অথবা, অনুকল্প পরীক্ষণের ধাপগুলো কী কী?
অথবা, পূর্বানুমান পরীক্ষণের ধাপগুলো কী কী?
অথবা, প্রকল্প পরীক্ষণের ধাপগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, প্রকল্প পরীক্ষণের ধাপগুলো সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর।। ভূমিকা : একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু হয় একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা দিয়ে। সমস্যা স্থির করার পর তার সমাধানের জন্য একজন মনোবিজ্ঞানী পরীক্ষণ বা গবেষণা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরীক্ষণটির রূপরেখা কি হবে সে
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রথমে সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান কল্পনা করে নিতে হয়। এ কল্পিত বা অনুমোদিত সমাধানই হচ্ছে Hypothesis বা প্রকল্প। আর তাই প্রকল্পকে প্রাথমিক ধারণা বা সাময়িক আন্দাজ বলা যায়, যা একটি
পরীক্ষণের দ্বিতীয় ধাপ।
পূর্বানুমান পরীক্ষণের ধাপ : পূর্বানুমান পরীক্ষণের জন্য প্রধানত চারটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যথা : জেট— টেস্ট বা পরিমিত যাচাই, টি – টেস্ট, এফ – টেস্ট ও কাই – টেস্ট।
১. জেট-টেস্ট : অন্যান্য Test এর মতো Z-test এ দু’ধরনের কল্পনা গৃহীত হয়। নাস্তি কল্পনা ও বিকল্প কল্পনা। Z-test এ প্রথমে নাস্তি কল্পনা গ্রহণ করা হয়। Z একটি আদর্শ পরিমিত চলক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নমুনার আকার বড় হলে Z পরিমিত বিন্যাসের ন্যায় বিন্যস্ত হয়। এজন্য Z-test কে বৃহৎ নমুনার যাচাই (Large sample) বলে। সাধারণত গড়, অনুপাত, সহসম্পর্ক সহগ নির্ণয়ে Z-test ব্যবহৃত হয়।
২. টি-টেস্ট : W. S. Gossett ‘Student’ ছদ্মনামে ১৯০৮ সালে যে পরীক্ষা করেছিলেন সেটা হলো টি-টেস্ট (T-test)। একে Student’s T-testও বলা হয়। R. A. Fisher টি-টেস্টকে আরো উন্নত রূপ দান করেন। সামাজিক গবেষণায় T-test এর ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। টি-টেস্টের প্রাপ্ত ফলাফল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকে। গড় নিরূপণের মাধ্যমে টি-টেস্ট করা হয়। দুটি গড়ের মধ্যে পার্থক্যের যথার্থতার পরিমাপের পরীক্ষাকে টি-টেস্ট বলে। এক্ষেত্রে প্রথমে নাস্তি কল্পনা অনুসরণ করা হয়। নাস্তি কল্পনা গৃহীত না হলে বিকল্প কল্পনা গৃহীত হয়।
৩. এফ-টেস্ট : আমরা অনেক সময় দেখি যে, দুটি নমুনার গড় পার্থক্যের (x 1 – X 2) নমুনাচয়ন নিবেশন জানার প্রয়োজন হয়। একইভাবে ভেদাঙ্কের পার্থক্যের (si 2 – ½) নমুনাচয়ন নিবেশন জানারও প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমন নিবেশন অপেক্ষাকৃত জটিল। কারণ হলো যে, নমুনাজ মান (si/s22) বিবেচনা করায় ক্ষুদ্র বা বৃহৎ অনুপাত দ্বারা একটি বৃহৎ পার্থক্যকে নির্দেশ করবে। যখন এ অনুপাত ১ এর কাছাকাছি হবে, তখন ক্ষুদ্র পার্থক্য নির্দেশ করবে। এমন ধরনের
নমুনাচয়ন নিবেশনকে R. A. Fisher এর নাম অনুসারে এফ নিবেশন বা F distribution বলে।
৪. কাই বর্গ টেস্ট: কার্ল পিয়ারসন ১৯০০ সালে কল্পিত ও হিসাবকৃত মানের পার্থক্য বুঝার জন্য সর্বপ্রথম গ্রিক অক্ষর x± (কাই স্কোয়ার) ব্যবহার করেন। কাই বর্গ কোন নাস্তি কল্পনা ও হিসাবকৃত গণসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য যাচাই করে।
কাই বর্গ পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমগ্রক সম্পর্কে নাস্তি কল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং কাই বর্গের ফলাফল থেকে উক্ত কল্পনা গ্রহণ বা বর্জন করা হয়। হিসাবকৃত ও কল্পিত গণসংখ্যার মধ্যে পার্থক্য যতবেশি হবে, কাই বর্গের মানও তত বৃদ্ধি পাবে।
উভয় ধরনের গণসংখ্যার মধ্যে কোন পার্থক্য না থাকলে, x2 মান শূন্য (Zero) হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা এটি গবেষণার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে প্রকল্পটি অবশ্যই পরীক্ষাযোগ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ হতে হবে। গবেষণার বিষয়কে সামনে রেখে প্রকল্প বা ধারণা করা হয়। তাই প্রকল্প পরীক্ষণের ধাপগুলোর গুরুত্ব মনোবিজ্ঞানে অপরিসীম।