অথবা, পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অধীনস্থ একটি ফার্মের স্বল্পকালীণ ভারসাম্য ব্যাখ্যা কর।
অথবা, পূর্ণ প্রতিযোগিতায় ফার্মের স্বল্পকালীন ভারসাম্য বর্ণনা কর।
উত্তর: ভূমিকা: সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করা ফার্মের একমাত্র লক্ষ্য। স্বল্পকালে ফার্মের পক্ষে অনেক সময় ধনাত্মক মুনাফা স্তরে কাজ করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবু ফার্ম দ্রব্যের পরিমাণ এবং দাম এমনভাবে নির্ধারণ করে যাতে মুনাফার পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক ফার্ম সেই পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে, যে পরিমাণ উৎপাদন করলে ফার্মের প্রান্তিক আয় ও প্রান্তিক ব্যয় পরস্পর সমান হয়।
ভারসাম্যের শর্তঃ নিম্নের দু’টি শর্ত পালিত হলে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারের স্বল্পকালীন ভারসাম্য দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হবে।
১. প্রয়োজনীয় শর্ত: ভারসাম্য স্তরে MR MC হবে। অর্থাৎ প্রান্তিক আয় ও ব্যয় পরস্পর সমান।
২. পর্যাপ্ত শর্তঃ ভারসাম্য বিন্দুতে MC রেখা MR রেখাকে নিচের দিক থেকে ছেদ করে। অর্থাৎ, MC রেখার ঢাল > MR রেখার ঢাল।
উপরোক্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে স্বল্পকালে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক ফার্ম তিন ধরণের ভারসাম্য লাভ করতে পারে। যথাঃ
(ক) অস্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অর্জন।
(খ) স্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অর্জন।
(গ) ক্ষতি বা লোকসানসহ ভারসাম্য অর্জন।
(ক) অস্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অর্জন: স্বল্পকালে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ফার্ম অনেক সময় ভারসাম্য অবস্থায় অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে। অস্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অবস্থায়:
MC=MR=AR = P> AC
নিম্নে চিত্রের সাহায্যে অস্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অবস্থা দেখানো হলঃ
উপরের চিত্রে, OX অক্ষে উৎপাদন এবং OY অক্ষে মূল্য ও ব্যয় উভয়ই নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্র অনুযায়ী P বিন্দুতে MC = MR। এবং MC রেখা MR রেখাকে নিচের দিক থেকে ছেদ করছে। সুতরাং, P বিন্দুই হল প্রতিষ্ঠানের ভারসাম্য বিন্দু। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ON পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে এবং দ্রব্যটি NP মূল্যে বিক্রয় করবে। এমতাবস্থায় তার মোট আয় হবে ONPS এবং মোট ব্যয় হবে ONOR। ফলে মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় PQRS এটাই হল প্রতিষ্ঠানের সর্বাধিক মুনাফা। এভাবে স্বল্পকালীন অবস্থায় উৎপাদনকারী ‘অস্বাভাবিক মুনাফা’ অর্জন করে থাকে।
(খ) স্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্য অর্জন: স্বল্পমেয়াদে পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে একটি ফার্ম অনেক সময় ভারসাম্য অবস্থায় স্বাভাবিক মুনাফা অর্জন করে। স্বাভাবিক মুনাফাসহ ভারসাম্যের শর্ত হল- MC = MR = AR = AC. নিচে চিত্রের সাহায্যে স্বাভাবিক মুনাফাসহ স্বল্পকালীন ভারসাম্য অবস্থা দেখানো হল-
উপরের চিত্রে OX অক্ষে উৎপাদন এবং OY অক্ষে মূল্য ও ব্যয় উভয়ই নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্র অনুযায়ী, P বিন্দুতে MC রেখা MR রেখাকে নিচের দিকে থেকে ছেদ করে পরস্পর সমান হয়েছে। এটিই হল ভারসাম্য বিন্দু। ভারসাম্য বিন্দুতে MC = MR = AR = AC হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে, ফার্মের মোট আয় হল ONPR এবং মোট ব্যয় হল ORPN। অর্থাৎ মোট আয় ও মোট ব্যয় পরস্পর সমান হয়েছে। এ অবস্থায় ফার্ম কেবলমাত্র ‘স্বাভাবিক মুনাফা’ অর্জন করবে।
(গ) লোকসানসহ ভারসাম্যঃ পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে স্বল্পকালীন সময়ে একটি ফার্ম সকল অবস্থায় মুনাফা অর্জন করবে এমন কথা নেই। অনেক সময় একটি ফার্ম লোকসান দিয়ে বা ক্ষতি স্বীকার করেও ভারসাম্যে উপনীত হতে পারে। এরূপ ভারসাম্যকে অবশ্য ‘স্বল্পতম লোকসান’ এর ভারসাম্য বলা হয়।
উপরের চিত্রে দেখা যায়, P বিন্দুতে MC রেখাটি MR রেখাকে নিচের দিক হতে ছেদ করে পরস্পর সমান হয়েছে। এটিই হল ভারসাম্য বিন্দু। এই ভারসাম্য বিন্দুতে ফার্মটি ON পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করবে এবং NP দামে বিক্রয় করবে।এমতাবস্থায় ফার্মের মোট আয়ের পরিমাণ হল ONPS এবং মোট ব্যয়ের পরিমাণ হল ONQR। ফলে ফার্মের লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে ONQRONPS = PQRS এক্ষেত্রে ফার্মের লোকসান হলেও তা হবে ফার্মের স্বল্পতম লোকসান। এ পর্যায়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিলে লোকসান আরও বেশি হবে। কারণ স্বল্পকালে উৎপাদন বন্ধু থাকলেও ফার্মকে স্থির খরচ বহন করতেই হবে।
এই অবস্থায় কোন ফার্ম উৎপাদনের মোট ব্যয় উঠাতে না পারলেও যতক্ষণ পর্যন্ত ফার্মটি পরিবর্তনীয় ব্যয়ের সম্পূর্ণাংশ এবং স্থির ব্যয়ের কিছু অংশ ওঠাতে পারে ততক্ষণ তা ভবিষ্যৎ সুদিনের আশায় উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাবে। এতে ফার্মের লোকসানের পরিমাণ কম হবে। এটিই হল স্বল্পকালীন সময়ে ফার্মের ‘ন্যুনতম লোকসানে’ ভারসাম্য।
উপসংহার: পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে স্বল্পকালীন ভারসাম্য অবস্থায় কোন ফার্ম ‘অস্বাভাবিক মুনাফা’ বা ‘স্বাভাবিক মুনাফা’ অর্জন করতে পারে। আবার অনেক সময় লোকসানও ভোগ করতে পারে।