পূর্বানুমানের উৎসসমূহ লিখ

পূর্বানুমানের উৎসসমূহ লিখ।
অথবা, অনুকল্পের উৎসগুলো উল্লেখ কর।
অথবা, হাইপোথেসিস এর উৎসসমূহ উপস্থাপন কর।
অথবা, অনুকল্পের উৎসগুলো লিখ।


উত্তর৷৷ ভূমিকা : সামাজিক গবেষণায় পূর্বানুমানের উপযোগিতা বা গুরুত্ব সম্পর্কে কোনো মতপার্থক্য না থাকলেও পূর্বানুমানের উৎস বা গঠনপ্রক্রিয়া সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলি নেই। তবে সকল বিজ্ঞানীই স্বীকার করেন যে, পূর্বানুমানের সৃষ্টি হয় সমস্যাটি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও প্রাসঙ্গিক তথ্য থেকে।

L. S. Stelling এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “Every hypothesis springs from the union of knowledge and sagacity.” প্রকৃতপক্ষে জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাই
হলো সকল পূর্বানুমানের জন্মদাতা।


পূর্বানুমানের উৎসসমূহ : নিম্নে পূর্বানুমানের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো : ১. গবেষকের গঠনমূলক চিন্তা পূর্বানুমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি খাদ্য উৎপাদনের চেয়ে বেশি। এ অনুমান নিয়ে প্রথমে ম্যালথাস গবেষণা শুরু করেছিলেন এবং পরবর্তীতে এটিই বিখ্যাত জনসংখ্যাতত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই বলা যায়, সমস্যা সম্পর্কে গবেষকের যদি পর্যাপ্ত সাধারণ জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে ভালো পূর্বানুমান প্রণয়ন সম্ভব নয় ।


২. বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্বানুমানের উৎস হলো তত্ত্ব। যেমন- সামাজিক সংহতি তীব্র চাপ ও উদ্বেগের প্রশমনের জন্য মানসিক সমর্থন দান করে এবং আত্মহত্যা হলো তীব্র চাপ ও মানসিক উদ্বেগের পরিণতি। এ তত্ত্বটি যাচাই করার জন্য নিম্নলিখিত পূর্বানুমান প্রণয়ন করা যায়। যেমন- যেহেতু ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সামাজিক সংহতি
প্রোটেস্ট্যান্টদের তুলনায় কম, সেহেতু প্রোটেস্ট্যান্টদের চেয়ে ক্যাথলিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি হবে।” যদি প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিকদের মধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করে দেখা যায় পূর্বানুমানটি সত্য হয়েছে তাহলে তত্ত্বটির সপক্ষে প্রমাণ পাওয়া যাবে। আর পূর্বানুমানটি সত্য না হলে তত্ত্বটির সত্যতা সম্পর্কে সন্দেহ দেখা দিবে। এ প্রসঙ্গে রবার্ট ডুবিন বলেন যে, “তত্ত্ব হলো পর্যবেক্ষণীয় ঘটনাবলির সম্পর্কের একটি মডেল বা পরিকল্পনা এবং পূর্বানুমান এ মডেলের
একটি নিকটতম প্রতিরূপ।”

৩. অনেক সময় ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা থেকেই পূর্বানুমানের সূচনা হয়। বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে পূর্বানুমান গঠন করতে হলে বিজ্ঞানীর প্রখর অন্তর্দৃষ্টি এবং উদ্ভাবনী শক্তির দরকার। একই ধরনের ঘটনা লক্ষ্য করে সেগুলোকে একজন সাধারণ মানুষ শুধু এলোমেলো ঘটনা ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না। কিন্তু বিজ্ঞানী তার বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রশিক্ষণের জন্য এসব ঘটনার মধ্যেও পারস্পরিক সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারেন। বিজ্ঞানীর মনে যেসব প্রশ্নের
উদয় হয়, সাধারণ মানুষের মনে সেসব প্রশ্নের উদয় হয় না।


৪. কোনো কোনো সময় পূর্ববর্তী গবেষণার ফলাফল পূর্বানুমানের উৎস হতে পারে। অন্য কোনো দেশের বা অন্য কোনো স্থানের গবেষণার ফলাফলের উপরে ভিত্তি করে গবেষক পূর্বানুমান প্রণয়ন করতে পারেন যে, উক্ত গবেষণায় বিভিন্ন চলকের মধ্যে যে সম্পর্ক দেখা গেছে বর্তমান গবেষণায়ও সে ধরনের সম্পর্ক দেখা যাবে। বহু গবেষক ইতোপূর্বে পরিচালিত গবেষণার পুনরুৎপাদন (Replication) করে থাকেন এবং ভিন্ন পরিস্থিতিতে উক্ত গবেষণার ফলাফলের সত্যতা
যাচাই করে দেখেন । উদাহরণস্বরূপ, একজন গবেষক তার ফলাফলে দেখালেন যে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিরা বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারকে সহজে গ্রহণ করে। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে একটি নতুন গবেষণার জন্য পূর্বানুমান প্রণয়ন করা যায় যে, আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন ব্যক্তিরা পরিবার পরিকল্পনার প্রতি বেশি আগ্রহী হবে।


৫. অনেক সময় সাদৃশ্যপূর্ণতা পূর্বানুমানের উৎস হতে পারে। যদিও সাদৃশ্য যুক্তি অনেক সময় ভ্রান্ত হতে পারে; তা সত্ত্বেও জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞানের সাদৃশ্যপূর্ণ ঘটনা থেকে সমাজবিজ্ঞানের পূর্বানুমান তৈরি হতে পারে। যেমন- সাইবারনেটিক বিজ্ঞাহণ করে সমাজবিজ্ঞানীরা যোগাযোগের মডেল বা নকশা প্রণয়ন করেছেন। ঠিক তেমনিভাবে কম্পিউটার বিজ্ঞান থেকে ধারণা করে মনোবিজ্ঞানীরা স্মৃতির তথ্য প্রক্রিয়া বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে পূর্বানুমান প্রণয়ন
করেছেন।

মনোবিজ্ঞানী পিউ (Kurt Lewn) ব্যক্তিত্বের গতিশীলতা ব্যবহার করতে গিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ভেক্টর (Vector) তত্ত্বের ধারণা ব্যবহার করেছেন। এভাবে বিজ্ঞানীরা কোনো ঘটনার কার্যকারণ ব্যাখ্যা করার জন্য অন্যান্য বিজ্ঞান থেকে সদৃশ ধারণাকে তাদের পূর্বানুমান গঠনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, পূর্বানুমানের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। বস্তুত জীবন ও জগতের বিভিন্ন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে গবেষক তাঁর যূগ্ম দৃষ্টিভঙ্গি ও অভিজ্ঞতার আলোকে পূর্বানুমান গঠন করে থাকেন।