পূর্বানুমানের বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, একটি উত্তম অনুকল্পের বৈশিষ্ট্য লিখ।
অথবা, হাইপোথেসিস এর বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, অনুকল্পের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।
উত্তরা ভূমিকা : অনুমান গবেষণার একটি চালিকাশক্তি হওয়া সত্ত্বেও সব অনুমান গবেষণায় ব্যবহার উপযোগী ময়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা এবং সম্ভাব্য উত্তর স্থির করা একটি জটিল কাজ। অথচ এ কাজটি অনুমানকে উত্তম অনুমানে পরিণত করে এবং সাধারণ অনুমান থেকে বৈজ্ঞানিক অনুমানের পার্থক্য নির্দেশ করে।
একটি উত্তম অনুকল্পের বৈশিষ্ট্য : একটি ব্যবহার উপযোগী এবং উত্তর পূর্বানুমানের বৈশিষ্ট্যাবলি নিম্নরূপ :
১. পূর্বানুমানটি প্রমাণসাপেক্ষ হতে হবে : একটি ভালো পূর্বানুমানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, পূর্বানুমানটি প্রমাণসাপেক্ষ হতে হবে । পূর্বানুমানটি এমনভাবে ব্যক্ত করতে হবে যেন সেটি থেকে যৌক্তিক অনুসিদ্ধান্ত গঠন করা যায় এবং এ অনুসিদ্ধান্তগুলো বাস্তব ঘটনা বা তথ্যের সাহায্যে সত্যায়িত করা যায়। বাস্তব ঘটনা বা উপাত্ত যদি কোনো পূর্বানুমানকে সমর্থন না করে তাহলে পূর্বানুমানটি বর্জন করতে হবে ।
২. বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক : উত্তম পূর্বানুমান বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিক হওয়া বাঞ্ছনীয়। বিভিন্ন গবেষণাধর্মী পুস্তক, রচনা, সাময়িকী এবং গবেষণা প্রতিবেদন অধ্যয়ন হতে অর্জিত জ্ঞান এবং গবেষকের নিজস্ব বিচক্ষণতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পূর্বানুমানটি প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৩. প্রত্যয়গত দিক থেকে সুস্পষ্ট হতে হবে : পূর্বানুমান প্রত্যয়গত দিক হতে সুস্পষ্ট হতে হবে। এটি গবেষকের ব্যক্তিগত ব্যাপার হলে চলবে না বরং অন্যের বোধগম্য হতে হবে। এ কারণে প্রকল্পে ব্যবহৃত প্রত্যয়সমূহের সুস্পষ্ট ও কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান করা বাঞ্ছনীয়। কোনো পূর্বানুমানকেই উত্তম এবং ব্যবহার উপযোগী বলা যাবে না যদি না তা প্রত্যয়গত দিক হতে সুস্পষ্ট না হয়।
৪. এটিকে সুনির্দিষ্ট হতে হবে : পূর্বানুমানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো এটি অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ গবেষণার উদ্দেশ্য অনুসারে যে পূর্বানুমানটি ধরে নেয়া হয়েছে সেটি যে কোনো এক বা একাধিক বিষয়ের উপরে সুনির্দিষ্টভাবে রচিত হতে হবে। বস্তুত সকল কাজ বা Operation এবং Prediction বা ভবিষ্যদ্বাণী সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণনা করা যায় এমন বিষয়গুলোই কেবল একটি পূর্বানুমানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেমন- রাজনৈতিক কার্যালয়, পেশা, আয়, শিক্ষা ইত্যাদি উত্তম পূর্বানুমানের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কতকগুলো পদ। একটি পূর্বানুমানকে সুনির্দিষ্ট করতে হলে একে দুটি Sub hypothesis এ ভাগ করা যেতে পারে। কারণ এর ফলে দুই বা ততোধিক চলকের মধ্যে সম্পর্ককে আরো স্পষ্ট ও সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়।
৫. পূর্বানুমানকে প্রচলিত কৌশলাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে হয় : একটি উত্তম পূর্বানুমানকে প্রচলিত কৌশলাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকতে হয়। কারণ তত্ত্ব এবং পদ্ধতি পরস্পর বিরোধী নয় বরং সম্পর্কযুক্ত। একজন তাত্ত্বিক জানেন না- পূর্বানুমানের জন্য পর্যাপ্ত কৌশলসমূহ কি? এজন্য তাকে বিভিন্ন পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। বর্তমান সময়ে পূর্বানুমান যাচাই কঠিন হলেও তা (কৌশল) কে এড়িয়ে চলতে পারে না বিধায় তাকে কোনো না কোনো কৌশলের আশ্রয় নিতে হয়।
৬. কাঠামোগত তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে : একটি উত্তম পূর্বানুমানকে অবশ্যই কাঠামোগত তত্ত্বের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ এর তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকতে হবে । বহুক্ষেত্রেই একটি গবেষণা পূর্বানুমান প্রণয়ন করার উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সপক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করা। তবে অনেকক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব না থাকলে পূর্বানুমানটি একটি নতুন তত্ত্বের ভিত্তি হতে পারে। তবে পূর্বানুমানটি অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ
হতে হবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, একটি পূর্বানুমানের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গবেষককে অত্যন্ত সচেতনভাবে অগ্রসর হতে হয়। কেননা পূর্বানুমানের কাজ হলো গবেষণার দিকনির্দেশ করা, গবেষণার সমস্যার সমাধানের ইঙ্গিত দেয়া এবং জ্ঞানের বিকাশ বা উন্নতি সাধন করা। প্রকৃতপক্ষে একটি উত্তম পূর্বানুমান ছাড়া কোনো গবেষণা সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না ।