প্রকল্প ও তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। তত্ত্বের সাথে প্রকল্পের সম্পর্ক আলোচনা কর।

অথবা, অনুকল্প ও তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, পূর্বানুমান ও তত্ত্ব কী? তত্ত্বের সাথে পূর্বানুমানের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, অনুকল্প ও তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও। তত্ত্বের সাথে অনুকল্পের সম্পর্ক আলোচনা কর।
অথবা, অনুমিত সিদ্ধান্ত ও তত্ত্ব কাকে বলে? তত্ত্বের সাথে অনুমিত সিদ্ধান্তের সম্পর্ক দেখাও।
অথবা, প্ৰকল্প তত্ত্ব কী? তত্ত্বের সাথে প্রকল্পের সাদৃশ্য আলোচনা কর।
উত্তর৷৷ ভূমিকা : বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই একজন বিজ্ঞানী বাস্তব ও নিরপেক্ষ জ্ঞান তথা সত্যানুসন্ধানে ব্যাপৃত হন। আর ঘটনা হল গবেষণার প্রথম উপজীব্য বিষয়। গবেষক সব ঘটনা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চালান না। তিনি যেসব ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন সেগুলোর উন্মেষ ও ফলশ্রুতি মানব স্বার্থের ইতিবাচক বা নেতিবাচক দিককে প্রভাবিত করতে চায়।
এসব ঘটনা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেই তিনি সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ কাজটি তাঁকে করতে হয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করেই । আর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যেহেতু সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক কর্মপ্রক্রিয়া সে কারণে স্বাভাবিকভাবেই এর কিছু মৌলিক উপাদান রয়েছে । এ রকম দু’টি মৌলিক উপাদান হল অনুকল্প বা অনুমিত সিদ্ধান্ত ও তত্ত্ব (Theory)।
প্রকল্প বা অনুকল্প বা অনুমিত সিদ্ধান্ত : অনুকল্পকে অনুসন্ধান কাজের দিকনির্দেশক বলা হয়ে থাকে। অনুকল্প অনুসন্ধান কাজে গবেষককে কি দেখতে হবে তা বলে দেয়। সহজ কথায়, অনুকল্প হল এক ধরনের প্রস্তাবনা যাকে পরীক্ষণীয় আকারে বিবৃত করা হয় এবং যা (দুই বা ) চল মধ্যকার নির্দিষ্ট সম্পর্ক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে।
Goode এবং Hall বলেছেন, “অনুকল্প হল এমন একটি প্রস্তাবনা যার যথার্থতা নির্ধারণের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষাধীনে আনা হয়। আর এটা সাধারণ উপলব্ধির পক্ষ-বিপক্ষ যে কোন দিকেই যেতে পারে।”
অনুকল্প বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির একটি অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই বলা যায় যে, অনুকল্প হচ্ছে দু’টি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে একটি বিবৃতি, যার সত্যাসত্য যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষণাধীনে আনা হয়।
তত্ত্ব : তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির কেবল একটি মৌলিক ধারণাই নয়, বরং তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির চালিকাশক্তি এবং উদ্দেশ্যও বটে।
উইলিয়াম জে. গুড. পাল. কে. হেট মনে করেন যে, “নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর জড়োকৃত ঘটনার সমষ্টি হল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব।”
একটি বিরাট সংখ্যক ঘটনা বা নিরীক্ষণকে বিবেচনার জন্য সংগঠিত B. R. Bugeski এর মতে,পরস্পর ক্রিয়াশীল, সম্পর্কযুক্ত অথবা স্বতন্ত্র নীতির সমষ্টিই হল তত্ত্ব।”
Encyclopaedia of Social Research, “A theory is a set of systematematically related propositions specifying causal relationships among variables.”
সার্বিক বিবেচনায় বলা যায় যে, তত্ত্ব হচ্ছে দু’টি প্রত্যয় বা ধারণার মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে একটি সাধারণ বিবৃতি।
তত্ত্বের সাথে প্রকল্পের বা অনুমিত সিদ্ধান্তের সম্পর্ক : তত্ত্ব ও প্রকল্পের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তত্ত্বের সাথে প্রকল্পের সম্পর্ক বিস্তারিত আলোচনা করা হল :
১. তত্ত্বের বিভিন্ন বিষয় বা তথ্যাবলিকে যুক্তিপূর্ণভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। তত্ত্বে বর্ণিত সম্পর্কের বাইরেও নতুন কোন সম্বন্ধে ধারণা করা যেতে পারে বা তত্ত্বনির্ভর নতুন সম্পর্ক সম্বন্ধে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যেতে পারে। এরূপ সিদ্ধান্ত কতকখানি সঠিক তা প্রমাণসাপেক্ষ। তত্ত্ব হতে অবরোহমূলক সিদ্ধান্তকে যখন একটি গবেষণার উপযোগী করে নিরূপণ বা গঠন করা হয়, তখন তা অনুমান হিসেবে গণ্য হয়। এর সঠিকতা গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করা হয় এবং সঠিক প্রমাণিত হলে পরবর্তীতে আবার নতুন তত্ত্বের আওতাভুক্ত হয়।বস্তুত, তত্ত্ব ও অনুমানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়।
২. অনুমিত সিদ্ধান্ত মূলত এক ধরনের সম্পর্ক নির্দেশক উক্তি এবং প্রস্তাবনাও বটে, যা তত্ত্ব থেকে উদ্ভূত আবার প্রত্যক্ষ পরীক্ষণের মাধ্যমে সমর্থিত হলে তত্ত্ব বা তত্ত্বের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। বস্তুনিষ্ঠ গবেষণায় ঘটনার ব্যাখ্যা প্রদান এবং গবেষণাকে নির্দেশনা দানের জন্য অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়। অনুমিত সিদ্ধান্ত একটি সাময়িক সিদ্ধান্ত বিশেষ, যা গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তিত, গৃহীত বা বাতিল হতে পারে।
৩. যে কোন মূল্যবান তত্ত্বেরই বৈশিষ্ট্য হল যে, এ তত্ত্ব হতে নতুন অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠনের সুযোগ থাকে। এ অনুমিত সিদ্ধান্ত পরবর্তী পর্যায়ে সঠিক বা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় এবং ভবিষ্যতে মূল তত্ত্বের নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ করে।
৪. অনুমিত সিদ্ধান্ত কোন না কোন তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হয়। অনুমিত সিদ্ধান্তের পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপরে ভিত্তি করে সামাজিক তত্ত্ব গ্রহণ বা বর্জন এবং নতুন তত্ত্ব গঠনের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বিকাশ সম্ভব।অনুমিত সিদ্ধান্ত তত্ত্বের বিমূর্ততাকে বাস্তব তথ্যের সাহায্যে পরীক্ষা করতে সাহায্য করে।
৫. তত্ত্ব ঘটনাবলির সামঞ্জস্য বিধানে ও তার অর্থ নির্ণয়ে সাহায্য করে। ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দান করতে পারে।কোন বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য সুসংঘবদ্ধ করা হলে তা তত্ত্বে পরিণত হয়।তত্ত্ব কোন পরিকল্পনা বা ভাবনা নয়, বরং এটি তথ্য নির্ভর।
৬. অনুকল্প গবেষণা ও তত্ত্বের মধ্যে একটি প্রয়োজনীয় যোগসূত্র। অনুমান আমাদের সাধারণ জ্ঞানের অনুকূলে হতে পারে আবার নাও হতে পারে। এটি সঠিক বা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হতে পারে। অনুমান সবসময় বাস্তবসম্মত পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা যাচাই করা হয়। উত্তর যাহোক, অনুকল্প একই প্রশ্ন যার উত্তর পাওয়া সম্ভব বলে আশা করা হয়। কার্যকরী অনুমান গঠন কষ্টসাধ্য হলেও গবেষণাকার্যকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য অনুমান গঠন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তত্ত্ব (Theory) এবং অনুকল্পের (Hypothesis) সম্পর্ক অত্যন্ত নিগূঢ়। অনুকল্প গবেষককে গবেষণা কাজের সর্বক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা দানে সাহায্য করে এবং কোন বিষয় গ্রহণীয় বা বর্জনীয় তা সুস্পষ্ট করে দেয়। অন্যদিকে, তত্ত্ব সঠিক অনুমিত সিদ্ধান্ত গঠনে ভূমিকা রাখে এবং নতুন কোন জ্ঞান অন্বেষণ বা সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজতে পথ নির্দেশ করে।