উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু সুসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী বিরচিত ‘যৌবনে দাও রাজটিকা’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন
প্রসঙ্গ : এখানে প্রাবন্ধিক বার্ধক্যের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে এ মূল্যবান মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : যৌবনের প্রধান উপকরণ প্রাণশক্তি। এই প্রাণশক্তি যার মধ্যে আছে সে যৌবনের অধিকারী। মানুষের প্রাণ যখন অধোগতি প্রাপ্ত হয় তখন তা জড়তা প্রাপ্ত হয়। এই জড়তাই বার্ধক্য। মনকে প্রাণের পরিণতি এবং জড়কে প্রাণের বিকৃতি বললেও অত্যুক্তি হয় না। প্রাণের স্বাভাবিক গতি হচ্ছে মনোজগতের দিকে। এ প্রাণের স্বাধীন গতিকে বাধা দিলেই তা জড়তা প্রাপ্ত হয়। প্রাণ নিজের অভিব্যক্তির উপায় নিজে খুঁজে বের করে। বাইরের নিয়ম তার উপর চাপালেই তা জড় জগতের অধীন হয়ে পড়ে। বার্ধক্যের পরিণতি হচ্ছে জড়তা। পুরাতনকে আঁকড়ে থাকাই বার্ধক্য। তাইতো কবি নজরুল বলেছেন, “বার্ধক্য তাহাই যাহা পুরাতনকে,মিথ্যাকে, মৃত্যুকে আঁকড়িয়া পড়িয়া থাকে। বৃদ্ধ তাহারাই, যাহারা মায়াচ্ছন্ন নব মানবের অভিনব জয়যাত্রার শুধু বোঝা নয়, বিঘ্ন; যাহারা নব অরুণোদয় দেখিয়া নিদ্রাভঙ্গের ভয়ে দ্বার রুদ্ধ করিয়া পড়িয়া থাকে।” সুতরাং দেখা যাচ্ছে পুরাতনকে আঁকড়ে থাকাই বার্ধক্যের ধর্ম।
মন্তব্য : বার্ধক্য মানুষের জীবনী শক্তিকে ম্লান-মলিন করে দেয়। নতুনকে সে ভয় পায় বলে পুরাতনকে আঁকড়ে ধরে টিকে থাকতে চায়। বার্ধক্যের আর এক নাম জড়তা।