প্রকল্প কী? প্রকল্পের নির্ণায়কগুলো আলোচনা কর।

অথবা, অনুকল্প কী? অনুকল্পের নির্ণায়কগুলো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পূর্বানুমান কী? পূর্বানুমানের নির্ণায়কগুলো আলোচনা কর।
অথবা, প্রকল্প কাকে বলে? প্রকল্পের নির্ণায়কগুলো ব্যাখ্যা কর।
অথবা, সংজ্ঞাসহ প্রকল্পের নির্ণায়কগুলো বর্ণনা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : মনোবিজ্ঞানে গবেষণা পরিচালনা করার জন্য প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। একটি যথার্থ প্রকল্পের উপর গবেষণার যথার্থতা নির্ভর করে। কারণ কোন গবেষণার প্রারম্ভিক বিষয় হচ্ছে প্রকল্প বা অনুকল্প। গবেষক কোন বিষয়কে যাচাই করার জন্য তত্ত্বপূর্ব অভিজ্ঞতা বা সাধারণ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কিছু অনুমান গঠন করেন। একজন গবেষক তার গবেষণার কোন বিষয়ে কি কি খুঁজে পেতে চান, কিভাবে খুঁজবেন ইত্যাদি প্রকল্পের ভিত্তিকে করে থাকে।
প্রকল্প : প্রকল্প হলো একে ধরনের প্রস্তাবনা যাকে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর গবেষকের জন্য প্রস্তুত করা হয়।অন্যভাবে আমরা বলতে পারি, কোন একটা ঘটনার কারণ কি হতে পারে তার একটা সম্ভাব্য উত্তরই হলো প্রকল্প। সমস্যা সমাধানের
উদ্দেশ্যে একটি আপাত সমাধানযোগ্য ও প্রমাণিতব্য উক্তি হলো প্রকল্প। অর্থাৎ প্রকল্প হচ্ছে কোন সমস্যার সম্ভাব্য উত্তর।
McGuigan (1908) প্রকল্পের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “Hypothesis is a testable statement of a potential empirical relationship between two or more variables.”
যুক্তিবিদ মিল এর মতে, “প্রকল্প হলো এমন একটি আনুমানিক তথ্য, যা আমরা প্রকৃত প্রমাণ ছাড়া গ্রহণ করি অথবা অপর্যাপ্ত প্রমাণের উপর নির্ভর করে গ্রহণ করে থাকি।”
যুক্তিবিদ Coffey এর মতে, “A Hypothesis is an attempt explanation, a provisional dipposition made in order to explain entitically some facts or phenomena.”
মনোবিজ্ঞানী Crider and Others (1983) এর মতে, “প্রকল্প এমন একটি প্রস্তাব, যা পর্যবেক্ষণ ও মতবাদের উপর ভিত্তি করে প্রণীত হয় এবং চলসমূহের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করে।”
একটি উদাহরণের সাহায্যে প্রকল্পকে বুঝানো যেতে পারে। নিউটন আপেলকে মাটিতে পড়তে দেখে ধারণা করলেন যে, মাটির শক্তিই হয়ত আপেলকে মাটির দিকে টানে। এ আনুমানিক ধারণা পরে সত্য বলে প্রমাণিত এবং আবিষ্কৃত হলো মাধ্যাকর্ষণ নিয়ম।
সুতরাং বলা যায়, প্রথমে প্রকল্প করা হয়। এরপর তার উপর সত্যাসত্য যাচাই করা হয়। অর্থাৎ, প্রকল্প বলতে তাই বুঝায়, যা পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা যায়।
প্রকল্পের নির্ণায়ক : বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হলো প্রকল্পের ব্যবহার। বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রকল্পের ব্যবহারের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে
প্রকল্প ব্যবহার করলে বৈজ্ঞানিক গবেষণা খুব সহজ হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত প্রকল্পকে বুঝতে হলে বা যথাযথভাবে যাচাই করতে হলে কতকগুলো নির্ণায়কের সাহায্য নিতে হয়। নিম্নে এ নির্ণায়কগুলো আলোচনা করা হলো :
১. নক্‌শাগত নিৰ্ণায়ক : বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকল্পের অন্যতম একটি নির্ণায়ক হলো নকশাগত নিৰ্ণায়ক।গবেষণার ক্ষেত্রে নকশার সাথে প্রকল্প সামঞ্জস্য বা মিল বা সাদৃশ্য থাকতে হয়। গবেষণার নক্শা তৈরির ক্ষেত্রে প্রকল্পে
চলের অবস্থান বিচার করেই চলের ব্যবহার করা হয়। প্রকল্পের যথার্থতা বিচার করার জন্য নকশার বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করা হয়। সুতরাং গবেষণা নকশা প্রকল্প নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
২. বিষয়বস্তুগত নির্ণায়ক : বিষয়বস্তুগত নির্ণায়ক প্রকল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্ণায়ক। প্রকল্পের ভাষা ও বিষয়বস্তু যেমন হবে গবেষণার বিষয়বস্তু ঠিক অনুরূপ হবে। গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে যখন প্রকল্পের বিষয়বস্তু সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সংগতিপূর্ণ হয় তখন বুঝতে হবে যে, গবেষণার জন্য প্রকল্পটি খুবই সঠিক হয়েছে। আর যদি গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে প্রকল্পের বিষয়বস্তুর মিল না থাকে তাহলে বুঝতে হবে গবেষণার জন্য প্রকল্পটি সঠিক হয় নি। সুতরাং বিষয়বস্তুর বিচার বা যাচাই করার জন্য প্রকল্পকে অবশ্যই যথাযথ হতে হবে।
৩. উদ্দেশ্যমূলক নির্ণায়ক : গবেষণার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যমূলক নির্ণায়ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও দিকনির্দেশনার সাথে গবেষণার উদ্দেশ্য ও দিকনির্দেশনা থাকতে হবে। উভয়ের সাথে
সামঞ্জস্য ও মিল থাকলে গবেষণা পরিচালনা করা খুবই সহজ হয়। তাই গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্যের বিচারে প্রকল্পের যথার্থতা যাচাই করা হয়। সুতরাং প্রকল্পকে সবসময় উদ্দেশ্যমূলক হতে হবে, উদ্দেশ্যহীন নয়।
৪. ফলাফলগত নিৰ্ণায়ক : প্রকল্পের জন্য অন্যতম একটি নির্ণায়ক হলো ফলাফলগত নির্ণায়ক। গবেষণা পরিচালনা করার পর প্রাপ্ত ফলাফল সঠিক কি না তা গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সাথে মিলিয়ে দেখতে হয়। আবার প্রাপ্ত ফলাফল প্রকল্পের সমর্থনপুষ্ট কি না তাও বিচার করা হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রকল্পের সমর্থনে প্রাপ্ত ফলাফল পাওয়াটাই আমাদের প্রত্যাশা। সুতরাং গবেষণা পরিচালনা করার জন্য ফলাফল প্রকল্পের নির্ণায়ক হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত প্রকল্পটিকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা ও যাচাই করা হয়। গবেষণা কাঠামোর সার্বিকতা বিচারে প্রকল্পের সঠিকতা যাচাই করা যায়। পরীক্ষণ পরিচালনায় যে ধাপগুলো রয়েছে সে ধাপগুলো কমবেশি প্রকল্পের নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সুতরাং প্রকল্পের নির্ণায়কের ভূমিকা মনোবিজ্ঞানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।