প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্ব বলতে কী বুঝ?

অথবা, প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্ব কী?
অথবা, প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্ব কাকে বলে?
অথবা, প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্বের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্বের ধারণা দাও।
উত্তর৷ ভূমিকা : একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে শুরু হয় একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা দিয়ে। সমস্যা স্থির করার পর তার সমাধানের জন্য একজন মনোবিজ্ঞানী পরীক্ষণ বা গবেষণা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরীক্ষণটির রূপরেখা কি হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রথমে সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান কল্পনা করে নিতে হয়। এ কল্পিত বা অনুমোদিত সমাধানই হচ্ছে Hypothesis বা প্রকল্প। আর তাই প্রকল্পকে প্রাথমিক ধারণা বা সাময়িক আন্দাজ বলা যায়, যা একটি পরীক্ষণের দ্বিতীয় ধাপ।
প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্ব : তত্ত্ব হল পরিমাপকৃত চল ও বিমূর্ত চিন্তা বা ধারণাসমূহের ভিতর এমন কতকগুলো বিবৃতি বা পারস্পরিক সম্পর্কের সমষ্টি। যেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ বা পরিমাপের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। আর তাই তত্ত্ব থেকেও আমরা প্রকল্প পেতে পারি। তত্ত্ব যেহেতু হাজার হাজার পর্যবেক্ষণ বা গবেষণা থেকে হয়ে থাকে, সেহেতু এটা ভুল হতে পারে না। আর নির্ভুল তত্ত্ব থেকেই নির্ভুল বা সঠিক প্রকল্প পাওয়া সম্ভব। যেমন- বলবৃদ্ধিতে ফল ভালো হয় (Theory or reinforcement)। এ তত্ত্বটিতে কোন বলবৃদ্ধির কথা বুঝানো হয়েছে তা বলা হয় নি। তাই এ তত্ত্ব থেকে প্রকল্প হতে পারে। “মুখে উৎসাহ দিলে ফল ভালো হয়”, এ প্রকল্প প্রমাণ করার জন্য দু’টি দল নিয়ে একটি দলকে মৌখিকভাবে উৎসাহ প্রদান এবং অপর দলকে কোনকিছু না দিয়ে পরীক্ষণটি করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যিনি প্রকল্প গঠন করবেন তার সে বিষয়ে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
মনোবিজ্ঞানী Tounsend আবার প্রকল্পের উৎস সম্পর্কে বলেছেন, “Hypothesis comes from experience.”
কোন অভিজ্ঞতা না থাকলে কোন বিষয় সম্পর্কে প্রকল্প গঠন করা সম্ভব নয়। আবার মনোবিজ্ঞানী Munn বলেছেন, “প্রকল্প আসে সৃজনশীল চিন্তা হতে।” বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সৃজনশীল চিন্তার
দ্বারা অনেককিছু করতে পারেন। মনোবিজ্ঞানী Munn এর মতে, Creative thinking বা সৃজনশীল চিন্তার ৪টি স্তর আছে। যথা :
ক. প্রস্তুতি : এটি সৃজনশীল চিন্তার প্রথম অধ্যায়। যখন কোন ব্যক্তি একটি সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টায় সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত হয়ে সকল প্রকার তথ্য সংগ্রহ করে তাকেই প্রস্তুতি বলে।
খ. সুপ্তাবস্থা : প্রকল্পটি তদের মাঝে সুপ্তাবস্থায় থাকে বলে এ সময় সমস্যা সমাধানের কোন কার্যাবলি পরিলক্ষিত হয় না।
গ. অনুপ্রেরণা : কোন সমস্যা সম্পর্কে হঠাৎ করে ধারণা লাভ। অর্থাৎ, অকস্মাৎ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।
ঘ. উদ্দেশ্য : প্রকল্পের মাধ্যমে পরীক্ষণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মনোবিজ্ঞানের গবেষণাকে সঠিক এবং তথ্যবহুল করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ এবং কার্যকরীকরণে যত্নবান হওয়া উচিত।তাই প্রকল্পের উৎস হিসেবে তত্ত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।