অথবা, প্রকল্পের উৎসসমূহ কী কী?
অথবা, প্রকল্পের কী কী উৎস রয়েছে?
অথবা, প্রকল্পের উৎসগুলো উল্লেখ কর।
উত্তর।। ভূমিকা : একটি বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান শুরু হয় একটি সমাধানযোগ্য সমস্যা দিয়ে। সমস্যা স্থির করার পর তার সমাধানের জন্য একজন মনোবিজ্ঞানী পরীক্ষণ বা গবেষণা করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু পরীক্ষণটির রূপরেখা কি হবে সে
বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রথমে সমস্যার একটি সম্ভাব্য সমাধান কল্পনা করে নিতে হয়। এ কল্পিত বা অনুমোদিত সমাধানই ইচ্ছে Hypothesis বা প্রকল্প। আর তাই প্রকল্পটি প্রাথমিক ধারণা বা সাময়িক আন্দাজ বলা যায়, যা একটি
পরীক্ষণের দ্বিতীয় ধাপ।
প্রকল্পের উৎসসমূহ : মনোবিজ্ঞানী Andreas প্রকল্পের চারটি উৎসের কথা বলেছেন। নিম্নে উৎসসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. অতীত গবেষণা : বিজ্ঞান প্রগতিশীল, অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো মনোবিজ্ঞান ও গবেষণার উপর প্রতিষ্ঠিত।কোন একটা গবেষণার ফলাফল বহু সমস্যার উন্মোচন করে এবং পরীক্ষণের জন্য বহুবিধ প্রকল্পের নির্দেশ দেয়। হাজার হাজার
গবেষণালব্ধ তথ্য বা জ্ঞান থেকে অমরা আচরণ সম্পর্কে তথ্য পাই। বর্তমান গবেষণাসমূহ অতীত গবেষণার দ্বারা প্রণোদিত হয় এবং মাঝে মাঝে জ্ঞানের ক্ষেত্রে ও অতীতের আবিষ্কারসমূহের অবদানের পরিপ্রেক্ষিতে তা সম্ভব হয়েছে।
২. ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ : আমরা দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু পর্যবেক্ষণ করে থাকি, সেগুলো থেকেও আমরা প্রকল্প পেতে পারি। যেমন- কেউ যদি রাস্তায় রিকশা চলাচলের প্রভাব লক্ষ্য করেন, তাহলে দেখা যাবে যে, কিছু কিছু রিকশাওয়ালার
দুর্ঘটনার প্রবণতা রয়েছে। যে চালকের ভিতর দুর্ঘটনার প্রবণতা কাজ করে, শুধু তার ক্ষেত্রেই দেখা যাবে ঘটনা ঘটছে।
যেমন— জনবহুল জায়গার তুলনায় জনহীন জায়গায় দুর্ঘটনা কম হয়। তাই মনোবিজ্ঞানের একটি বিখ্যাত উক্তি “প্রকল্প হতাশা বিকল্পতার জন্ম দেয়।”
৩. ব্যবহারিক সমস্যা : আমাদের ব্যবহারিক জীবনে বাস্তবক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে যখন আমরা সমস্যার সম্মুখীন হই এবং তখনই প্রকল্প পেতে পারি। যেমন- কোন অফিসের কর্মকর্তা লক্ষ্য করলেন তার অফিসের কর্মচারীরা কাজের প্রতি অমনোযোগী। তখন তিনি প্রকল্প গঠন করলেন যে, একঘেয়েমির জন্য তারা কাজে আগ্রহ হারাচ্ছে। তখন তিনি কাজের মাঝে কিছু বিনোদনের বা বিশ্রামের ব্যবস্থা করলেন।
৩. তত্ত্ব : তত্ত্ব হলো পরিমাপকৃত চল ও বিমূর্ত চিন্তা বা ধারণাসমূহের ভিতর এমন কতকগুলো বিবৃতি বা পারস্পরিক সম্পর্কের সমষ্টি যেগুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ বা পরিমাপের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হয়। আর তাই তত্ত্ব থেকেও আমরা প্রকল্প পেতে পারি। তত্ত্ব যেহেতু হাজার পর্যবেক্ষণ বা গবেষণা থেকে হয়ে থাকে, সেহেতু এটা ভুল হতে পারে না।আর নির্ভুল তত্ত্ব থেকেই নির্ভুল বা সঠিক প্রকল্প পাওয়া সম্ভব। যেমন— বলবৃদ্ধিতে ফল ভালো হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, মনোবিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে প্রকল্প অত্যন্ত জরুরি।মনোবিজ্ঞানের গবেষণাকে সঠিক এবং তথ্যবহুল করার জন্য প্রকল্প গ্রহণ এবং কার্যকরীকরণে যত্নবান হওয়া উচিত। সুতরাং প্রকল্পের উৎসগুলোর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।