ভূগোল পাঠের সূচনাতেই শিক্ষার্থীকে জানানো হয়, পৃথিবীর তিনভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। সাগর, মহাসাগর, নদী-নালা, খাল-বিল মিলে এই বিশাল জলরাশি।
কিন্তু পৃথিবীর বুকে এতো পানি এলো কোত্থেকে?
সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহের ক্ষেত্রেই পরিমণ্ডলের বাইরে জলের অস্তিত্ব রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় বৃহস্পতি কিংবা শনির কথা। বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপা কিংবা শনির এনসেলাডাসে পানি থাকলেও গ্রহ দু’টিতে এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কিন্তু পৃথিবীর ক্ষেত্রে ঘটে গেছে উল্টো। চাঁদ শুষ্ক হলেও পৃথিবী জলাকীর্ণ। এর উৎস নিয়ে প্রশ্ন জাগাটাই স্বাভাবিক।
পৃথিবীর বুকে পানির উৎসের রহস্য সমাধানে বিজ্ঞানীরা দু’টো ধারণা খুঁজে পাচ্ছেন। প্রথমত, উত্তপ্ত পৃথিবী যখন শীতল হতে শুরু করে, তখন এখানকার পাথর আর ধূলোকণাই ভূপৃষ্ঠের সৃষ্টি করে। আর এসবেই আবদ্ধ হয়ে যায় সৌরজগতের জলকণাগুলো। মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে জন্ম হয়েছে সমুদ্র-মহাসমুদ্রের।
দ্বিতীয় ধারণাটি বলছে, সৃষ্টির আদিলগ্নে পৃথিবীর বুকে গ্রহাণু ও ধুমকেতুর আছড়ে পড়া থেকেই মূলত সাগর-মহাসগারের সৃষ্টি।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন, শুক্র ও মঙ্গলও প্রথমযুগে সিক্ত ছিলো। এ তথ্য প্রথম ধারণাকে শক্ত করলেও পৃথিবীর বুকে পানি জমার কারণ হিসেবে গ্রহাণু ও ধুমকেতুর আছড়ে পড়া তত্ত্বকেই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
পানি মূলত দুই প্রকার। সাধারণ পানি ও ভারী পানি। সাধারণ পানি হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সৃষ্টি। আর ভারী পানির সৃষ্টি হয় হাইড্রোজনের আইসোটপ ডিউটেরিয়ামের সঙ্গে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায়। ডিউটেরিয়ামের নিউক্লিয়াসে একটি নিউট্রন থাকে, যা হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসে থাকে না।
ডিউটেরিয়াম হাইড্রোজেনের তূলনায় ভারী হওয়ায় এর থেকে সৃষ্ট পানি সাধারণ পানির মতো দ্রুত বাষ্পায়িত হতে পারে না। ফলে মহাশূন্যে সাধারণ পানির চেয়ে ভারী পানির অস্তিত্ব থাকা বেশি যুক্তিযুক্ত। এবং মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে এই পানি পৃথিবীতে জমা পড়াও খুব স্বাভাবিক।
বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, পৃথিবীর সাগর-মহাসাগরগুলোয় ডিউটেরিয়াম ও হাইড্রোজেনের অনুপাত প্রতি দশ লাখে দেড়শ। এর থেকে পানির উৎস প্রশ্নে গ্রহাণু ও ধূমকেতুর আছড়ে পড়াই বেশি যৌক্তিক বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, এসব গ্রহাণু ও ধূমকেতু ছুটে আসার সময় মহাবিশ্বের ভারীপানিগুলোকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। এসব পানি পৃথিবীর আকর্ষণের কারণে আর বাইরে যেতে পারেনি।
তবে এরপরও পৃথিবীর বুকে জলের অস্তিত্ব প্রশ্নে রহস্যের সমাধান হয়ে যাচ্ছে না। আরও অনেক প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ রহস্যের সমাধানে আরও অনেক গবেষণা এখনও বাকি।