক্ষমতা আপাত দৃষ্টিতে এক মনে
হলেও এদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। প্রজনন হলো কোনো নারী বা নারী সমষ্টি কর্তৃক প্রকৃত সন্তান জন্মদানের হার
আর প্রজনন ক্ষমতা হলো কোনো নারী কর্তৃক জীবিত সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা। প্রজনন পরিমাপ করার বিভিন্ন পদ্ধতি
প্রয়োগ করে আমরা একটা দেশের জনসংখ্যা হার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। জনবিজ্ঞানীরা জন্মহার বা প্রজনন হার
নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কোনো একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে একটা দেশের জন্মহার
সম্পর্কে সর্বজনীন কোনো ধারণা অর্জন করা হয়ত বা সম্ভব হবে না। জন্মহার সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা অর্জন করার জন্য
সবগুলো পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে।