উত্তর ঃ ভূমিকা : জন্মগতভাবে কোনো ব্যক্তিই অপরাধী নয়। পরিবেশ পরিস্থিতি মানুষকে অপরাধী করতে বাধ্য করে। অভাব, অনটন, বাড়তি চাহিদা আর দারিদ্র্যই অধিকাংশ মানুষকে অপরাধী হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। নিত্যনতুন পরিবর্তনশীল পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। অপরাধকে ঘৃণা করে অপরাধীকে চরিত্রগত দিক দিয়ে ভালো করার জন্য গৃহীত হয়েছে। সংশোধনমূলক কার্যক্রম। অপরাধীর সুষ্ঠু সংশোধনই যার লক্ষ্য। আর এই সংশোধনমূলক কার্য ক্রমের অন্যতম দুটি পদ্ধতি হলো প্রবেশন ও প্যারোল ব্যবস্থা। যেগুলো অপরাধীদের কতিপয় শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হয়।
প্যারোগ ও প্রবেশনের শর্তসমূহ ঃ প্যারোেল ও প্রবেশনের কিছু শর্তসমূহ নিয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস চালানো হলো :
প্যারোলের শর্তসমূহ ঃ সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অন্যতম একটি পদ্ধতি প্যারোল। যার কিছু শর্ত নিম্নরূপ ঃ
১. ভবিষ্যতে অপরাধ না করার অঙ্গীকার : প্যারোল বোর্ড কর্তৃক প্যারোল অন্যতম শর্ত হলো। অপরাধীদের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে অপরাধ না করার অঙ্গীকার। প্যারোলের শর্ত মোতাবেক চলাফেরা করা।
২. বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত পেশা, বাসা প্রভৃতির পরিবর্তন না করা ঃ প্যারোল আরেকটি শর্ত অপরাধী বিনা অনুমতিতে ব্যক্তিগত পেশা, বাসা, ঠিকানা ইত্যাদি পরিবর্তন করতে পারবে না।
৩. প্যারোল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ ঃ নিয়মিতভাবে প্যারোলের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা এবং প্যারোল কর্মকর্তার নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করে।
৪. অপরাধীর চারিত্রিক পরিবর্তনের নিদর্শন প্রদর্শন ঃ অপরাধী যে চরিত্রগতভাবে গঠনমূলক পরিবর্তনের ছোঁয়া নিজ জীবনে আনতে শুরু করেছে তা প্যারোল কর্মকর্তাদেরকে দেখাতে হবে। যদি এসব শর্ত পালনে প্যারোলাধীন অপরাধী ব্যর্থ হয় তাহলে তাকে তার শাস্তির মেয়াদ পূর্ণ করত হবে।
→ প্রবেশনের শর্তসমূহ ঃ প্রবেশন সংশোধনমূলক কার্যক্রমের আরেকটি অঙ্গ যার শর্তগুলো নিম্নরূপ :
১. সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ঃ সবার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাই হলো প্রবেশনের প্রধান শর্ত। আর এ কাজটি করবে প্রবেশাধীন অপরাধী যাতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
২. অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটানো ঃ যে অপরাধ করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সেই অপরাধ যেন আর তার দ্বারা পুনরায় না ঘটে ।
৩. প্রবেশন কর্মকর্তার নিকট গমন ঃ প্রবেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো অপরাধীকে নিয়মিতভাবে প্রবেশন কর্মকর্তার সাথে দেখা করতে হবে।
৪. নির্দিষ্ট প্রবেশন অফিসারের তত্ত্বাবধানে থাকা ঃ প্রবেশনাধীন ব্যক্তিকে আরেকটি শর্ত পালন করতে হয়। আর তা হলো নির্দিষ্ট প্রবেশন অফিসারের অধীনে থেকে শর্ত ও দায়িত্বসমূহ পালন করতে থাকা ।
৫. ভালো অভ্যাস গঠনের চেষ্টা ঃ ভাল অভ্যাস গঠন করতে না পারলে প্রবেশনের কার্যকারিতা অপরাধী নষ্ট করে ফেলবে। তাই তাকে সৎ সঙ্গী ও ভাল কাজের ও স্বভাবের হতে বলা হয়ে থাকে। আর এসব শর্তসমূহ যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হলেই সোপর্দ করা হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, প্যারোল ও প্রবেশন উভয়ই কতিপয় শর্তের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়। উভয়েরই লক্ষ্য অপরাধীর চারিত্রিক সংশোধন ত্বরান্বিত করা। প্যারোল ও প্রবেশন সংশোধনমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বর্তমান বিশ্বের ক্রমবর্ধমান অপরাধের প্রতিরোধে। সুতরাং, উভয়ই কিছু শর্তের দ্বারা পরিচালিত হয় বলা যেতেই পারে।